1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
নস্টালজিয়াঃ মায়ার বাধন -৯ - খবর ২৪ ঘণ্টা
বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন

নস্টালজিয়াঃ মায়ার বাধন -৯

  • প্রকাশের সময় : বৃস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯

মোঃ মোস্তফা হারুন বরেন্দী:  গ্রামের বাড়িতে বাইরের ঘড় বলতে যা বোঝায় তাহলো শহরের ড্রয়িং রুমের মত।গ্রামে আগে মুল বাড়ীর বাইরে ফাকা জায়গায় একটি টিনশেড বেড়া ঘেড়া একটি ঘড় থাকতো।যেখানে সেই বাড়ীর লোকজনের সাথে কোন অতিথি দেখা করতে এলে আগে সেখানে বসানো হতো।সেখানেই চা নাস্তার কাজ সারানো হতো। বাড়ীর পুরুষ ব্যাক্তি সেখানে সাক্ষাৎ দিতেন।মেয়েরা বাড়ীর ভিতর যেতে পারতো।

নানার বাড়ীর বাইরের ঘড়ের সাথেই ছিলো একটি পুকুর। সেই পুকুরে মাছ চাষ হতো,যা দিয়ে মামাদের বাড়ীর মাছের চাহিদা মিটতো।মাঝেমধ্যে বাড়ীর পুরুষেরা গোসল করতো। আবার পাট চাষের আবাদ উঠলে সেই পুকুরেই পাট পচনের জন্য জাক দেয়া হতো। আমি সেই পুকুরেই বড়শী গেথে সেই বাইরের ঘড়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম মনে নেই।হঠাৎ আমার মামাতো ভাই চুরু বাইরের ঘড়ে এসে আমাকে ডেকে তুলে বললেন, এখানে একা একা ঘুমাচ্ছিস কেনো?

বললাম,পুকুরে বড়শি ফেলে ঘুমিয়ে পড়েছি।পুকুরের দিকে তাকিয়ে চুরু ভাই বললেন কই তোর বড়শি, দেখা যাচ্ছেনা। তড়িঘড়ি করে উঠে বসলাম,চুরুভাইয়ের সাথে পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখি ছিপটি পুকুরের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চুরুভাই বললেন, তোর বড়শিতে মাছ আটকেছে।বড় মাছ মনে হয়।ছিপ মাটি থেকে খুলে নিয়ে মাছ মাঝ পুকুরে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। আমি ছোট বিধায় চুরুভাই বললেন, তুই দাড়িয়ে থাক।

আমি বড়শি নিয়ে আসছি,বলেই লুংগি মালকোছা মেরে পুকুরে ঝাপ দিয়ে সাতার কেটে মাঝ পুকুরে পৌঁছে ছিপ ধরে টেনে পাড়ে নিয়ে আসলেন। এরপর আগে নিজে ডাংগায় উঠে পরে ছিপ টেনে তুললেন এবং ছিপের সাথে একটা বিরাট আকারের মাগুর মাছ উঠে আসলো। সেই সময়ে আফ্রিকান মাগুর পাওয়া যেতো না। এই মাগুর মাছ মনে হয় পুকুরের অতি পুরাতন বয়স্ক মাছ ছিলো, এতদিন ধরা পড়েনি।মাছের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় আধ হাত লম্বা। মুহুর্তেই খবর ছড়িয়ে পড়লো বড় মাগুর মাছ ধরা পড়ার কাহিনী।

মা ও নানিও ছুটে আসলেন। নানি আমাকে খুব বেশি ভালবাসতেন নাতনীদের ভিতর। তিনি খুশি হয়ে আমাকে কোলে তুলে চুমো দিয়ে আদর করে বললেন,দেখ হামিদা (আমার মা) তোর ব্যাটা কি কাজ করেছে।নানাভাই মাছ মেরেছে।আমার জীবনে এই মাছ মারাটাই ছিলো প্রথম মাছ শিকার করা। নানি খুশি হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুই কি দুপুরের ভাত খাইছিস?জবাবে বললাম না খাইনি।

তখন বললেন, তাহলে পরে খাস।আমি এই মাছ রান্না করে দিচ্ছি তারপরে তোরা ভাইবোন মিলে খাবি। আমাকে কোল থেকে নেমে দিয়ে নানি মাছ নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন। মাছ কাটলেন,পরিস্কার করলেন,রান্না করলেন। এরপরে ভাত রেডি করে আমাকে কোলে বসিয়ে মাছ দিয়ে ভাত খাইয়ে দিতে লাগলেন।মনে হচ্ছিলো, আমার চেয়ে নানিই বেশি আনন্দ পাচ্ছে।সেই আদরের নানি আজ বেচে নেই। আমার বড় মেয়ে যখন ময়মনসিংহের মহিলা Girls Cadet College এর ক্লাস সেভেনের ছাত্রী ছিলো সেসময় নানি বয়স জনিত কারণে মারা যান।তিনি শতায়ু মহিলা ছিলেন।

আমার পোস্টিং প্লেসেও তিনি আমাকে দেখতে যেতেন,থাকতেন।যখন নানিকে হাত খরচের জন্য টাকা দিতাম।তখন মাকে বলতেন,হামিদা তোর বেট্যা কামাই করতে শিখেছে।আমার সব দেয়াকেই নানি পজেটিভলি নিতেন এবং আনন্দ পেতেন।আর নাত বঊয়ের প্রশংসায় পঞ্জমুখ থাকতেন। শনিবার ও মংগলবার করে গ্রামে হাটের দিন।মামারা কৃষিজীবি।ঐদুদিন কৃষিপন্য হাটে নিয়ে যেতেন,বিক্রি করতেন।কোন কোন মামা হাটের দিন পশরা সাজিয়ে দোকান খুলে বসতেন।বেচাকেনা শেষে সপ্তাহের বাজার করে নিতেন।হাটের দিন ভাল খাবার বিশেষ করে মাংসের আয়োজন বেশি থাকতো।

হাটের এই দুদিন মামাদের সাথে হাটে যেতাম।হাট ঘুরে ঘুরে দেখতাম।মাছের হাট,গরুর হাট,ছাগলের হাট,হাস মুরগীর হাট,কাচাবাজারের হাট,মিস্টির হাট ইত্যাদি প্রত্যেক অংশই ঘুড়তে মজা পেতাম।তারপর মামাদের কাছে চাদাবাজী করতাম।প্রত্যেক মামার কাছে গিয়ে হাত পাততাম, পয়সা দাও।সওদা কিনে খাবো।কেউ চার আনা,কেউ আট আনা,কেউ একটাকা করে দিতেন।তাদিয়ে আমি ও ইমিডিয়েট ছোট ভাই মুড়ি মুড়খি,মিস্টি,লাড্ডু,গজার ইত্যাদি রকমারি খাবার কিনে খেতাম এবং ঘুরে বেড়াতাম।কিছু সওদা ঠোংগায় ভরে বোনের জন্য, মায়ের জন্য নিয়ে যেতাম। রাতে হাট থেকে মামারা ফিরে এলে রান্না শুরু হতো। রান্নাবান্না শেষে নানি সবাইকে একসারিতে মাদুরের উপর বসায়ে খেতে দিতেন। আমাদের খাওয়ার পর বড়রা খেতে বসতেন।তারপর রাতে শোবার পালা।আমি বেশির ভাগ সময়ই নানির সাথে ঘুমাতাম এবং গল্প শোনাতে বলতাম।

নানি তখন রাজরাজাদের গল্প,ভুতের গল্প শোনায়ে আমাদের ঘুমি দিতেন। নানির বাড়ীতে আমরা মজা পেতাম বেশি।কারন, তার আদর স্নেহ আমাদের আচ্ছাদিত করে রাখতো, যেটা পেতাম না দাদীর কাছে।দাদী একটু গুরু গম্ভীর ছিলেন।নাতিদের সাথে মাখামাখি সম্পর্ক গড়ে তুলতেন না।একটু দুরুত্ব থেকে যেতো বেশি।দাদী বেশি আদর করতেন আমার জ্যাঠার বড় মেয়ে কোহিনূর আপা ও আমার বড়বোন শিমু আপা,ফুফাতো বোন মরজিনা আপাদেরকে।তাই আমাদের সাথে দুরত্ব থাকতো এবং দাদীর বাড়ীতে যাওয়া পছন্দ করতাম না।অনেক দিন পর মনে পড়লে আকস্মিক আদর করতেন, গল্প করতেন,যাতে আমরা তৃপ্ত হতাম না। অনেক দিন নানার বাড়ীতে সময় কাটলো। এবার বাবা সংবাদ পাঠালেন তিনি বেলকুচি তে সরকারি বাড়ীতে আমাদেরকে নিয়ে যাবেন।সপ্তাহ খানেকের ভিতর প্রস্তুত থাকতে। (চলবে)

মোঃ মোস্তফা হারুন বরেন্দী, সিনিঃ সহকারী পুলিশ সুপার

“কাহিনীটি মোঃ মোস্তফা হারুনের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া”.

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST