তানোর থেকে ফিরে ওমর ফারুক:
নিজের হাতে তৈরি করা ভার্মী কম্পোষ্ট (কেঁচো সার) তৈরি করে সফলতা পেয়েছেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ। ২০১৪ সাল থেকে সার উৎপাদন শুরু করেন তিনি। প্রথমদিকে তেমন সাড়া না পাওয়ায় হতাশ হয়েও পড়েন। কারণ দেড় বছর সার উৎপাদন করেও বিক্রি করতে পারেননি। টাকা খরচ করে ফসলের জন্য অত্যন্ত উপকারী কৃষি বান্ধব সার তৈরি করে বিক্রি করতে না পারায় লোকসানের মধ্যে পড়তে হয় তাঁকে। এ জন্য সার তৈরিতে অনিহা চলে আসলেও হাল ছাড়েননি। নিজের তৈরি সারের গুনাগুন বোঝাতে শুরু করেন কৃষকদের। কারণ কৃষকরা এই সার থেকে উপকার পেলে তার সার তৈরির মূল উদ্দেশ্য পূরণ হবে। সেই সাথে তার সফলতাও মিলবে। দেড় বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে তার সারের গুনাগুন কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে কিছু সার বিক্রি হয়। কৃষকরা সার জমিতে প্রয়োগ হরে উপকার পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তার সারের কথা।
তখন বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা সার নিতে তার বাড়িতে ভিড় করেন। তারপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি কৃষক হামিদকে। সরজমিনে তার বাড়ির সামনে সার তৈরির সেটে গিয়ে দেখা যায় তার কেঁচো সার তৈরির প্রস্তুত প্রণালী। এ সময় তার সাথে কথা হলে কৃষক আব্দুল হামিদ জানান, তিনি ২০১৪ সাল থেকে সার তৈরি শুরু করলেও দেড় বছর বিক্রি করতে পারেননি। এ সময়টা চলে যায় কৃষকদের বাজারের সারের থেকে কৈঁচো সারের উপকারিতা বোঝাতে বোঝাতে। ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে সার বিক্রি শুরু হয়। কেঁচো সার তৈরির বিষয়ে তিনি আরো জানান, জৈব পদার্থ/গোবর থেকে কেঁচোর মাধ্যমে যে কম্পোষ্ট তৈরি হয় তাই কৈঁচো সার। এ সার ব্যবহারে ভালো ফলন হওয়ার পাশপাশি পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। এ সার ব্যবহারে যেসব উপকার পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মাটিতে রস ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। এ সার গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। খরচ খুব কম হয় ও এর ব্যবহারে জমিতে পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বাজারের তৈরি সারের থেকে কেঁচো সারের উপাদানগত পার্থক্য রয়েছে ব্যাপক।
অন্যান্য সারে যেখানে নাইট্রোজেন থাকে ১.৫ সেখানে কম্পোষ্ট সারে থাকে ২.৫, ফসফরাস অন্যান্য সারে থাকে ১.২ ও কেঁচো সারে থাকে ১.৮, পটাশ অন্যান্য সারে ১.৫ ও কেঁচো সারে থাকে ২.৪, সালফার অন্যান্য সারে ০.৬ ও কেঁচো সারে ১.০, ম্যাগনেসিয়াম অন্যান্য সারে থাকে ০.২ ও কম্পোষ্টে ০.৪, আইরন অন্যান্য সারে ২২ এবং কেঁচো সারে ৩৬ পিপিএম, জিংক অন্যান্য সারে ১০০০ এবং কেঁচো সারে ২০০০পিপিএম। এ কারণে সারের উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি। এ সার তৈরি করতে গোবরকে গ্যাস মুক্ত করতে হয়, কেঁচো দিতে হয় প্রয়োজন অনুযায়ী। কেঁচো সার তৈরি হতে সময় লাগে ২০ দিন। এরপর এটি জমিতে ব্যবহার উপযোগী হয়। কৃষক
আব্দুল হামিদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি প্রথম দেড় বছর লোকসানের মধ্যে পড়লেও থেমে যায়নি। সারের গুনাগুন বুঝিয়ে তাদেরকে এ সারের প্রতি আকৃষ্ট করি। এরপর আর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আমাকে। এখন ভালোই চাহিদা রয়েছে আমার তৈরি সারের। কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী সার দিতে হিমসিম খেতে হয়। এ সার তৈরি করে সফল হয়েছি। ভবিষ্যতে এর পরিসর আরো বাড়াতে চাই। ২০০৪ সাল থেকে তিনি পুরোপুরিভাবে কৃষি কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েন। সার তৈরির পাশপাশি বিভিন্ন সবজিও চাষ করেন তিনি।
খবর ২৪ ঘণ্টা/আর