নাটোর প্রতিনিধিঃ নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া কলেজে বিভিন্ন অনিয়মের মধ্য দিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। বহিরাগত কলেজের শিক্ষক দিয়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ক্লাশ ভিত্তিক বন্টন ও বিতরণ, নন-এমপিও ভুক্ত শিক্ষককে দিয়ে পরীক্ষা হলের ডিউটি করানো সহ পরীক্ষার্থীদের নিকট-আত্মীয় অন্যান্য কলেজের শিক্ষকদের পরীক্ষা হলে অবাধ যাতায়াতের সুযোগ দেয়া সহ নানাবিধ অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ সব অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আনোয়ার পারভেজের কাছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে মৌখিকভাবে অনেকেই জানানোর পর পরীক্ষা কেন্দ্রে উপজেলা প্রশাসন থেকে তদারকিও বেড়েছে। তবে বহিরাগত শিক্ষকদের পরীক্ষা কেন্দ্রে অবাধ যাতায়াত ও পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালন করানোটাকে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিশেষ কোন পরীক্ষার্থীদের জন্য অনৈতিক সহযোগিতা হিসেবে মনে করছেন সমালোচক ও সুধী মহলেরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কলেজ শিক্ষক জানিয়েছেন, বনপাড়া কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে ৯ এপ্রিল আইসিটি পরীক্ষার দিন ১০১ নং কক্ষে রাজাপুর কলেজের মনোবিজ্ঞান বিষয়ের নন-এমপিও ভুক্ত শিক্ষক আরিফা খাতুন পরীক্ষা গ্রহণে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ওই দিন পরীক্ষা শুরু হওয়ার প্রায় এক ঘন্টা আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। ওই শিক্ষককে কেহ চিনেন না বলেই অন্যান্য শিক্ষক তখন ধারণা করেছেন তিনি দায়িত্বরত একজন ম্যাজিস্ট্রেট। আরিফা খাতুনের আগে আসা ও পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব গ্রহণের পেছনে কোন রহস্য আছে বলে মনে করছেন কলেজের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকরা। ওই দিনের পরীক্ষা কক্ষের প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক বনপাড়া কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহানা ইয়াসমিন রাজাপুর কলেজের নন-এমপিও ভুক্ত শিক্ষক আরিফা খাতুনের ডিউটি পালনের কথা স্বীকার করেছেন।
আরও অভিযোগ রয়েছে, গত ৩ এপ্রিল বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার দিন পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর দূর্গাদাস স্কুল এন্ড কলেজের মনোবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক মো. আশরাফুল ইসলাম এই কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে প্রশ্নপত্র ক্লাশ ভিত্তিক বন্টন ও বিতরণ করেন। পরে এ বিষয়ে ইউএনও কে জানালে পরের দিন থেকে ওই শিক্ষককে আর দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। কলেজের অধ্যক্ষ পরিমল কুমার দাস এ ব্যাপারে জানান, আশরাফুল ইসলাম এই কলেজের অবৈতনিক শিক্ষক। মনোবিজ্ঞান বিভাগ চালু হলে তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। অন্যদিকে হরিপুর দূর্গাদাস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আলী হায়দার সরদার জানান, আশরাফুল তার কলেজের একজন এমপিও ভুক্ত শিক্ষক। একজন ব্যক্তি দুই কলেজে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের ঘটনায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী মহলে নানা মুখী সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন পত্র ফাঁসের ঘটনা ঠেকাতে ও সুষ্ঠু পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণ কল্পে সরকার পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কিছু অত্যাবশকীয় আদেশ জারি করেছেন। বনপাড়া কলেজ কেন্দ্রে এইসব অত্যাবশকীয় আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ গুটি কয়েক শিক্ষকদের মতামত নিয়ে বহিরাগত শিক্ষকদের দিয়ে দায়িত্ব পালন সহ নানামুখি অনিয়মের মধ্য দিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করে আসছে। কলেজের এই অনিয়মের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন কলেজ শিক্ষকদের একাংশ। শিক্ষকেরা ঐতিহ্যবাহি এই কলেজের সুনাম অক্ষুণ রাখতে সকল প্রকার অনৈতিক ও দুর্নীতি পরিহার করে ন্যায্যতা ও শৃঙ্খলা স্থাপনের প্রতি জোর দেয়ার জন্য কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ