খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে শনিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির পশুর হাট বসেছে রাজধানীতে। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এবার ঢাকার দুই সিটিতেই কমেছে হাটের সংখ্যা। মোট হাট বসেছে ১৭টি। একটি বাদে ১৬টি অস্থায়ী হাট। তবে এসব হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার খুব একটা বালাই নেই। হাটের সংখ্যা কমানো এবং অনলাইনে পশু কেনার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হলেও তাতে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে ক্রেতা সাধারণ। অন্যান্য বছরের মতোই তারা দল বেঁধে হাটে যাচ্ছে পশু দেখতে।
রাজধানীর ১৭টি হাটের মধ্যে একমাত্র গাবতলী হাটটিই স্থায়ী। শনিবার এই হাট ঘুরে দেখা যায়, দর্শনার্থীদের আনাগোনা প্রচুর। তবে বেচাকেনা হচ্ছে কম। বিক্রেতারা জানান, ঈদের তিন দিন আগে থেকে জমে উঠবে বেচাকেনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাটে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকে সপরিবারে এসেছেন কোরবানির পশু পছন্দ করতে। কেউ কেউ শিশুদেরও নিয়ে এসেছেন হাটে। অথচ এটা স্বাস্থ্যবিধির লঙ্ঘন বলে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। হাটে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, প্রতি বছর কোরবানি ঈদে তারা হাটে এসে দেখেশুনে পশু কিনেন। এবারও সেটাই করছেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে তারা খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে মনে হলো না।
এছাড়া হাটে আসা অনেকের মুখে নেই মাস্ক। মানছেন না সামাজিক দূরত্বও। অনেকে গাদাগাদি করে গরুর পাশে ভিড় করছেন। যারা গরু নিয়ে এসেছেন তাদেরও অনেকের মুখে নেই মাস্ক। অথচ সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।
গাবতলী হাটের ইনচার্জ সজীব সরকার বলেন, ‘গতকাল একজন তার স্ত্রী সন্তানসহ আটজনকে নিয়ে হাটে এসেছেন। আজও অনেকেই তিন, চারজন, পাঁচজন পর্যন্ত একসঙ্গে হাটে এসেছেন। এটা তো স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে পড়ে না। যারা হাটে আসছেন তারা এ বিষয়টি মানা উচিত।’
স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় গাবতলী হাট ইজারাদারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে সজীব বলেন, ‘এবার আমাদের হাসিল ঘর বাড়ানো হয়েছে। গত বছর সাতটা হাসিল ঘর ছিল। এবার ১২টা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ক্রেতারা দূরত্ব বজায় রেখে হাসিল পরিশোধ করতে পারবে। এছাড়া হাটে নিয়মিত জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজে আমাদের কর্মীরা কাজ করছে। হাসিল ঘরে যারা থাকবে বা অন্যান্য কাজে যারা নিয়োজিত আছে সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’
শেষ তিন দিন কোরবানির পশুর বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানালেন হাটের এই কর্মী। মূল হাটে সিটি করপোরেশনের বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী সাত ফুট দূরে দূরে গরু রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে মূল হাটের বাইরে যে গরু রাখা হবে, তারা কতটা সামাজিক দূরত্ব মানবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে জানান সজীব সরকার। যদিও মূল হাটের বাইরে যারা গরু রাখবেন তাদের জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছেন তারা।
এদিকে গাবতলী ছাড়া অন্যান্য হাটেও খবর নিয়ে জানা গেছে, সেখানেও ক্রেতা সাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই কম। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে জনসাধারণকে সচেতন করতে।
এবার ঢাকা উত্তর সিটিতে গাবতলী হাট ছাড়াও পাঁচটি অস্থায়ী হাট বসেছে। উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে বৃন্দাবন হতে উত্তর দিকে বিজিএমইএ ভবন পর্যন্ত খালি জায়গা, কাওলা শিয়াল ডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন, মস্তুল ডুমনী বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদ নগর) পশুর হাট এবং উত্তরখান মৈনারটেক হাউজিং প্রকল্পের খালি জায়গা।
এসব হাটে এখন অবকাঠানো নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ দিকে। হাটে গবাদি পশুও উঠেছে। ক্রেতাদের আনাগোনা থাকলেও তা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। আগামী দুই একদিনে ক্রেতার পরিমাণ আরও বাড়বে।
এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) এলাকায় হাট বসছে ১১টি। হাটগুলো হলো- কমলাপুর লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, আফতাবনগর ব্লক-ই, এফ, জি এর সেকশন ১ ও ২ নম্বর এলাকা, হাজারীবাগ লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের পাশে ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের খালি জায়গা এবং রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা।
খবর২৪ঘন্টা/নই