পাবনা ব্যুরো: পাবনার চাটমোহর ও ঈশ্বরদী উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড় আর শিলাবৃষ্টির ছোবলে লন্ডভন্ড হয়েছে ঘরবাড়ি, গাছ, ফসল। শিলার আঘাতে এক গৃহবধু নিহত ও নারী-শিশুসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কৃষকের উঠতি ফসলের। ঝড়ের পর থেকে বন্ধ রয়েছে চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন স্থানের বিদ্যুৎ সরবরাবহ।
শুক্রবার বিকেলে প্রচন্ড কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি বয়ে যায় চাটমোহর পৌর সদর, উপজেলার মথুরাপুর, হরিপুর, বিলচলন, পার্শ্বডাঙ্গা, হান্ডিয়াল, নিমাইচড়া সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের উপর দিয়ে। ৩০ মিনিটব্যাপী ঝড়ো হাওয়ার তান্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়ে মানুষ। ঝড়ো হাওয়ার সাথে হয় প্রচন্ড শিলাবৃষ্টি। ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে কয়েক শতাধিক ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভেঙে পড়ে।
অপরদিকে, শুক্রবার সন্ধ্যায় শিলাবৃষ্টি আঘাত হানে ঈশ্বরদী উপজেলায়। শিলাবৃষ্টির সময় লিচু গাছের নিচে ডাল, পাতা কুড়ানোর সময় মাথায় শিলার আঘাত লেগে জমেলা খাতুন (৫০) নামের এক গৃহবধু নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার লক্ষীকুন্ডা গ্রামের দেলবার প্রামানিকের স্ত্রী। লিচু প্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিতি এই উপজেলায় লিচুর গুটির ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা চাষীদের। প্রতি বছর লাভের মুখ দেখলেও এবার লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের।
চাটমোহর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আবু বকর সিদ্দিক জানান, বড় বড় শিলার আঘাতে বেশিরভাগ টিনের ঘরের চাল ঝাজরা (অনেক ছিদ্র) হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যানবাহন। মাটি হয়ে যায় অনেক বাড়ির আনন্দ উৎসবও। ঝড়ের পর বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। একই গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি জনাব আলী ও রিয়াজ উদ্দিন মোল্লা জানান, তাদের জীবনে এত বড় বড় শিলা এর আগে কখনও দেখেননি। এক একটা শিলার ওজন হবে ৩০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম। প্রাকৃতিক এই দূর্যোগে মানুষের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, চাটমোহরে শিলার আঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে নারী-শিশু সহ শতাধিক মানুষ। আহতরা চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
অপরদিকে ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কৃষকের ফল ও ফসলের। যে ফসলে কৃষকের মুখে হাসি ফোটার কথা সেই পেঁয়াজ, রসুন, গম এখন কৃষকের কান্না। জমি থেকে তোলা রসুন বাড়িতে নিতে পারেননি অনেকে। শিলাবৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে সব।
মথুরাপুর গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী, কাতুলী গ্রামের সাইদুল ইসলাম জানান, রসুন তুলে জমিতে রেখেছিলাম বাড়িতে নেয়ার জন্য। কিন্তু সেই সময়টুকু পেলাম না। আমাদের দুই বিঘা জমির রসুন শেষ হয়ে গেছে। চাঁদ আলী নামের আরেক কৃষক জানান, গম-ভুট্টারও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে মাটিতে পড়ে গেছে পাকন্ত গম ক্ষেত। ক্ষতবিক্ষত হয়েছে ভুট্টার গাছ। অপরদিকে গাছে গুটি আসা আম-লিচুরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষীরা। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভূতি ভূষণ সরকার জানান, শিলাবৃষ্টিতে কৃষকের উঠতি ফসল অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনের কাজ চলছে।
এদিকে, পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন শনিবার দুপুরে চাটমোহর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শণ ও হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। একইসাথে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করেন।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ