নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের বড়াইগ্রামের বিভিন্ন কলেজে এইচএসসি ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। তবে এই অবৈধ টাকা আদায়ে এগিয়ে আছে উপজেলার জোনাইল ডিগ্রি কলেজ। এই কলেজ কর্তৃপক্ষ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারিক পরীক্ষা বাবদ পরীক্ষার্থীদের কাছ তিন দফায় ৫শত টাকা করে আদায় করেছে। এছাড়া অন্য বিষয়গুলোতে ২শত টাকা করে নেওয়া হয়েছে। চাহিদামাফিক টাকা প্রদান করতে না পারলে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় পরীক্ষার্থীদের। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই শিক্ষকদের খুশি ও পাশ করার জন্য টাকা দিচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা। এদিকে কেন্দ্র ফি ও পরীক্ষকদের খুশি করার জন্য পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই টাকা নিচ্ছে বলে জানান একাধিক শিক্ষক।
মঙ্গলবার দুপুরে জোনাইল ডিগ্রি কলেজে সরেজমিনে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী জানান, স্যারেরা বলেন ‘টাকা দিলে পাশ করবি না দিলে ফেল। এখন পাশ করবে না ফেল করবে সেটা তোমাদের বিষয়’।
অপরদিকে আরও অভিযোগ করেন, গত শুক্রবার বিকেলে মৌখিক পরীক্ষা দিতে এসে গেঞ্জি পড়ার কারণে একশত টাকা করে জরিমানা দিতে হয়েছে তাদের অনেককে। ওই সময় টাকা না দিলে ফেল করানো হবে বলে জানিয়েছিলো উপস্থিত স্যারেরা।
বনপাড়া ডিগ্রি কলেজ, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা অনার্স কলেজ, বড়াইগ্রাম অনার্স কলেজ, আহমেদপুর আযম আলী কলেজ, আহমেদপুর কলেজ, রাজাপুর কলেজ, খালিশাডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের পরীক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে একই ভাবে এই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। তবে ব্যবহারিক পরীক্ষা সহ মৌখিক পরীক্ষা বাবদ বিষয় প্রতি প্রত্যেক পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে দুইশত টাকা আদায় করছে এসব কলেজ।
হিসেব করে দেখা গেছে, জোনাইল ডিগ্রি কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের ২৯২ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুধুমাত্র আইসিটি ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য ১ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা অবৈধ ভাবে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করেছে। এছাড়া ভূগোল, মনোবিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, উচ্চতর গণিত বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২শত টাকা আদায়ের ফলে ওই কলেজ গড়ে সর্বমোট আদায় করেছে তিন লক্ষাধিক টাকা। এভাবে
উপজেলার প্রত্যেকটি কলেজ এবারের ব্যবহারিক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা অবৈধ ভাবে হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা নেয়াটা অন্যায় ও অনৈতিক বলে আখ্যায়িত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও প্রাক্তণ শিক্ষার্থীরা। এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা এ বিষয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে এই অবৈধভাবে আদায়কৃত টাকা পরীক্ষার্থীদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।
অবৈধ ভাবে টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে জোনাইল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শফিউজ্জামান জানান, খরচের তুলনায় অনেক কমই টাকা নেয়া হচ্ছে। বনপাড়া ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরিমল কুমার দাস, আহমেদপুর আযমআলী কলেজের অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান, মৌখাড়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. লুৎফর রহমান সহ অন্যান্য কলেজ প্রধানরা প্রায় একইরকম কথা বলেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ আনোয়ার পারভেজ জানান, কোন কলেজ যদি অনৈতিক ভাবে বা নিয়ম বহির্ভূত পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কলেজ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ