নজরুল ইসলাম জুলু: আপ্যায়ন বিল নেই, সোর্স মানি, নেই, নেই হোন্ডা মোবাইল ডিউটির তেলের বিলও। নেই নেই এর মাঝেও দেশ ও জনগণের কল্যানে কাজ করে যাচ্ছে থানা পুলিশের কর্মকর্তারা। অনেক কস্ট বুকে চেপে ২৪ ঘন্টা দায়িত্বপালনে অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় সদাজাগ্রত থেকে কাজ করে যাচ্ছে থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জরা।
থানা পুলিশের কর্মকর্তাদের সাথে বলে এমন তথ্য জানা যায়, বর্তমানে থানা পুলিশের কোন অপ্যায়ন বিল নেই, সোর্স মানিও নেই। একটি মামলার তদন্ত করতে গেলে কর্মকর্তার বিলের পরিমান খুবই নগন্য। আবার সেটি পেতেও কর্মকর্তাদের গলদঘর্ম হয়ে যায়। এত গেলো নাইয়ের পালা। এবার ডিউটির কোন শেষ নেই পুলিশের। সাধারণ পুলিশ সদস্যের ডিউটি ১২ ঘণ্টা। আর অফিসার ইনচার্জের ডিউটির কোন সময় নাই। খাতা কলমে ডিউটি এ রকম থাকলেও অনেক সময়ই এটি পরিবর্তন হয়ে যায়। ডিউটি শেষ করে একজন অফিসার বাসায় যাওয়ার পর আবার কোন ঘটনা ঘটলে তাকে আবার চলে আসতে হয়। সবমিলিয়ে একজন থানা পুলিশ অফিসারের ডিউটির কোন শেষ নেই।
কর্মকর্তারা বলেন, এতকিছুর পরও দোষচাপে পুলিশের ওপর। এত সীমাবদ্ধতার ভেতরে থানা পুলিশ যেভাবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে সে অনুযায়ী মূল্যায়ন হয় না। মূল্যায়ন হলে পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠে তা আর কোনদিন উঠবেনা। পুলিশের যে বেতন আর ডিউটি এ দুইয়ের মধ্যে অনেক ফারাক।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, একজন অফিসার ইনচার্জের কাছে সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ আসে। একজন লোক থানার কর্মকর্তার কাছে আসলে নূন্যতম এককাপ চা দিতে হয়। অনেকসময় ফলমূল আনতে হয়। অথচ সরকারীভাবে একজন অফিসার ইনচার্জকে কোনধরনের আপ্যায়ন বিল দেয়া হয় না।
তিনি বলেন, একজন কর্মকর্তা মোটরসাইকেল নিয়ে কোন আসামি ধরা বা তদন্ত করতে গেলো সেখানে তার কোন বিল নেই। এছাড়া হোন্ডা মোবাইল ডিউটি থাকে সেখানেও তার কোন বিল নেই। যদি সরকারীভাবে মোটরসাইকেল বরাদ্দ হয় তবে মাসে ১০ লিটার তেল দেয়া হয়। মাসে ১০ লিটার তেলে কি করে একজন কর্মকর্তা চলতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের নিকট মাদক উদ্ধারের অ্যাসিভমেন্ট চাওয়া হয়। মাদক উদ্ধারে সোর্সের ভুমিকা খুবই গুরত্বপূর্ন। অথচ কোন সোর্স মানি নেই। সোর্সকে টাকা না দিলে সে কিভাবে কাজ করবে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, থানা পুলিশেরও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হয়। এ সকল আয়োজনের টাকাও কিন্তু সরকারীভাবে দেয়া হয়না। ওসিকে বলা হয় ম্যানেজ করে নিতে । ওসি কিভাবে ম্যানেজ করবে ।
কর্মকর্তারা বলছেন, দূর্নীতিমুক্ত ও সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার মানসিকতা তখনই গড়ে উঠবে যখন এই সমস্যাগুলো থাকবেনা। সরকারী অন্যান্য কর্মকর্তারা রয়েছেন তারা কিভাবে চলে আর পুলিশ কিভাবে চলে এটি পার্থক্য করলেই হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, তারপরও তারা দেশের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছেন। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি সর্বোচ্চ আনুগত্য দেখিয়ে শতকষ্ট বুকে চেপে চেইন অব কমান্ড মেনে কাজ করে যাচ্ছেন। সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করা গেলে পুলিশের কাজে আরো গতি বাড়বে বলে তারা মতামত দিয়েছেন।
এদিকে এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, এটি আসলে পুরো পুলিশের সমস্যা। জাতীয়ভাবে সমস্যা সমাধান হলে এটি তারা পেয়ে যাবেন। তবে অবশ্যই পুলিশ সদরদপ্তর এ বিষয়ে আন্তরিক।
লেখা, অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
খবর২৪ঘন্টা/নই