আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির বহুল আলোচিত মেডিকেল ছাত্রী নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্ত চার আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে পাঁচটায় তিহার জেলে চার ধর্ষকের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
ভারতীয় গণমাধ্যম কলকাতা টুয়েন্টিফোরের খবরে বলা হয়েছে- ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নির্ভয়ার মা। তবুও দেরিতে হলেও বিচার পাওয়াতে খুশি তিনি।
যাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে তারা হলেন অক্ষয় ঠাকুর সিং, মুকেশ সিং, পবন গুপ্তা ও বিনয় শর্মা।
তিহার কারাগারের পরিচালক জেনারেল সন্দীপ গোয়েল ফাঁসি কার্যকর হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন।
ফাঁসি কার্যকর ঘিরে তিহার জেলের বাইরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয় জেলের বাইরে। কিন্তু নিরাপত্তা উপেক্ষা করেই জেলের বাইরে প্রচুর মানুষের ভিড় করে। গোটা তিহার জেল লক-ডাউন করে দেয়া হয়।
কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাঁসির মঞ্চে নেওয়ার আগে আসামিদের মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়। পরে তিহার কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা সবাই সুস্থ আছে। এবং অবশেষে দীর্ঘ সাত বছরের বেশি সময় ধরে চলা আইনি লড়াইয়ের পর, শুক্রবার ভোরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে চার আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
খুনিদের ফাঁসি কার্যকরের পর এই দিনটিকে ‘নির্ভয়া ন্যায়দিবস’ হিসেবে পালন করতে আবেদন জানিয়েছেন তার বাবা। আর তার মা আশা দেবী বলেছেন, ‘বিচার দেরিতে এসেছে তবে শেষ পর্যন্ত পার পায়নি খুনিরা।’
ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দণ্ডপ্রাপ্তদের মৃত্যুদণ্ডের তারিখ পেছানোসহ বিভিন্ন আবেদনের কারণে ফাঁসির নির্ধারিত সময়ের পৌনে দুই ঘণ্টা আগ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে চলেছে শুনানি। তবে সব আবেদনই খারিজ করে রাত ৩টা ৪৫ মিনিটে চূড়ান্ত রায় জানিয়ে দেন সুপ্রিম কোর্ট।
রায় ঘোষণার পর নির্ভয়ার মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ অনেকটা শান্তি পেলাম। অবশেষে আমার মেয়ে সুবিচার পেলো। সারাদেশ এই অপরাধের জন্যে লজ্জিত ছিল। দেশবাসীও সুবিচার পেলেন।’
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে ২৩ বছরের ওই তরুণী তার বন্ধুর সঙ্গে একটি সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন দক্ষিণ দিল্লিতে।
ফেরার পথে তারা বাসের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় একটি ফাঁকা বাসে তাদের তুলে নেয়া হয়। বাসে ছিল ছয়জন ব্যক্তি।
এরপর তারা ওই তরুণীকে ধর্ষণ ও লোহার রড দিয়ে নির্যাতন করে কয়েক ঘণ্টা ধরে। তারপর রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেয়। তার সঙ্গীও আহত হন। ২৯ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় ওই তরুণীর। গোটা ভারত ক্ষোভে গর্জে উঠেছিল এমন অমানুষিক বর্বরতার বিরুদ্ধে। ভারতজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে বিক্ষোভকারীদের চাপে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে আইন পরিবর্তনেও বাধ্য হয় ভারত সরকার। এ ঘটনায় চার আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়। আর বাসটির চালক রাম সিং কারাগারে আত্মহত্যা করে। অপর এক আসামি অপরাধের সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকায় তিন বছর সংশোধন কেন্দ্রে থাকার পর মুক্তি পায়।
খবর২৪ঘন্টা/নই