খবর২৪ঘন্টা ডেস্ক : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি কখনোই সংস্কারের বিপক্ষে নয়, বরং নূন্যতম সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি সংস্কার নয়, নির্বাচন চায়। এ কথা সঠিক নয়। আমরা বারবার বলেছি প্রয়োজনীয় অর্থাৎ নূন্যতম সংস্কার শেষে নির্বাচন চাই। আমরা নির্বাচনের কথা বলেছি এবং এখনো বলছি, কারণ যে কোনো একটি রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেতে নির্বাচন হলো প্রধান ফটক।’
বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের প্রধান সমস্যাটা হলো- এ দেশে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক চর্চাই হয়নি। এ সংস্কৃতিই গড়ে ওঠেনি।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার খামারবাড়ি বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক এক জাতীয় সংলাপে বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন। ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন এই তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে দু’দিনব্যাপী এই সংলাপের আজ ছিল প্রথম দিন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ সকাল ৯টায় এক ভিডিও বার্তায় এ সংলাপের উদ্বোধন করেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশ একটি জটিল রাজনৈতিক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে আমাদের মূল কাজ হলো, ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে আমরা যেন নিজেদের স্বপ্নের মতো করে দেখতে পারি।’
তিনি বলেন, আজকে যে প্রশ্নগুলো সামনে এসেছে তা হলো- ঐক্য, সংস্কার এবং নির্বাচন। এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আজকে ৫৩ বছর পরে এসে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে। খুব ভালো হতো যদি প্রথম থেকেই এই বিষয়গুলো নিয়ে সবাই মিলে কাজ করে একটা জায়গায় এসে পৌঁছাতে পারতাম।
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা খুব জরুরি কথা, আমরা যেন একাত্তরকে ভুলে না যাই। একাত্তর সালকে আমরা কখনো ভুলে না যাই। একাত্তরের পর থেকে গণতন্ত্রের জন্য ধারাবাহিক যে লড়াই-সংগ্রাম, সেসব সংগ্রামের কথা আমাদের প্রত্যেককে মনে রাখা দরকার। সেই লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে, শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকে আমরা এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি। তাই, আমরা এইটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি যে বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা সব সময়ই গণতন্ত্রের সংস্কারের পক্ষে। এর জন্য আমরা কাজ করছি এবং করবো।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ২০১২ সাল থেকে অবস্থান নিয়ে সংগ্রাম শুরু করে। সে সময় আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, অনেক নেতাকে পঙ্গু করা হয়েছে, কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমাদের দলের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমাদের সাত শতাধিক নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে ২০ হাজারের বেশি মানুষকে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আয়নাঘরের কথা সবাই জানেন। এছাড়াও বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায়ও আমরা কখনো থেমে থাকিনি। আমরা প্রথম থেকেই সোচ্চার থাকার চেষ্টা করেছি, তখন অনেককেই আমরা সঙ্গে পাইনি। এখন আমরা তাদের সামনে দেখছি, আমাদের খুব ভালো লাগছে।’
সংস্কারের ব্যাপারে বিএনপি খুবই আন্তরিক এ কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২০১৬ সালে আমাদের দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেন। যেখানে রাজনৈতিক সংস্কারের কথা খুব পরিস্কারভাবে উল্লেখ করা ছিলো এবং এখন যে বিষয়গুলোতে আমরা পরিবর্তনের কথা বলছি সেগুলো ধারাবাহিকভাবে ছিলো।’
তিনি বলেন, ‘আজকে যে বিষয়টি একেবারে সামনে চলে এসেছে, সেটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা এবং ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা। এক ব্যক্তি যেনো দু’বার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে না পারেন; সে বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং দুই কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন করা। পরবর্তীতে ২০২২ সালে গোলাপবাগে একটি সমাবেশ থেকে প্রথমে ১০ দফা দেওয়া হয়। পরে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জনগণের সামনে পেশ করেছেন। সমস্ত রাজনৈতিক দল সেগুলো সমর্থন করে। দীর্ঘ ২ বছর ধরে বিএনপি এই ৩১ দফা নিয়ে কাজ করছে।
রাষ্ট্রের সংস্কারের নামে দীর্ঘস্থায়ী কোনো ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইতোপূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে। অর্থাৎ এই ব্যবস্থা মানুষ গ্রহণ করেছিল এবং জরুরি মনে করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি তখন রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে চলে যেতাম, সেটা জনগণ গ্রহণ করতো না বলে আমার কাছে মনে হয়। আমার ধারণা, জনগণকে বাদ দিয়ে কোনো কিছু করা সম্ভব হবে না। তাই জনগণকে সঙ্গে রেখেই সব কিছু করতে হবে।’ ভুলভ্রান্তি হলেও তা অগ্রাহ্য করে ঐক্য ধরে রাখতে হবে বলেও বিএনপি মহাসচিব উল্লেখ করেন।
ড. জাহেদ উর রহমানের সঞ্চালনায় প্রথম অধিবেশনে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সংবিধান বিষয়ক সংস্কার কমিটির প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ, নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডি’র সহ-সভাপতি তানিয়া রব, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নূর, বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ফজলুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী ও রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
বিএ..