পাবনা ব্যুরো: ভাষাসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এম.পি বলেছেন, পাবনা সদরের মাধপুর বটতলায় শহীদের পবিত্র রক্তে ভেজা মাটি জেলার অহংকার। রাজু, রাজ্জাকের পবিত্র রক্ত এ মাটিতে মিশে আছে। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করতে এসে মাধপুরের বটতলায় পাকিস্তানি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গোলায় ১৭ জন সহযোদ্ধাকে হারাই। সেইসাথে মাধপুর বটতলায় আরও ৫০ জন সাধারণ নিরীহ বাঙালি প্রাণ হারায়।
বৃহস্পতিবার পাবনা ও ঈশ^রদীর মধ্যবর্তী স্থান পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের মাধপুর নামক স্থানে বটতলায় পাকিস্তানের সেনাদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী শরীফ এসব কথা বলেন।
ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্সের ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দেয়া সেই ঐতিহাসিক ভাষণ সরাসরি শুনে পাবনা ফিরে সহযোদ্ধাদের নিয়ে দেশীয় ৪২টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তুলি। মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু পাকশি রেলওয়ে মাঠে বসে পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করার বিষয়ে আলোচনার সময় জানতে পান ২৮শে মার্চ ১৯৭১ সালে পাবনা পুলিশ লাইনে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে পরাজিত হতাহত পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে তাদের ১৩টি ট্রাকের বহর পাবনা থেকে রাজশাহীর দিকে ফিরছে। এই সংবাদ পেয়ে প্রতিরোধকারী ডিলু বাহিনীর দলটি তাৎক্ষণিক পাকিস্তানি সেনাবহরটিকে প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত ৪২টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও সাধারণ নির্মিত হাতবোমাসহ পাবনার দাপুনিয়া ইউনিয়নের মাধপুর নামক স্থানের বটতলায় প্রতিরোধের জন্য বাঙ্কার করে অবস্থান নেয়। তৎকালীন ঈশ^রদী কলেজের ছাত্রনেতা হাবিবুর রহমান রাজু, আবদুর রাজ্জাক, ওহিদুর রহমান, আবদুল গফুর, আলী আহম্মেদ, নবাব আলীসহ ১৭ জন সহযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গোলায় নিহত হয়। পাকিস্তানি সেনাবহরের আনুমানিক তিন চারজন সৈন্যকে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি, বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। পরবর্তীতে রাজশাহী ফেরার পূর্বেই নানা স্থানের মুক্তিযোদ্ধা প্রতিরোধ বাহিনীদের আক্রমণে পুরো সেনাবহরটি বিধ্বস্ত ও নিহত হয়।
শহীদ সহযোদ্ধাদের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মন্ত্রী। ভূমিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক সেই নির্দেশনাই ছিল আমাদের প্রেরণা। পাকিস্তানি সেনাদের আধুনিক অস্ত্র সম্বন্ধে আমাদের তখন কোন ধারণাই ছিল না। আকাশ থেকে পাকিস্তানি যুদ্ধ বিমান বৃষ্টির মতো গুলি চালিয়েছিল। সেদিনটির কোন কিছুকেই আমরা পরোয়া করিনি। ১৭ জন সহযোদ্ধাসহ ৭০ জন মানুষের শহীদ হওয়ার দিনটি ছিল আমাদের কাছে এখন স্বপ্নের মতো।
এর আগে মন্ত্রী মাধপুরে বটগাছতলায় স্মৃতিস্তম্ভে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাসহ ২৯ মার্চ মাধপুরে প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদদের আত্মার প্রতি মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
পাবনা জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন এর সভাপতিত্বে এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম, পাবনা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, পাবনা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম, ঈশ^রদী উপজেলা প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন, পাবনা সদর উপজেলা প্রকৌশলী ওয়ালিউর রহমান, পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবিব, মুক্তিযোদ্ধা এম.এ. বাতেন, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক, মুক্তিযোদ্ধা চান্না মন্ডল, মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ