রাশেদুল ইসলাম, নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের লালপুর উপজেলার কদিমচিলান ক্লিক মোড়ে ভয়াবহ সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ১৫ জনে। এদের মধ্যে তাৎক্ষণিক ভাবে ৯ জনের পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছিল না। পরে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন, হেলপার নীলফামারি জেলার সৈয়দপুর থানার চিনামসজিদ এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে রাজা মিয়া (২০), লেগুনাযাত্রী পাবনার ঈশ্বরদী থানার মিরকামারি এলাকার সালাম হোসের শিশু কণ্যা সুরাইয়া খাতুন (১১ মাস), পাকশি এলাকার মৃত রহিম বক্সের ছেলে সোবহান আলী (৭০), মুলাডুলি এলাকার আবুল কাশেমের স্ত্রী জহুরা খাতুন (৬০) এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার বাঘমারা এলাকার আলীমুদ্দিন হাজীর ছেলে আবু রায়হান (৪২)। এদেরমধ্যে আবু রায়হান গভীররাতে বনপাড়ার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়া নিহত একজনের পরিচয় এখনো জানাযায়নি। তার লাশ বনপাড়া হাইওয়ে থানায় রাখা আছে।
মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের নির্দেশ
মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, নছিমন, করিমন, ব্যাটারী চালিত ভ্যান, রিক্সা এবং বিআরটিএ’র রুট পারমিট বিহিন কোন গাড়ী চলাচল করতে দেওয়া হবে না। সড়ক দূর্ঘটনা রোধে জনসচেতনতা মূলক গণসমাবেশে ও নিরাপদ সড়কের দাবীতে আয়োজিত এক সমাবেশে থেকে এই ঘোষনা দেওয়া হয়। শনিবার লালপুরের কদিমচিলান ক্লিক মোড়ে সড়ক দূর্ঘটনায় ১৫ জনের প্রাণ হাণির ঘটনার পর রোববার সকালে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌর চত্বরে বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ ও
বনপাড়া পৌরসভা ওই সমাবেশের আয়োজন করে।
বড়াইগ্রামের ইউএনও আনোয়ার পারভেজের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস তার বক্তৃতায় বলেন, মানুষের জীবনকে নিরাপদ করতে প্রশাসন যা করতে চাইবে তার সবগুলো নির্বিগ্নে করতে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কোন প্রকার তদবীর করা হবে না। একই সাথে চালক-হেলপার, পথচারীকে সচেতন করতে বিভ্নি স্থানে সচেতনতা মূলক সমাবেশে করা হবে। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ প্রধান অতিথির বক্তৃতার সমর্থন জানান।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, অদক্ষ চালক, অযান্ত্রিক যান এবং অসচেতনতাই দূর্ঘঠনার অন্যতম কারন। তাই কোন অবস্থাতেই অযান্ত্রিক যাজকে মহাসড়কে চলতে দেওয়া হবে না। এছাড়া মহাসড়কের সকল হাট উচ্ছেদ করা হবে। ফুটপাথকে পথচারীর চলাচল যোগ্য করা হবে। এরজন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে। এছাড়া ২০১৪ সালে রেজুর মোড়ে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনার পরে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ সমূহের মধ্যে যেগুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা হবে।
নাটোরের পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, সড়ক চলাচল আইনের বাস্তবায়ন করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। নিরাপদ নাটোর গড়তে মোটরযান আইনে যাযা করনিয় তার সবই করা হবে। তার সাথে একই কথা বলেন হাইওয়ে বগুড়া অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান।
বনপাড়া পৌর মেয়র কেএম জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সমাপনি বক্তৃতায় ইউএনও আনোয়ার পারভেজ বলেন, বড়াইগ্রামে নিরাপদ সড়কের রোল মডেল করতে চাই। বড়াইগ্রাম এখন সবচেয়ে দূর্ঘটনা প্রবণ এলাকা হিসেবে সারা দেশে পরিচিত। আমরা এর পরিবর্তন করে সারা দেশের কাছে বড়াইগ্রামকে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত রুপে তুলে ধরতে চাই। এজন্য তিনি জনপ্রতিনিধি, জনগণ, পুলিশ প্রশাসন ও সংবাদকর্মীদের সহযোগিতা কামনা করেন।**
মহাসড়কে যান চলাচলে সচেতনতা মূলক মাইকিং
নাটোরের লালপুর উপজেলার কদিমচিলান ক্লিক মোড়ে সড়ক দূর্ঘটনায় ১৫ জনের প্রাণ হানির ঘটনার পরের দিন রোববার সকালে বড়াইগ্রাম উপজেলা সদর বনপাড়া বাজারে জনসচেতনতা মূলক গণসমাবেশ করা হয়েছে। সেই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, নছিমন, করিমন, ব্যাটারী চালিত ভ্যান, রিক্সা, হেলমেট বিহীন মোটরসাইকেল আরোহী এবং বিআরটিএ’র রুট পারমিট বিহীন যে কোন গাড়ী চলাচল বন্ধে মাইকিং শুরু হয়েছে। জেলার বড়াইগ্রাম ও লালপুর উপজেলা প্রশাসন উভয় উপজেলার সকল মহাসড়কে ওই মাইকিং এর আয়োজন করে।
বড়াইগ্রামের ইউএনও আনোয়ার পারভেজ বলেন, আমরা নিরাপদ সড়কের সকল আইন কঠোর হাতে বাস্তবায়ন করতে চাই। আকষ্মিক ভাবে আইন প্রয়োগ শুরু হলে অনেকেই বিব্রত হতে পারেন। তাই সচেতন করতে মাইকিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাইকিং শেষ হলে বিকেল থেকেই আইন প্রয়োগ শুরু হবে।
দন্ত কমিটির কাজ শুরু
দূর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পৃথক দৃুট তদন্ত কমিটি তাদের কাজ শুরু করেছেন। এরআগে শনিবার রাতে নাটোর জেলা প্রশাসন এবং হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া অঞ্চল তিন সদস্য করে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সাইদুজ্জামনকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্তি পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত এবং বিআরটিএ নাটোরের সহকারী পরিচলাক সাইদুর রহমান। অপরদিকে হাইওয়ে বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহকে প্রধান করে হাইওয়ে পুলিশের অপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পুলিশ সুপার বগুড়া সার্কেল ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সাইদুজ্জামন বলেন, তদন্ত কমিটি মাঠে নেমে গেছে। তারা তদন্তের কাজ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে দূর্ঘটনা কবলিত লেগুনার ফিটনেস এবং রুট পারমিট ছিলনা। এছাড়া অসমর্থিত মাধ্যমে জানা গেছে লেগুনা চালক দূর্ঘটনার সময় মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন।
তিনি বলেন, তদন্তে প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে।
তদন্ত চলছে। উল্লেখ্য, শনিবার বিকেলে নাটোরের লালপুর উপজেলার কদিমচিলান কিলিক মোড় এলাকায় বাস-লেগুনা মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৫ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
/জেএন