রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সঠিক সেবা পাচ্ছেনা রোগিরা। জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের পরিবর্তে কাজ করছেন কর্মচারিরা। যার কারণে দূর্ঘটনার রোগিসহ নানা রোগে আক্রান্তরা জরুরি বিভাগ থেকে প্রাথমিক সেবাও পাচ্ছেনা।
স্থানীয়দের অভিযোগ বর্তমান স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এখানে যোগদানের পর থেকে সেবার মান ভেঙ্গে পড়েছে। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিকিৎসক ও কর্মচারি সংকটের কারণে সেবার মান কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
জানা গেছে, চিকিৎসক, ল্যাব টেকনিশিয়ান, নার্স, স্বাস্থ্য সহায়কসহ মোট ৫৫টি পদ শূন্য রয়েছে এখানে। ২১ জন চিকিৎসকের স্থলে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৫ জন। এদের মধ্যে একজন মেডিকেল অফিসার জরুরি বিভাগে সেবা দিচ্ছেন। বাকি চারজন (গাইনি, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, শিশু ও একজন জুনিয়র কনসালেন্ট) বর্হিবিভাগে সেবা দিচ্ছেন। সেই সাথে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ৯ জন (অস্থায়ী) জুনিয়র চিকিসৎক এসে বর্হিবিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেন।
যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় এখানে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৬ শত থেকে ৭ শত রোগি সেবা নিতে আসে। পুঠিয়াসহ নিকটবর্তী বাগাতিপাড়া, নাটোর, বাঘা, চারঘাট, দুর্গাপুর উপজেলা থেকে রোগিরা এখানে আসে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, আল আমিন নামের একজন চিকিৎসক জরুরি বিভাগ ও সকল ভর্তি রোগিদের সেবা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, রামেক হাসপাতালের পর সবচেয়ে ব্যস্ততম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এটি। তার উপর ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের সাথে হওয়ায় এখানে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আসছে রোগিরা । তবে রোগির তুলনায় এখানে চিকিৎসক সংকট অনেক বেশি। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক বাড়লে সেবার মান আরো বাড়বে।
অপরদিকে বর্হিবিভাগে সেবা নিতে লাইনে দাড়িয়ে থাকে শতশত নারী-পুরুষ ও শিশু রোগিরা। আর মাত্র ৫ জন চিকিৎসক আগত রোগিদের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন।সেবা নিতে আসা শহীদ হোসেন নামের একজন রোগি বলেন, বিগত দিনে জরুরি বিভাগে একজন এমবিবিএস ও একজন সহকারি চিকিৎসক প্রাথমিক সকল চিকিৎসা সেবা দিতেন।আর এখন জরুরি বিভাগে কর্মচারিরা বসে থাকে। চিকিৎসক থাকেন আলাদা একটি চেম্বারে। বর্হিবিভাগেও রোগির তুলনায় ডাক্তার কম। যার কারণে সেবা নিতে আসা রোগিদের ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হয়।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে জরুরি বিভাগে কর্মরত অস্থায়ী কর্মচারিরা বলেন, বিগত সময় জরুরী বিভাগে একজন এমবিবিএস ও একজন উপ-সহকারী চিকিৎসক রোগিদের সেবা দিতেন। কিন্তু এখানে নতুন কর্মকর্তা যোগদানের পর জরুরি বিভাগ থেকে উপ-সহকারী চিকিৎসককে থেকে বদলি করে বহির্বিভাগে দিয়েছেন। অপরদিকে নিয়মানুসারে আবাসিক চিকিৎসক সার্বক্ষনিক এখানে থাকার নিয়ম থাকলেও তিনি রাজশাহী শহরে বসবাস করেন। তিনি আসেন সকাল ১০টার দিকে। আর ফিরে যার দুপুর ১২ টা থেকে ১ টার মধ্যে। আর বহির্বিভাগে কয়েকজন চিকিৎসক থাকলেও জরুরি বিভাগ এবং ভর্তি রোগিদের সেবা করছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। তাই একটু জটিল রোগি আসলে তাদের রামেক হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এরিয়ায় তার বসবাস উপযোগি বাসা নেই। যার কারণে তাকে শহরে থাকতে হয়। আবাসিক মেডিকেল অফিসার সার্বক্ষনিক এখানে না থাকার কারণে সেবার মান কমছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে টিএইচও এর সাথে কথা বলেন।
এবিষয়ে জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাজরুই রহমান প্রত্যয় বলেন,এখানে রোগিদের তুলনায় চিকিৎসক সংকট আছে। তবে আগত রোগিদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। তিনি এখানে যোগদানের পর সেবার মান কমেছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা সঠিক নয়,তিনি যোগদানের পর জেলার মধ্যে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সেরা পদক পেয়েছে। তিনি বাইরে থেকে প্রযুক্তির মাধ্যমে সার্বক্ষনিক স্বাস্থ্য সেবা মনিটরিং করেন।
রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, পুঠিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে কিছু চিকিৎসক ও কর্মচারি সংকট রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে সংকট কেটে যাবে।
বিএ/