খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: বাংলাদেশে পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় মামলা নেয়ার নজির বিরল। আর আদালতে মামলা হলেও তার তদন্ত করে ওই পুলিশই। ফলে অপরাধের কারণে পুলিশের প্রচলিত আইনে শাস্তি পাওয়ার নজির কম। এই পরিস্থিতি কেন?
ঢাকায় একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার জমি দখলে সন্ত্রাসীদের সহায়তার অভিযোগে ওয়ারীর ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহীম খানকে বরখাস্ত করা হয়েছে ২৬ আগস্ট। বিতর্কিত ডিআইজি মিজানুর রহমান কারাগারে। কারাগারে আছেন সোনাগাজীর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। শুনে মনে হতে পারে বাহ! পুলিশ কোনো অপরাধ করলেতো ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সহজে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অনেক সমালোচনা আর চাপের কারণে তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ব্যবস্থা নেয় হয়েছে। শাস্তি হবে কিনা সেটা এখনো বলার সময় আসেনি।
খুলনার জিআরপি থানায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় থানা মামলা নেয়নি। আদালতে মামলা করার পর ওসি এবং এসআইসহ ৫ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে মাত্র। চট্টগ্রামে মাহমুদা খাতুন মিতুকে হত্যার ঘটনায় তার স্বামী এসপি বাবুল আক্তারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। যদি তিনি স্ত্রী হত্যায় জড়িতই থাকেন তাহলে পদত্যাগের সুযোগ কেন?
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ও বহু ঘটনায় বিতর্কিত এসপি মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে এবারও ঢাকা রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপারের পুরস্কার দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে ষষ্ঠবার তিনি এই পুরস্কার পেলেন৷
১৯৯৮ সালে ডিবি হেফাজতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবেল হত্যায় ডিবির তখনকার সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আকরাম হোসেনকেও আইনের আওতায় আনতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। বিচারিক আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও পরে তিনি উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান।
পুলিশের সাবেক এআইজি সৈয়দ বজলুল করিম বলেন, ‘এখন পুলিশে কেউ কেউ মনে করেন তার গডফাদার আছে। কারুর পলিটিক্যাল ব্যাকিং আছে। ফলে সবার ক্ষেত্রে একই ট্রিটমেন্ট হয়না। উর্ধতন কর্মকর্তাদের একটি অংশ সন্ধ্যার পরতো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে বসে থাকেন৷ তারাতো নিজেদের পলিটিক্যাল ভাবেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে ব্যবস্থা নেয়া সহজ নয়।’
তাঁর মতে, ‘পুলিশের লিডারশিপে সমস্যা হচ্ছে। চেইন অব কমান্ডে সমস্যা আছে। তাই পুলিশ বেপরোয়াভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।’ প্রতিবছর গড়ে প্রায় এক লাখ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ে পুলিশ সদর দপ্তরে। ২০১৮ সালে অভিযোগের ভিত্তিতে ১২ হাজার ৭৩৩ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে এই শাস্তি যারা পেয়েছেন তারা কনেস্টবল থেকে সর্বোচ্চ ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেয়া হয়েছে লঘুদণ্ড – বদলি, প্রত্যাহার ইত্যাদি। চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অবসরে পাঠানোর শাস্তি খুব কম সদস্যকেই দেয়া হয়েছে৷
২০১৭ সালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় ওই বছর ১৪ হাজার ৩৯৫ জনকে লঘুদন্ড দেয়া হয়েছে। চাকরিচ্যুত হয়েছেন মাত্র ২৫জন। যারা শাস্তি পেয়েছেন তাদের অপরাধের মধ্যে আছে হত্যা, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণ চেষ্টা, জমি দখল, ছিনতাই, ঘুস ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার মত অপরাধ। তবে আদালত বা থানায় পুলিশের বিরুদ্ধে মামলার তথ্য জানাতে পারেনি পুলিশ সদর দপ্তর।
মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, ‘এই যেটুকু শাস্তি দেয়া হয় তাতেও পক্ষপাতিত্ব আছে। পুলিশ কর্মকর্তা মোল্লা নজরুলের ঘুস নেয়ার ঘটনা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ার পরও তার শাস্তি হয়নি। এসপি হারুনকে নিয়ে বিতর্ক থাকার পরও তিনি বার বার পুরস্কৃত হন।’
তার মতে, ‘রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের জন্যই পুলিশে অপরাধ বাড়ছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা যায়না। আদালতে মামলা হলেও সাক্ষী পাওয়া যায়না। কারণ পুলিশের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিলে প্রতিহিংসার শিকার হতে হয়।’
পুলিশের সাবেক আইজি মোহাম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘পুলিশ ফোর্সের শতকরা ৮০ ভাগই কনেস্টবল থেকে ইন্সপেক্টর পদ মর্যাদার। তাই শাস্তিও তারই বেশি পান। ইন্সপেক্টরের উপরের কর্মর্তাদের শান্তি দিতে পারে মন্ত্রণালয়। পুলিশ সদর দপ্তর নয়। তারা শাস্তি পেলে তার তালিকাও পুলিশ সদর দপ্তরের তা প্রকাশ করা উচিত।’
তার মতে, ‘একই ধরনের অপরাধে তদন্ত ও শাস্তি দুই রকম হওয়া উচিত না। তবে তদন্ত ও শাস্তির দায়িত্ব একই ব্যক্তি বা কমিটির ওপর থাকেনা। ফলে কখনো তদন্ত ঠিক হলেও শাস্তির ক্ষেত্রে সন্দেহ থাকতে পারে।’ তবে এসব নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে চাননি।’ সূত্র: ডয়চে ভেলে
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন