নাটোর প্রতিনিধি :
নাটোরের লালপুরের দুয়ারিয়া ও কদিমচিলান ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এক শ্রেণীর দালালের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ এ সকল দালালরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রয়োজনাতিরিক্ত টাকা নিয়ে ভূমি অফিসের কর্মচারীর মতোই কাজ করে আসছেন। আর তাই এলাকার সাধারণ কৃষক ও জমির মালিকরা তাদেরকেই অফিসের কর্মচারীই মনে করেন। অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীর চেয়ে সাধারণ মানুষ তাদেরকেই বেশী চেনে। ফলে তারা কোন কাজে সরাসরি দালালদের স্মরণাপন্ন হন। ভূমি অফিসের সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরা এখানে অনেকটা অসহায় বলে জানাগেছে।
এলাকার খেটে খাওয়া অসহায় মানুষের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে ভূমি অফিসের দালালদের কেউ কেউ হয়েছেন আঙুল ফুলে কলাগাছ। নামমাত্র পড়াশোনা জানা এ সকল দালাল অবৈধ টাকায় গড়েছেন উচ্চ বিলাশী বাড়ি গাড়ি ও যায়গা জমি। সম্প্রতি ভুক্তভুগিদের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রাহক সেজে দুয়ারিয়া ও কদিমচিলান ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ভূমি কর্মকর্তাদের মতোই চেয়ার টেবিল পেতে কাজ করছেন দালালরা। গুরুত্বপূর্ণ নথি, সরকারী আসবাবপত্র সবই তাদের হাতে। যেন তহশিলদারদের কোন কাজই নেই।
সম্প্রতি এ প্রতিনিধি বেশ কয়েকদিন দুই ভূমি অফিসে সরেজমিনে গিয়ে একই দৃশ্য তার অবলোকন করেন। অফিসে গিয়ে দেখা যায় লুঙ্গি পরা এক ভদ্রলোক (দালাল) অফিসের নথিপত্র ঘাটাঘাটি করছেন। পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার নাম আফসার আলী (৬২)। আমার বাড়ি টিটিয়া। আমি সাবেক ইউপি সদস্য। আমি এখানে বারো বছর যাবৎ কাজ করি। পারিশ্রমিক কত পান জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন আমি কোন পারিশ্রমিক পাইনা। স্ব-ইচ্ছাতেই কাজ করি। তবে উপরি কামায় যা হয় তা দিয়ে কোনরকম চা নাস্তা করি।’ তবে কোন অধিকারে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ঘাটাঘাটি করছেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি চেঁচিয়ে উঠে বলেন, আমি সাবেক ইউপি সদস্য। জনগনের সেবার জন্যই করি। আপনাদের কৈফত দেব কেন ? সাংবাদিক পরিচয় দিতেই তিনি বলেন আমার ভূল হয়েছে। কিছু মনে কনবেন না। তহশিলদার শ্রী নিখিল চন্দ্র বলেন, তারা এখানে আমি আসার আগ থেকেই কাজ করেন। আগের তহশিলদাররা যেহেতু তাদের নিয়ে কাজ করেছেন। আমার তো সেখানে বাধা নেই। তবে এখানে জনগনের কোন ভোগান্তি দেখতে পাবেন না।
কদিমচিলান ভূমি অফিসে গিয়েও একই চিত্র চোখে পড়ে। সেখানে গিয়াস ও ইদ্রিস নামের দুইজন দালাল কাজ করেন। সেদিন গিয়াস উদ্দিন অফিস কক্ষে কাগজপত্র নিয়ে কাজ করছিলেন। সাংবাদিকরা আসছে জেনেই পিছন দরজা দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান। তার দুইদিন পরেই ভূমি অফিসে চোখে পড়ে ইদ্রিস দালালের । তিনিও সাবেক ইউপি সদস্য। একটি ব্যাগে করে গ্রামে গ্রামে ঘুরে জমিয়েছেন এক গাদা জমির দলিল। সেগুলো নিয়ে এসে অফিসে কাজ করছেন।
এ বিষয়ে তহশিলদার ময়েন উদ্দিন বলেন, তারা (দালাল) যুগের পর যুগ এখানে কাজ করছেন। আমি হঠাৎ করে এসে তো তাদের তাড়িয়ে দিতে পারিনা। তাছাড়াও তারা সবাই এই এলাকার প্রভাবশালী। তাদের সাথে দ্বন্দ করলে আমার জীবনের নিরাপত্তা দিবে কে ? তবে আমার এখানে সরকারী নিয়মেই সকল কাজ হয়। কোন অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়না।
ভূমির নাম জারি (নাম খারিজ) করতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, জমির নাম খারিজের জন্য ২/৩ হাজার টাকা নেওয়া হয়। প্রকৃত খরচ কত তারা তা জানেন না। আর সে টাকা দালালদের হাতেই দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কদিমচিলান ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম রেজা মাষ্টার বলেন, আমার ইউনিয়নের সাধারণ কৃষকরা জায়গা জমি নিয়ে ভোগান্তি পোহায়। দালালদের অত্যাচারে তারা আজ অতিষ্ঠ। এই ইউনিয়নের ভূমি অফিসকে দালাল মুক্ত করতে আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, আমার কাছে কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে