ওমর ফারুক :
বছর ঘুরে মুসলমানদের মাঝে আবার ফিরে এসেছে সিয়াম-সাধনা ও আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জনের মাস পবিত্র মাহে রমজান। মাহে রমজানের রোজা পালনের জন্য মুসল্লিরা গত রাতেই সেহেরি খেয়েছেন। সারাদিন রোজা থেকে ইফতারের মুহূর্তটিকে আনন্দঘন করে তুলতে মুসলমানরা সাধ ও সাধ্য অনুযায়ী বাহারি ইফতার সামগ্রীর পসরা সাজান। অন্যান্য দিনের তুলনায় রোজার প্রথম একটু ভিন্নভাবে ইফতারির আয়োজন করতে পছন্দ করেন মুসল্লিরা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমজানের প্রথম দিনেই রাজশাহী মহানগরীর ইফতারির দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। মঙ্গলবার রোজার প্রথম দিনে উৎসব মুখর পরিবেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ইফতারির দোকানে দেখা গেছে। তবে
সূর্যের প্রখরতা থাকার কারণে বিকেল পৌনে ৬টার পর থেকে ইফতারির দোকানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। এর আগে তেমন ভিড় দেখা যায়নি। মুসলমানরা সারা দিন রোজা রেখে সন্ধ্যার আগেই ইফতারি কেনার জন্য ইফতারির দোকানে ভিড় জমান। গত রমজানের তুলনায় এবার ভিড় একটু কম ছিল। প্রচন্ড খরা হওয়ার কারণে ভাজা-পোড়ার দোকানের পাশাপাশি ঠান্ডা শরবত, কলা, ডাব , লিচু, তরমুজের দোকানেও ক্রেতারা ভিড় জমান।রাজশাহী মহানগরীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সাহেব বাজার, লক্ষীপুর বাজার, কোর্ট স্টেশন বাজার, নওদাপাড়া বাজার, ভাটাপাড়া মোড়, শিরোইল বাজার, তালাইমারী বাজার, কাশিয়াডাঙ্গা মোড়, বিনোদপুর বাজারসহ অন্যান্য বাজারে ক্রেতাদের ভিড় ছিল অনেক বেশি। এ ছাড়াও পাড়া মহল্লার ইফতারির দোকানগুলোতে ভাজাপোড়া কেনার জন্য ক্রেতারা
ভিড় জমান। ইফতারির বাজারগুলোতে এবার অন্যান্য বছরের মত তেমন নতুন কোন পদের দেখা মেলেনি। তবে ভাজাপোড়ার দাম গত বছরের থেকে কিছুটা বেড়েছে। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ইফতারির বাজারে কম ক্রেতা দেখা গেছে। স্বাস্থের কথা মাথায় রেখে এবার বাড়িতে তৈরি ইফতারি বেশি খাচ্ছেন নগরবাসী। রোজার প্রথম দিনে যেসব ইফতার সামগ্রী দেখা গেছে তার মধ্যে রয়েছে, চিকেন কাঠি কাবাব, আস্ত মুরগি, শিক কাবাব, চিকেন বল, ছানা পোলাও, রিফশাসলিক, চিকেন পাকুড়া, বার্ড ফ্লাই, চিকেন শাসলিক, মাটন পাটলি, চিকেন উইংকস, বেসিল প্রনস এবং জিলাপি, পিয়াজু, ছোলা, সিঙ্গারা, আলুর চপ, ডিমের চপ, বুন্দিয়া, বোরহানি ও তেহেরি। ইফতারির বাজারে ভাজাপোড়ার দাম আগের থেকে কিছুটা বেড়েছে। এদিকে, বিগত বছরগুলোর মত পাড়া মহল্লাতেও অস্থায়ী ইফতারির দোকান বসিয়ে বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। কিছুদিন আগেই রাসিকের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
অভিযানে অনেক দোকান উঠিয়ে দেওয়ায় এবার ফুটপাতের ইফতারির দোকান তেমন জমেনি বলেই স্থানীয়রা দাবি করছেন। ইফতার কিনতে আসা লাতিফুল কবির নামের এক ব্যক্তি বলেন, সারাদিন রোজা রেখে পরিবারের সাথে ইফতার করতে পারলে ভাল লাগে। তাই প্রতি বছরের মত এবারও বাজার থেকে সাধ্য অনুযায়ী ইফতার সামগ্রী কিনেছি। তবে প্রত্যেক জিনিসের দাম এবার একটু বেড়েছে এই ক্রেতা দাবি করেন। ইফতার সামগ্রী কিনতে আসা সাইফুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বলেন, এ বছর সব জিনিসের দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। কারণ যে পরিমাণ দাম বেড়েছে সেই পরিমাণ আয় বাড়েনি। আয় তেমন না বাড়লেও জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে সংসার চালাতে হিমসিম
খেতে হচ্ছে। রাজশাহী মহানগরীর ইফতার ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, দাম বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়। ইফতার সামগ্রী তৈরি করতে যেসব সামগ্রী লাগে তার দাম কিছুটা বেড়েছে। তাই ইফতারির দামও কিছুটা বেড়েছে। কম দামে ইফতার তৈরির সামগ্রী কিনতে পারলে কম দামেই বিক্রি করা সম্ভব হবে। প্রথম দিনে যত বেশি ইফতারি বিক্রি হওয়ার কথা চিন্তা করছিলাম সেও পরিমাণ নাও হতে পারে। তারপরও বিক্রি খুব খারাপও হয়নি। বিক্রি বেশি হলে লাভও ভালো হবে বলে আশা করেন ইফতার ব্যবসায়ীরা।
আর/এস