আবু মুসা, বড়াইগ্রাম, নাটোর :
নাটোর শহর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে হাতছানি দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করছে চিনিডাঙ্গার পদ্মবিল। যেখানে নৌকায় চড়ে উপভোগ করতে পারবেন পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য এবং পাখিদের বিচরণ।ফুলের রানী পদ্ম। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতায় বলেছিলেন ১০৮টি নীল পদ্মের কথা। নীল নয়, তবে গোলাপি পদ্মে ঢাকা বিলের দেখা কিন্তু পাবেন। প্রিয়াকে দেওয়া কথামতো ১০৮টি কেন, পারবেন অগুনিত পদ্ম তুলে দিতে তার হাতে।বিলের সবুজ প্রান্তর আর পদ্ম ফুলের সৌরভ বিমোহিত করবে মনকে। এখানে এলে বাতাসে ছুঁয়ে যাবে ফুলের ঘ্রাণ। নয়নাভিরাম এমন দৃশ্য, গ্রামীণ জীবনে ডেকে আনে একটু প্রশান্তি, কারো কারো জীবনে পদ্ম নিয়ে জড়িয়ে আছে কতই না স্মৃতি।অপূর্ব সুন্দর এই বিল দেখতে আসতে হবে, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চিনিডাঙ্গায়। দূর
থেকে মনে হবে যেন ফুলের বিছানা পাতা। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া জলজ ফুলের রানি এই পদ্ম ফুল, সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বিলের চিত্র। দূর থেকে মনে হবে যেন ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে কেউ। প্রতিদিনই এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছে দর্শনার্থীরা।বড়াইগ্রাম উপজেলার চিনিডাঙ্গার এই পদ্মবিল ভ্রমণে মন-প্রাণ জুড়িয়ে যাবে। এখানে জলজ ফুলের রানি পদ্ম প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে উঠে মেলে ধরেছে আপন সৌন্দর্য। এত দিন অনেকটাই লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল বিলটি। বিলের চারদিকে শুধু পদ্ম আর পদ্ম। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এ পদ্ম দেখলে মন-প্রাণ জুড়িয়ে যাবে। এমন অপরূপ দৃশ্য ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দেয়। বিলে ডিঙি নৌকায় ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ আবার মনে পড়তে পারে কবি সুনীল
গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতাটি“মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলি বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাব সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করে!নাদের আলি, আমি আর কত বড় হব?আমার মাথা এই ঘরের ছাদ ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায় তিন প্রহরের বিল দেখাবে”?কবিতাটি পড়ে যাঁদের তিন প্রহরের বিল আর পদ্ম ফুল দেখার সাধ জন্মেছিল, তাঁরা কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পেতে পারেন বিল আর পদ্ম ফুল দেখার হাহাকার থেকে।চিনিডাঙ্গার এই পদ্মবিলে সকালের দিকে ফোটা পদ্ম বেশি দেখা যায়। পড়ন্ত বিকেলে ফুলের সঙ্গে অস্তগামী সূর্য আপনার মনের কাব্যিকতা বাড়িয়ে দেবে কয়েক গুণ। বিলের পাশে জেলেপল্লীর মানুষ প্রবল উৎসাহে ডিঙি নৌকা দিয়ে ঘোরাবে। এখানকার মানুষ প্রবল অতিথিপরায়ণ। সারা বেলা ঘুরে নৌকার ভাড়া দিতে গেলে মুখ ফুটে কোনো দাবি করবে না। ১০০ থেকে ২০০ টাকা দিলেই মহাখুশি। এখানকার মানুষ সবাই মৎস্যজীবী। ফুলের দিকে বাড়তি নজর নেই কারো। ফলে পদ্ম ফুটে থাকে স্বগৌরবে। নাটোরের বিলে ফুটে থাকা
এই পদ্ম তৃষ্ণা মেটাচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। বিস্তীর্ণ জলাভূমি, চারদিকে লতাগুল্ম, কোথাও কচুরিপানা,এরই মাঝে ভেসে রয়েছে অগণিত পদ্ম, স্নিগ্ধতার রং আর আকাশে মেঘের ভেলা—দুইয়ে মিলে যেন একাকার প্রকৃতি। বর্ষা ও শরতে এখন পদ্মের সমাহার। কোথাও ফুটেছে, কোথাও আবার ঝরে যাচ্ছে। পদ্ম ফুলের পাতায় জমে থাকা পানিটিও রঙিন করে মানুষের মনকে।বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গোলাপি রঙের পদ্ম দেখলে আপনার মন ও জুড়িয়ে যাবে। চোখ যতদূর যায় শুধু পদ্ম আর পদ্ম। এ বিলের সৌন্দর্য ও পদ্ম দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই আসছে শত শত মানুষ। শরতের ফুল হলেও নাটোরে হেমন্তে তার সৌন্দর্য ও শুভ্রতার প্রতীক নিয়ে হাজির হয়েছে পদ্ম। প্রকৃতিতে নিজের রূপবৈচিত্র্য অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে বিলে ফুটে থাকা এ জলজ ফুলের রানি। পদ্ম ফুলের উপস্থিতিতে যেন প্রাণ ফিরেছে গ্রামের শিশুদের উচ্ছল মাখা শৈশবে।জলের ওপর বিছানো সবুজ পাতা ভেদ করে হেসে ওঠে লাল-সাদা হাজারো পদ্ম। বিলে ফুটে থাকা পদ্ম ফুল যেকোনো মানুষের মনে জাগিয়ে তোলে অন্য রকম এক অনুভূতি। ভাসমান একেকটি পদ্মের রূপশোভা অভিভূত করে যেকোনো বয়সকে। ছবির মতো সাজানো, হৃদয়কাড়া দৃশ্য আটকে রাখতে পারে না দুরন্ত শৈশবকে।কার্তিক মাসের শেষ পর্যন্ত এখানে ফুল ফুটে থাকে। তবে বিলের আসল সৌন্দর্য দেখতে চাইলে আশ্বিনের মাঝামাঝি থেকে কার্তিকের মাঝামাঝি সময় বেশি
ফুল ফুটে,অর্থাৎ এখনই সবচেয়ে ভালো সময়। হাজার নয় লাখো পদ্মপাতা বিলের মাঝে সারিবদ্ধভাবে সবুজ গালিচা তৈরি করে রেখেছে আপনার মন রাঙাতে। পদ্মপাতায় জলের বিন্দু, পদ্মপাতায় ভর করে ডাহুকে হাঁটা-চলা, পদ্মপাতার ওপর দাঁড়িয়ে বকের শিকার ধরার প্রচেষ্টা আপনার ভ্রমণের ক্লান্তি দূর করবে।তবে পদ্মময় নাটোরের এই বিল যে শুধুই আপনার বিনোদনের জন্য, তার নয়। এই বিলের ওপর নির্ভরশীল বিশাল এক জীববৈচিত্র্য। তাই পদ্ম বিলে এবং তার আশপাশে এমন কিছু করবেন না, যাতে জীববৈচিত্র্যের সমস্যা হয়। প্লাস্টিকের কিছু ব্যবহার করলে তা গ্রামে বা বিলে না ফেলে রেখে, সঙ্গে করে আবার নিয়ে আসুন। পদ্ম বিলে ইঁদুর মারা, বক-ডাহুককে ধরার জন্য ঢিল দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
আর/এস