নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও বনপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি সানাউল্লা নুর বাবু সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের হাতে প্রকাশ্যে দিবালোকে খুন হওয়ার মামলার চার্জশীট ৮ বছরেও দেয়া হয়নি। ছয়বার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল হওয়ার পর বাদী নিহতের স্ত্রী মহুয়া নুর কচি এখন জানেনই না বর্তমানে কোন কর্মকর্তা এই মামলাটি তদন্ত করছেন।
এবার মামলার প্রধান অভিযুক্ত দাবী করেছেন, ‘বাবু বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণেই খুন হয়েছেন।” স্থানীয়, দলীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ২০১০ সালের ৮ অক্টোবর বড়াইগ্রাম উপজেলা সদর বনপাড়া বাজারে বিএনপির পূর্ব নির্ন্ধারিত মিছিলে হামলা চালিয়ে মহাসড়কের উপরে কুপিয়ে ও পিটিয়ে বাবুকে হত্যা করা হয়। এ সময় আর টিভির নাটোর জেলা প্রতিনিধি শেখ তোফাজ্জল হোসেনসহ চারজন সাংবাদিক-ক্যামেরাপার্সন এবং বিএনপির অন্তত ২০ জন আহত হন। এ ঘটনায় বাবুর স্ত্রী মহুয়া নুর কচি আওয়ামী লীগের ২৭ নেতাকর্মীসহ ৪৭ জনকে অভিযুক্ত করে পরের দিন বড়াইগ্রাম থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার আসামিরা বর্তমানে সকলেই জামিনে মুক্ত আছেন।
এদিকে, সোমবার সানাউল্লা নুর বাবুর মৃত্যুবার্ষিকীতে দলীয় কোন কর্মসূচি না থাকলেও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কবর জিয়ারত, মিলাদ মাহফিল ও কাঙালী ভোজের আয়োজন করা হয়েছে। মহুয়া নুর কচি বলেন, সেদিন সানাউল্লা নুর বাবুর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপির সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে বনপাড়ায় স্বাগত জানাতে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে বনপাড়া বাজারে গেলে সরকারদলীয় নেতা কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে হামলা করলে বাবু, রফিক সরদার ও বিএনপি নেতা জামালউদ্দিন আলীসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। পরে বনপাড়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কিছুক্ষণ পরই বাবু মারা যান। পরদিন মহুয়া নুর কচি বড়াইগ্রাম থানায় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বর্তমানে বনপাড়া পৌরসভার মেয়র কে এম এ জাকির হোসেনকে প্রধান করে ৪৭ জনের নামে একটি মামলা করেন। বাবু হত্যা মামলার তদন্ত প্রথমে ডিবি পুলিশ ও পরে সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু গত ৮ বছরেও মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি।
মহুয়া নুর কচি বলেন, ৮ বছরেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় তিনি মামলায় বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা কে আছেন তিনি জানেন না। কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করেন না।
বনপাড়া পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিক সরদার বলেন, সরকার নিজ দলীয় আসামিদের বাঁচাতে বাবু হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিচ্ছে না। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন তাঁরা।
এ মামলায় প্রধান অভিযুক্ত বনপাড়া পৌরসভার মেয়র কে এম জাকির হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘বাবু বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণেই খুন হয়েছেন। আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী এ ঘটনায় জড়িত নেই। বাবু আহত হওয়ার পরে তাঁকে বনপাড়া পাটোয়ারী ক্লিনিকে ও পরে মাইক্রোবাসে অহেতুক বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে সাড়ে চার ঘণ্টা পর রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। মাইক্রোবাস যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বাবু হত্যার রহস্য বেরিয়ে আসবে।’
নাটোরের পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। চতুর্থবারে দায়িত্ব পাওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজশাহীর সিআইডির পুলিশ সুপার ড. নাজমুল ইসলাম জানান, মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। অল্প দিনের মধ্যেই আদালতে চার্জশীট দেয়া হবে।
খবর২৪ঘণ্টা, /জেএন