খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জ শহরের কালীরবাজারের স্বর্ণ মার্কেট থেকে নিখোঁজের ২১ দিন পর স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষের টুকরো টুকরো লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় শহরের আমলপাড়া এলাকার একটি ভবনের সেপটিক ট্যাংক থেকে ওই লাশ উদ্ধার করা হয়।
কয়েকটি বস্তায় ভরা ওই লাশ ইতিমধ্যে পচে-গলে গেছে। এ ঘটনায় নিহত প্রবীরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী পিন্টু হালদার ও তার সঙ্গী বাপন ওরফে বাবুকে আটকের পর তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওই লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে হত্যার মূল কারণ এখনও জানা যায়নি।
এর আগে প্রবীরের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে রহস্যের বেড়াজালে পড়ে পুলিশ। তিনি অপহরণ হয়েছেন না স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছেন তা নিয়ে চলে ব্যাপক ধূম্রজাল। ইতিমধ্যেই ১২টি বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে প্রবীরের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা নেয়া হয়।
পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে ধারণা করে, প্রবীরের অপহরণে জড়িতরা তারই ঘনিষ্ঠ। তাদের কেউ চৌকস আইটি এক্সপার্ট। যা নিয়ে প্রথমাবস্থায় হিমশিম খেতে হয়েছে তদন্তকারীদের। এ ব্যাপারে পুলিশ মুখ না খুললেও অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহরের কালীরবাজার এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষ প্রায় ২ যুগ ধরে পারিবারিকভাবে স্বর্ণ ব্যবসা করে আসছেন। ১৮ জুন রাতে প্রবীর চন্দ্র ঘোষের মোবাইলে কল এলে তিনি রাত সাড়ে ৮টায় বাসা থেকে বের হয়ে কালীরবাজারে আসেন। ওইদিন তার স্বর্ণের দোকানটি বন্ধ ছিল।
রাত সাড়ে ১০টা থেকে প্রবীরের মোবাইলে ফোন দিয়েও তাকে পাচ্ছিলেন না পরিবারের কেউ। সর্বশেষ রাত ১টা ১৪ মিনিটে ওই মার্কেটের অপর ব্যবসায়ী গোপীনাথের মোবাইল থেকে প্রবীরকে ফোন দিলে সেটি রিসিভ করা হয়। ১১ সেকেন্ড রিসিভ থাকলেও অপর প্রান্ত থেকে কারও কথা শুনতে পাওয়া যায়নি।
এরপর থেকে তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া গেলে পরের দিন ১৯ জুন প্রবীরের বাবা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ২১ জুন বিপ্লব চন্দ্র ঘোষের মোবাইলে তার বড় ভাই নিখোঁজ প্রবীরের ব্যবহৃত মোবাইল থেকে একটি ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস) দেয়া হয়।
যেখানে লেখা ছিল- ‘কালীরবাজারের রাঘোব বোয়ালরা এর সঙ্গে জড়িত। উনাকে বিবি রোড (বঙ্গবন্ধু রোড) থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। ওকে পেতে মুক্তিপণ লাগবে ১ কোটি টাকা। চলে আসবে গুলিস্তান ফ্লাইওভারের নিচে। এ ক্ষুদে বার্তা পাওয়ার পর বিল্পব চন্দ্র ঘোষ সদর মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন।
১৮ জুন কালীরবাজার স্বর্ণ মার্কেট ও বঙ্গবন্ধু সড়কের একটি বেসরকারি ব্যাংকের সিসি টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, প্রবীর চন্দ্র ঘোষ রাত ৯টা ২৫ মিনিটে কালীরবাজার রোড থেকে মূল সড়কে বেরিয়ে আসছেন। এরপর সর্বশেষ তাকে জাতীয় পার্টির কার্যালয় ঘেঁষা গলি দিয়ে রাত ৯টা ৩১ মিনিটে বের হতে দেখা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশ প্রবীরের বন্ধু পিন্টুকে প্রথমে আটক করে ও তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বাপন ওরফে বাবুকে আটক করে। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সোমবার দুপুরে নিখোঁজ প্রবীর চন্দ্র ঘোষের ব্যবহৃত মোবাইলটি পিন্টুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ধার করা হয়। রাত ১১টার দিকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পিন্টু স্বীকার করে প্রবীরকে সে হত্যা করেছে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, আমরা বিষয়টির খুব কাছাকাছি ছিলাম। অবশেষে সদর থানা ও জেলা ডিবির যৌথ তদন্তে এর রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। তিনি জানান, মামলাটি ২ দিন আগে সদর থানা থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/জেএন