খবর২৪ঘণ্টা.কম: নানা নাটকীয়তার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি তথা মহাজেট থেকে নির্বাচিতরা শপথ নিলেও শেষ অবধি দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ নেননি।
নির্বাচিতরা শপথ নেওয়ার পরই দলের মহাসচিব জানিয়ে দেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তে নির্বাচিতরা শপথ নিয়েছেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি শপথ নেননি।’
তার শপথ না নেওয়াকে একটি রাজনৈতিক ‘কৌশল’ হিসেবে অভিহিত করেন দলটির মহাসচিব নিজেই। স্বভাবতই নিয়মানুযায়ী নির্বাচন কমিশন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বগুড়া-৬ (সদর) আসন শূন্য ঘোষণা করে।
পাশাপাশি উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার পরপরই উপ-নির্বাচনে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে মাঠে নেমেছেন। এই আসেন সদ্য সাবেক জাতীয় পার্টির (জাপা) এমপি নূরুল ইসলাম ওমর উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে দল থেকে আবারো লড়তে চান।
এছাড়া সদ্য জাপায় যোগদানকারী বহুল আলোচিত আশরাফুল ইসলাম ওরফে হিরো আলমও লড়তে চান উপ-নির্বাচনে।
কিন্তু বিএনপির ঘাঁটিখ্যাত শূন্য হওয়া এই আসনে উপ-নির্বাচন নিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা একেবারেই যেন নিশ্চুপ। আসন্ন উপ-নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়া প্রসঙ্গে কোনো নেতাই মুখ খুলছেন না। দলীয় হাইকমাণ্ডের সিদ্ধান্ত মেনেই উপ-নির্বাচন পাড়ি দেওয়া হবে –শুধু এতটুকু-ই বলছেন তারা।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের দু’জন সিনিয়র নেতার ধারণা, ‘‘মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার শপথ না নেওয়া প্রসঙ্গে ‘কৌশল’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন। এর পেছনে হয়তো কোনো রহস্য থাকতে পারে।’’
তারা বলছেন, ‘‘সরকার আন্তরিক হলে আইনি প্রক্রিয়ায় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পাবেন। পরে খালেদা জিয়া এই আসনে উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। কারণ বিগত দিনে তিনি এই আসন থেকে একাধিকবার বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছে। কারণ রাজনীতিতে শেষ বলে কিছুই নেই। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে সরকারের মনোভাবের ওপর। হয়তো সেই ‘কৌশলে’ আটকা বগুড়া-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপি।’’
তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৩ মে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন, ২৭ মে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই, ৩ জুন প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও ২৪ জুন ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারে নেমে পড়েছেন। এরমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাও বসে নেই।
আর চুপচাপ থাকলেও ভেতরে ভেতরে নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। দলের হাইকমাণ্ডের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বিএনপির নির্বাচনী কর্মকাণ্ড। সবমিলে এই রমজানেও ভোটের আলাপচারিতায় মত্ত বগুড়া। ইফতারের পরবর্তী চায়ের কাপে বইছে ভোটের ঝড়।
বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু ও টি জামান নিকেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের ছোটছেলে বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এর মধ্যে রাগেবুল আহসান রিপু সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষমেষ আসনটি জাপাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জাপা প্রার্থী নূরুল ইসলাম ওমর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে হেরে যান।
গত ভোটে মির্জা ফখরুলের কাছে হারলেও উপ-নির্বাচনে লড়াইতে আগ্রহী জাপার সাবেক এমপি নূরুল ইসলাম ওমর। মাঠে নামার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তিনি। এছাড়া সদ্য জাপায় যোগ দেওয়া হিরো আলম উপ-নির্বাচনে ভোট করার ঘোষণা দিয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়বেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে নামতে আগ্রহী বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ মিঠুও।
এদিকে বগুড়ার সাতটি আসনই দীর্ঘদিন বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বগুড়া-৬ (সদর) আসন থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় মহাজোটের প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম ওমর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ভিপি সাইফুল ইসলাম বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দল যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে নেতাকর্মীরা তা বাস্তবায়ন করবে। এর বাইরে উপ-নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই।