খবর২৪ঘণ্টা.কম, ডেস্ক: একটা ভালবাসার গল্প আর তার অন্তিমে নির্মম কাহিনী, এটাই বোধ হয় রানি পদ্মিনীকে অমর করে দিয়েছে। আজ হয়ত বিতর্ক দিয়েই মানুষ জানছে সেই পদ্মিনীর আখ্যান। কিন্তু, আসল ঘটনা জানলে সত্যিই গায়ে কাঁটা দেয়।
রাজস্থানের চিতোরগড়ে জড়িয়ে আছে রাজপুতদের গল্প। আজও সেখানে গেলে যেন ঘোড়ার খুরের শব্দ শোনা যায়। সাজানো পদ্মিনী মহল দেখলে মনে হয়, এই বুঝি শোনা যাবে সেই সাহসী রমণীর পায়ের শব্দ। আর যে কুণ্ডে ঝাঁপ দিয়ে জহর পালন করেছিল রাজপুত রমণীরা, সেদিকে তাকালে যেন শরীরে তড়িৎ খেলে যায়।
পদ্মিনীর সাহস যেন ছাপিয়ে যায় তার সৌন্দর্যকে। তাঁর আত্মত্যাগ যেন ছাপিয়ে যায় তার ভালবাসার কাহিনীকে। হিন্দু কিংবা রাজপুত কাহিনীতে রানি পদ্মিনীর অস্তিত্ব খুব একটা প্রকট না হলেও, মালিক মহম্মদের এক লোকগাথা থেকে জানা যায় তাঁর গল্প।
আলাউদ্দিন খিলজির চিতোরগড় দখলের অন্তত ২৩০ বছর পর প্রথম সামনে আসে সেই লোকগাথা। প্রচলিত হয় পদ্মিনীর জওহরের কাহিনী। সিংহলের রাজার কন্যা ছিলেন পদ্মিনী। তাঁর কাছে ছিল এক বিখ্যাত টিয়া ‘হীরামণি’। তাঁর স্বয়ম্বরের কাহিনীও সাধারণ নয়। ছদ্মবেশে তলোয়ার নিয়ে খেলা খেলেছিলেন তিনি নিজে। শর্ত ছিল, যে তাঁকে হারাতে পারবে, তাঁর গলাতেই মালা দেবেন পদ্মিনী। সেই লড়াইতে জিতে যান রাজা রতন সিং। তাই তাঁর ১৪ জন রানি আছে জেনেও তাঁকে বিয়ে করেন পদ্মিনী।
পদ্মিনীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে চিতোরগড়ে হামলায় চালায় আলাউদ্দিন খিলজি। শর্ত ছিল পদ্মিনীকে পেলেই ছেড়ে দেওয়া হবে রাজা রতন সিং-কে। পদ্মিনী সাজিয়ে খিলজির কাছে পাঠানো হয় এক পুরুষকে। বোঝার আগেই মুক্তি পান রতন সিং। এরপর শুরু হয় যুদ্ধ। মৃত্যু হয় রতন সিং-এর।
খবর পেয়েই এক গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে জওহরকুণ্ডের দিকে এগিয়ে যান পদ্মিনী সহ রতন সিং-এর অন্যান্য স্ত্রী’রা। সঙ্গে ছিল রাজপুত সেনাদের স্ত্রী’রাও। তাঁরা একসঙ্গে জওহরকুণ্ডে ঝাঁপ দিয়ে আত্মত্যাগ করেন। সবার আগে ঝাঁপ দেন পদ্মিনী। খিলজি এসে শুনতে পান তাঁদের কান্নার শব্দ। সেই শব্দ এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে ওই সুড়ঙ্গ বন্ধ করে দেন খিলজি।
আজও সেই সুড়ঙ্গে মিশে আছে রানীদের আর্তনাদ। ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন এই সুড়ঙ্গে অক্সিজেনের অভাব। গেলে অনুভব করা যায়, যেন সুড়ঙ্গের দেওয়াল থেকে বেরিয়ে আসছে উত্তাপ। সেখানে দাঁড়ালে সত্যিই গায়ে কাঁটা দেয়। স্তব্ধতার মধ্যে যেন মিশে আছে কান্না আর হাহাকার। যেন দম বন্ধ হয়ে আসে!
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ