খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: পরিবারে কেউ বিদেশফেরত নেই। গত এক মাসের মধ্যে বিদেশফেরত কেউ তাদের বাড়িতেও আসেনি। এমনকি আত্মীয়-স্বজনদের কেউও না। এরপরও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ৯০ বছরের এক বৃদ্ধ।
নমুনা পরীক্ষার পর করোনায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে শনিবার (৪ এপ্রিল) নিশ্চিত করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
এ ঘটনায় নড়িয়া উপজেলার ৩৪ পরিবারের ১৮৯ জনকে লকডাউন করা হয়েছে। শনিবার রাতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কাজী আবু তাহের।
ডিসি আবু তাহের বলেন, নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের ৯০ বছরের এক বৃদ্ধ গত বুধবার (০১ এপ্রিল) হৃদরোগজনিত সমস্যা নিয়ে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকার মহাখালী বক্ষ্মব্যাধি হাসপাতালে পাঠান। শনিবার সকাল ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তার দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তার মরদেহ পরিবারকে না দিয়ে আইইডিসিআরের তত্ত্বাবধানে বিশেষ ব্যবস্থায় দাফন করা হয়েছে।
ডিসি আরও বলেন, ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফিকুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম ও নড়িয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান গিয়ে তার পরিবারের নয়জন ও আশপাশের ২৪ পরিবারের ১২৭ জনকে লকডাউনে রাখেন। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঘড়িসার ইউনিয়নের নয় পরিবারের ৫৩ জনকে লকডাউন করা হয়। তার সংস্পর্শে আসায় ৩৪ পরিবারের ১৮৯ জনকে লকডাউন করা হয়েছে।
মৃত বৃদ্ধের বড় ছেলে বলেন, আমার বাবা দেওয়ানবাগীর ভক্ত। ২০ মার্চ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত ঢাকায় দেওয়ানবাগীর ওরস ছিল। তিনি ওরসের তিনদিন দেওয়ানবাগীতে ছিলেন। বাবা সেখান থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে আমার ধারণা। কারণ আমাদের পরিবারে বিদেশফেরত কেউ নেই। গত এক মাসে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিদেশফেরত কেউ আমাদের বাড়িতে আসেনি। বিদেশফেরত কারও বাড়িতে আমরাও যাইনি। কাজেই বাবা দেওয়ানবাগীর ওরসেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
এদিকে, শনিবার সকাল ৯টায় জ্বর ও মাথাব্যথায় আক্রান্ত এক নারীকে (৩৫) শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মৃত নারীর বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামে। করোনাভাইরাসে তার মৃত্যু হয়েছে কি-না বিষয়টি নিশ্চিত হতে কর্তৃপক্ষ নমুনা সংগ্রহের সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। টের পেয়ে স্বজনরা মরদেহ নিয়ে পালিয়ে যান। ঘটনাটি জানার পর ইসলামিক ফাউন্ডেশন সদর উপজেলায় গঠিত কমিটির সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ওই নারীর দাফন সম্পন্ন করে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহাবুর রহমান শেখ, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সোবাহান এবং পালং মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসলাম উদ্দিন মৃত নারীর বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। নমুনার ফলাফল না আসা পর্যন্ত তার সংস্পর্শে আসা চার পরিবারের সাতজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
খবর২৪ঘন্টা/নই