নাটোর প্রতিনিধি:কেউ বসতবাড়ি ,কেউ ধানী ,জমি কেউ আবার গরু ছাগল বিক্রি করে টাকা দিয়েছিল সরকারী চাকরি নামের সোনার হরিণ ধরার আশায় । চাকরি তো পায়নি উল্টো টাকা তোলার জন্য নাটোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জে.এম শাখায় মাসের পর মাস ধর্ণা দিতে দিতে স্যান্ডেলের তলা ক্ষয়ে যাওয়ার যোগাড় । খুব কম দিন আছে যেদিন নাটোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তিনতলার বারান্দাতে কান্না ভেজা চোখে কোন বেকার যুবককে দেখা যায়না । টাকা ফেরতের জন্য চাপ দিলেই নেমে আসে বাবুলের পালিত দালাল বাহিনীর অত্যাচার , নির্যাতন এবং প্রাণণাশের হুমকি ।
নাটোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জে এম শাখার উচ্চমান সহকারী বা বড়বাবু পদে কর্মরত প্রতারক আশরাফুল আলম ওরফে কার্টিং বাবুল চাকরি পাইয়ে দেয়ার ওয়াদা করে ফাঁদে ফেলে বেকারদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বাবুলের নানা ধরনের চাতুরি ও প্রতারণার কারণে তিনি কার্টিং বাবুল নামে পরিচিত। বিস্ময়কর চাতুরি হচ্ছে- আমি সাদা মনের মানুষ এটা জাহির করার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সীল প্যাড ব্যবহার বা স্ট্যাম্পে সই দিয়ে টাকা নেয়া। ভুক্তভোগী কিছু বেকার যুবক এবং অভিভাবকরা এই প্রতারকদের সম্পর্ক বিশদ বলেছে এই প্রতিবেদককে
বাবুলের হাতে প্রতারণার শিকার তেমনি একজন ব্যক্তি জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলা রাজাপুরের পূর্ণকলস গ্রামের বেকার যুবক মনিরুল ইসলাম ।
মনিরুলের বাবা মোহাম্মদ আলম জানান, ২০১৮ সালে প্রতারক বাবলুর সাথে পরিচয় হয় তাঁর । পরিচয়ের সুবাদে ছেলেকে নাটোর জেলা প্রশাসক অফিসের এম.এল.এস পদে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে । হঠাৎ করে প্রতারক ফোনে আলমকে জানান, আপনার ছেলের চাকরি হয়ে গেছে ডিসিকে টাকা দিতে হবে । ১০ কেজি মিষ্টিসহ টাকা নিয়ে আসেন । সহজ সরল মনের মানুষ আলম প্রতারকের কথা বিশ্বাস করে নিজের বসতভিটার একাংশ এবং পালিত গাভী পানির দরে বিক্রি করে ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর ২লাখ ১০ হাজার টাকা প্রদান করে । প্রতারক কার্টিং বাবলু এ টাকার বিপরীতে জেলা প্রশাসক অফিসের নিজ সীল ও স্বাক্ষর দিয়ে টাকা বুঝিয়া পাইলাম বলে রশিদ প্রদান করে । ছেলের চাকরির খুশিতে জেএম শাখায় মিষ্টি বিতরণ করে আলম । কিন্তু পরে জানতে পারেন ছেলের চাকরি তো হয়নি বরং প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন ।
তারপর থেকে টাকা ফেরতের বলে কথা বলে গত ৪ মাস ধরে ঘোরাতে থাকে বাবুল । সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের নাটোর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারী সমূদয় টাকা ফেরত দেবে বলে সোনালী ব্যাংক ,ফুলবাগান শাখা নাটোরের একটি চেক প্রদান করি । যাহার চলতি হিসাব নং -০১০০৬৮৮৯ । নির্ধারিত দিনে টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তিনি ২৭ ফেব্রুয়ারী টাকা প্রদান করবে বলে অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করেন । নির্ধারিত দিনে আলম টাকা নিতে গেলে জেএম শাখার কর্মচারী মাদকাসক্ত রাকিবুল ইসলাম তাকে প্রাণণাশের হুমকি দেন এবং মারপিট করার জন্য বিআরটিসি অফিসের কয়েকজন দালাল এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ডেকে আনেন । পরে প্রতিকার চেয়ে আলম নাটোরের জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ।
শুধু মনিরুল নয় , এমনি প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন শরিফুল ইসলাম সুমন ।বাড়ি নাটোর সদর থানার হয়বত পুর গ্রামে। নাটোর এন এস কলেজের এইচএসসি পাশ করার পর অভাবের কারণে পড়ালেখা বেশি দূর এগোয়নি । বেকার যুবক সুমন চাকরির চেষ্টার পাশপাশি একটি মাছের আড়ৎএ ম্যানেজারির চাকরির করতো । কিন্তু চাকরি যেন সোনার হরিণ। অবশেষে নাটোর জেলা প্রশাসক অফিসের বড়বাবু আশরাফুল আলম বাবুলের প্রতারণার ফাঁদে পা দিতে বাধ্য হয়েছেন এই বেকার যুবক। নিজের বসতভিটা বিক্রি করে ৮ লাখ টাকা দিয়েছেন চাকরির জন্য । এখন তিনি অন্যের বাসায় ভাড়া থেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ।
শুধু চাকরি দেওয়ার নামে নয় , বন্দুকের লাইসেন্স , ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ নানা কাজের কথা বলে বাবলু এবং তার সহযোগিরা সেবা প্রত্যাশী সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ ।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নামপ্রকাশে অনইচ্ছুক বেশ কয়েকজন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী জানান, কাটিংর্ বাবুলের চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার শিকার মনিরুল বা সুমন নয় অন্ততপক্ষে ২০ থেকে ২৫ জন বেকার যুবক এবং তাদের অভিভাবক । খুব কম দিন আছে যে দিন ডিসি অফিসের বারান্দায় প্রতারণার শিকার যুবক এবং অভিভাবকদের কান্না করতে দেখা যায় না । বাবুলের দুটি স্ত্রী এবং অনেক নারীর সাথে সম্পর্ক রয়েছে ।নারীলিপ্সু বাবুল প্রতারণার মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে সে রাজশাহী এবং নাটোরে বসতবাড়ি সহ অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন । প্রতারণার শিকার যুবকদের ভীড়ে জেএম শাখার স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে প্রতারক নাটোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জে এম শাখার উচ্চমান সহকারী আশরাফুল আলম ওরফে কার্টিং বাবুল বলেন, আমি চাকরির দেওয়ার জন্য যাদের নিকট থেকে টাকা নিয়েছি । তাদের ফেরত দেবো । সময় লাগবে । আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোন লাভ হবে না । আমার হাত অনেক বড় । সাংবাদিকের লিখে আমার কিছুই করতে পাবে না ।
নাটোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ বলেন , জেলা প্রশাসক অফিসে চাকরির নামে প্রতারণার বিষয়ে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।কোন দূর্ণীতিবাজ বা প্রতারককে ছাড় দেয়া হবে না । এ ব্যাপারে আমার জিরো টলারেন্স ।
খবর ২৪ঘণ্টা/ নই