বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষে ওসিসহ ২৫ জন আহত হয়েছে।
এ সময় শিক্ষার্থীরা এলাকাবসীর কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ও আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের হামলার প্রতিবদে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়ক অবরোধ করে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওই সড়কের পাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে গোপালগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে গোবরা গ্রামবাসী লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধে এগিয়ে আসেন। তাদের ধাওয়া খেয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাস্পাসে অবস্থান নেয়। পরে গ্রামবাসীর সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে পুলিশসহ ২৫ জন আহত হয়। পরে গোপালগঞ্জ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে টিআরসেল নিক্ষেপ ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি দুপুর ২ টার দিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনে।
শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও পুলিশ জানানয়, বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গোবরা গ্রামের ১৫/১৬ জন যুবক গোবরা গ্রামে ফুটবল খেলা শেষে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস লেকে গোসল করতে প্রবেশ করে। তারা প্রায় অর্ধ উলঙ্গ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে গোসল শুরু করে। লেক পাড়ে বেশ কয়েকজন মেয়ে শিক্ষার্থীও ছিল। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ ছাত্র এ ঘটনার প্রতিবাদ করে। পরে বহিরাগতরা ওই ২ ছাত্রকে মারপিট করে।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা ৭ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। শিক্ষার্থীরা বিশ্বদ্যিালয়ের সামনের বেলায়েত হোসেন মার্কেটের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা সোবহান সড়কের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করে। ৭ টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত গ্রামবাসী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় থেমে থেমে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। গ্রামবাসী এক পর্যায়ে বিশ্বদ্যিালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে ভাংচুর ও শিক্ষার্থীদের মারপিট করে। এতে শিক্ষার্থীসহ ৫০ জন আহত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের টহল সেডে আগুন দেয়া হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী মোটর সাইকেল আগুন দেয়াসহ বেশ কিছু যানবাহন ভাংচুর করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার দোকানপাট ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হামলা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে বলেও স্থানীয়রা জানায় ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র নিউটন মজুমদার অভিযোগ করে বলেন, গ্রামের বহিরাগত উশৃংখল ছেলেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে গোসল করতে এসে মেয়েদের দেখে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গী করে। তারা ছাত্রীদের ইভটিজিং করে। প্রতিবাদ করায় ২ শিক্ষার্থীকে মারপিট করে। এছাড়া প্রায়ই গোবরা গ্রামের একদল বখাটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকে মেয়েদের ইভটিজিং করে। এছাড়া মেয়েদের হোস্টেলের সামনে গিয়ে মোটর সাইকেলের হর্ন বাজায়। আগেও এ ধরণের ঘটনার প্রতিবাদ করায় বখাটেরা একাধিকবার শিক্ষার্থীদের মারপিট করেছে। কিন্তু আমরা তার কোন প্রতিকার পাইনি।
গোবরা গ্রামের শরাফত হোসেনসহ অন্যান্যরা বলেন, সামান্য ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের ব্যাপক ক্ষতি করা হয়েছে। তারা দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করেন।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ছোট একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের কথা স্বীকার করে বলেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত। ঘটনাস্থলে পুলিশ, র্যাব মোতায়েন রয়েছে।