নিজস্ব প্রতিবেদক : চাচার বাড়িতে বেড়াতে এসে রাজশাহীর প্রমত্তা পদ্মায় নৌকা ভ্রমণে গিয়ে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হওয়ার ৮ দিন পর যেখানে তারা ডুবেছিল সেখানেই (ঘটনাস্থলেই) অর্ধগলিত লাশ ভেসে উঠে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম সূচনা (২৪) ও তার ফুফাতো ভাই রিপনের (১৪)। আজ সকাল ৮ টার দিকে রাজশাহীর নবগঙ্গা সংলগ্ন পদ্মা নদীতে তাদের ভাইবোনের অর্ধগলিত লাশ ভেসে উঠে। ভেসে উঠা লাশ স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে তাদের স্বজনদের খবর দেয়। খবর পেয়ে তারা ও স্থানীয় মাঝিরা নদীতে থেকে লাশ উদ্ধার করে। তবে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়নি
পরিবারের লোকজন। সাদিয়া ইসলাম সূচনা আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (এআইইউবি) বিবিএ তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী ছিলেন। তিনি রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় বসবাস করতেন। তার ফুফাতো ভাই রিমনের বাড়ি নওগাঁয়। সে ৮ম শ্রেণীতে পড়াশোনা করতো। তারা রাজশাহীর পবা উপজেলার খোলাবোনা এলাকায় চাচা জালাল উদ্দিনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। লাশ ভেসে উঠেছে শুনে ঘটনাস্থলে শত শত লোক ভিড় জমান তাদের এক পলক দেখার জন্য।
এদিকে, ৯ দিনের মাথায় স্বজনরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সাদিয়া ইসলাম সূচনা ও তার ফুফাতো ভাই রিমনের অর্ধগলিত লাশ পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। লাশগুলো স্থানীয়
কোন মানুষের না হওয়ার পরও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনদের মধ্যে অনেকেই ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতিকেও দায়ী করেন। যদিও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে গাফিলতির কথা অস্বীকার করে তাদের সাধ্য অনুযায়ী উদ্ধার অভিযান চালানোর কথা বলা হয়েছে। তারা লাশ উদ্ধারে সব সময় প্রস্তুত ছিলেন।
রাজশাহী নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মেহেদি মাসুদ বলেন, স্থানীয়রা নদীতে লাশ ভাসতে দেখে খবর দেয়। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যায়। স্থানীয় মাঝিদের সহায়তায় লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশ পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করা হয়।
রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুর রউফ বলেন, আমাদের জানানো হয়নি। এ জন্য আমাদের টিম ঘটনাস্থলে যায়নি। ঘটনাস্থলেই লাশ ভেসে উঠল কিন্ত আপনারা উদ্ধার করতে পারলেন না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নদীর যেখানে ঘটনাস্থল সেখানে পানি ঘুর্নি খাচ্ছিলো। সেখানে পানির গভীরতা ছিল প্রায় ৩০ থেকে .৩৫ ফিট। আমাদের ডুবুরি দল সে পর্যন্ত গিয়েছিল। কিন্ত হয়তো তারা ডুবে যাওয়ার পর মাটি চাপা পড়েছিল এ জন্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে
ফুলে ফেঁপে উঠায় ভেসে উঠেছে। আমাদের কোন গাফিলতি ছিলনা। আমরা চেষ্টা করেছি সাধ্যমত। লাশ দেখতে পেলে ফায়ার সার্ভিস খবর দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্ত জানিনা তারা কি কারণে খবর দেয়নি। খবর দিলে ফায়ার সার্ভিস তার দায়িত্ব পালন করতো।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের গত ২৫ সেপ্টেমবর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজশাহীর নবগঙ্গা সংলগ্ন পদ্মা নদীতে মাঝিসহ ১৩ জন যাত্রী ডুবে যায়। ১১ জন জীবিত উদ্ধার হলেও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সূচনা ও তার ভাই নিখোঁজ ছিল। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ৩ দিন পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়েও তাদের সন্ধান না পেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করে। সুরক্ষা সামগ্রী না নিয়ে পদ্মায় নৌকা চালানোর দায়ে নৌকার দুই মালিক ও মাঝিসহ ৩ জনকে আসামী করে নৌপুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়। এরপর ৮ দিন পেরিয়ে ৯ দিনের মাথায় পদ্মা নদীতে নিখোঁজ দু’জনের লাশ ভেসে উঠে।
এস/আর