খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: বরিশালে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় এসে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতা শাহে আলম মুরাদ একটি যাত্রীবাহী লঞ্চের কেবিনে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মর্যাদার এক কর্মকর্তাসহ তিন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই সময় পুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মাহফুজুর রহমানকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।
১৪ জুলাই, শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল লঞ্চ টার্মিনালের এই ঘটনায় বরিশাল পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড় চলছে। ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের এসআই নিজাম মাহমুদ ফকির বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় একজনের নাম উল্লেখ করে ২০ থেকে ২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ সুন্দরবন-১১ লঞ্চের ভিআইপি কেবিনের সামনে অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী নিয়ে অবস্থান করছিলেন। প্রায় একই সময় ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান লঞ্চঘাটে যান।
সরকারি ওই কর্মকর্তাকে প্রটোকল দিতে সেখানে গিয়েছিলেন ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম ও পুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মাহফুজুর রহমান। কিন্তু ঘটনাচক্রে সচিবকে পেছনে ফেলে পুলিশের এই দুই কর্মকর্তা চলে যান লঞ্চের ভিআইপি কেবিনের লাউঞ্জে। সেখানে গিয়ে দেখতে পান অর্ধশতাধিক লোকের মধ্যে বসেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলম মুরাদ। ওই নেতার সঙ্গে থাকা বেশ কয়েক ব্যক্তি পিস্তল হাতে নিয়ে নানা অঙ্গভঙ্গি করছিলেন। সেই দৃশ্য দেখে কমিশনারের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহিদুল ইসলাম ছুটে গিয়ে অস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়টি জানতে চান ও পিস্তলের বৈধতা যাচাইয়ের জন্য কাগজপত্র দেখতে চান। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা শাহে আলম মুরাদ ও তার সঙ্গে থাকা লোকজন পুলিশের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়ান।
বাক-বিতণ্ডার একপর্যায়ে শাহে আলম মুরাদের সঙ্গে থাকা সৈকত ইমরানসহ ২০ থেকে ২৫ জন একত্রিত হয়ে সহকারী জাহিদুল ইসলাম ও দেহরক্ষী হাসিবকে এলোপাথাড়ি পিটুনি দেয়। একপর্যায়ে শাহে আলম কমিশনারের মাথায় পিস্তল ধরেন। এমনকি কমিশনারকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন তার সঙ্গে থাকা ইমরান সৈকতসহ বেশ কয়েকজন। এই চিত্র ক্যামেরায় ধারণ করতে গেলে কমিশনারের সঙ্গী ওবায়েদকেও মারধর করা হয়। কিন্তু বরিশাল পুলিশ চাইছিল না সরকারের দুইজন সচিবের উপস্থিতিতে এ ধরনের বিষয় প্রকাশ্যে আসুক। যে কারণে ঘটনার পর জড়িতদের গ্রেফতারের প্রস্তুতি নিতে লঞ্চটি থামিয়ে রাখা হলেও পরবর্তীতে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা লঞ্চের যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই এই লঞ্চে ঢাকায় যাত্রা নিরাপদ নয় মনে করে টার্মিনালেই নেমে যান। এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় পুলিশ প্রশাসনে। ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় সরকারি কাজে বাধা, হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশ সদস্যদের মারপিট ও গুরুতর আহত করার দায়ে এসআই নিজাম মাহমুদ ফকির বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে শাহে আলম মুরাদ জানান, তিনি ঘটনায় জড়িত নন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাদা পোশাকের পুলিশের বাক-বিতণ্ডা হয়েছিল, যা পরে মিটমাট হয়ে গেছে।
সূত্র : মানবজমিন