1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
নস্টালজিয়াঃ মায়ার বাধন -৫ - খবর ২৪ ঘণ্টা
বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪০ পূর্বাহ্ন

নস্টালজিয়াঃ মায়ার বাধন -৫

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৯

মোঃ মোস্তফা হারুন বরেন্দী: আমার জন্ম বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলার চৌপিনগর গ্রামে নানার বাড়ীতে হলেও জীবন শুরু হয় বাবার কাজের জায়গা ঢাকা থেকেই। তখন আমি আর আমার বড় বোন শিমু ছাড়া কেউ ছিলনা।আমরা মুসলিম হাইস্কুলে লিখা পড়া শুরু করি।দুই ভাইবোনের ভিষণ মিল।যেখানে যেতাম একসাথে যেতেম,একসাথে খেতাম,একসাথে খেলতাম।আমরা মুগদাপাড়ায় একটি ভাড়া করা বাসায় থাকতাম।বাবার অফিস ছিল মতিঝিল রুপালী ব্যাংকের হেড অফিসে।

আমরা দুইভাইবোন ছাত্র জীবনে মুকুল ফৌজ করতাম।বাবা অফিস থেকে ফিরে এসে আমাদের দুজনকে নিয়ে পড়াতে বসতেন।আমি ক্লাস টু এবং বোন ক্লাস থ্রিতে পড়তো। বাবা খুব রাগী টাইপের মানুষ ছিলেন।যখন পড়াতে বসতেন বাবার হাতে থাকতো একটি লাঠি।কখনো লাঠি না পেলে পায়ের সেন্ডেল ব্যাবহার হতো আমাদের উপর। বাবা পড়াতে বসলেই জানা জিনিস ভুলে যেতাম।বাবা নাছোরবান্দা পড়া আদায় না করা প্রযন্ত খাবার দিতেন না।জমের মত ভয় করতাম।মা ছিলেন আমাদের রক্ষাকারী শক্তি।যখন পড়া না পারার কারণে বাবা অগ্নিমূর্তি ধারণ করে তেড়ে আসতেন।মা দৌড়ে এসে আমাদের প্রটেকশন দিতেন।মাও মাঝেমধ্যে বাবাকে ভিষণ ভয় করতেন।কত যে লাঠির আঘাত ও সেন্ডেল দিয়ে মার খেয়েছি তার কোন হিসাব নেই।

একদিন আমাদের মুকুল ফৌজের এক অনুস্টান ছিলো। মা বাবা কে না বলে দুই ভাইবোন মুকুল ফৌজের অনুস্টানে মান্ডা এলাকায় যাই।বিকালের দিকে গিয়ে মজা পেয়ে বাড়ী ফেরার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। রাত ৯ টা বেজে চলেছে,বাড়ী যাবার কোন তাড়া নেই। মুকুল ফৌজের লিডার আমাদেরকে আস্বস্ত করেছিলেন প্রত্যেককে বাড়ী পৌঁছে দিবেন।

এদিকে অধিক রাত হওয়ার কারণে বাবা মা ভিষণ চিন্তায় পড়ে গেছেন।তারা হন্নে হয়ে খোজ করতে করতে হয়রান হয়ে গেছে।এত ছোট দুটি ছেলেমেয়ে কোথায় গেলো?
অবশেষে বাবা তার এক বন্ধুর কাছে জানতে পারলেন,আমাদেরকে মুকুল ফৌজদের গ্রুপের সাথে র‍্যালি করে যেতে দেখেছেন।বাবা খোজ নিয়ে জানতে পারলেন আমরা মান্ডায় অনুস্টানে আছি।
বাবা খোজ করার জন্য রাতেই মান্ডায় চলে গেলেন।আমাদের লীডারের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হলেন এবং লীডার বাবাকে আমাদের কাছে নিয়ে এলেন।বাবাকে দেখে আমারা উচ্ছাসিত।মনে করলাম বাবা আমাদের অনুস্টান দেখতে এসেছেন।বাবা আমাদের বললেন চলো অনেক রাত হয়েছে।বাড়ী যেতে হবে।আমরা বললাম বাবা এখানে রাতের খাবার আয়োজন আছে।আপনিও থাকেন একসাথে খেয়ে তারপরে যাবো।

বাবা উত্তরে বললেন, আরে তোমাদের জন্য অফিস থেকে আসার সময় অনেক অনেক ভাল ভাল খাবার নিয়ে এসেছি।এখানে খেলে ওসব খাবে কে।খাবারের লোভ সামলাতে পারলামনা। আমরা দুজন লীডারে অনুমতি নিয়ে বাবার হাত ধরে বাড়ীর পথে হাটা শুরু করলাম।পথে যেতে যেতে বাবাকে বহুবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম আমাদের জন্য কি খাবার এনেছেন।উত্তরে বাবা বলেছিলেন চলো বাড়ী গেলেই দেখতে পাবে।যাহোক অপেক্ষার পালা শেষ হলো। বাসায় পৌঁছে মার কাছে দৌড়ে গেলাম।আমাদের খাবার কৈ?

ইতিমধ্যে বাবা পায়ের জুতা খুলে আমাদের দুজনাকেই বেদম পেটাতে পেটাতে বলছেন এটাই তোমাদের উত্তম খাবার।আমারা তো কান্নায় অস্থির। কিছুক্ষণ পর মা এসে আমাদের রক্ষা করতে গিয়ে তিনিও জুতার কয়েক ঘা খাবার খেলেন।শেষ প্রযন্ত মা আমাদেরকে রক্ষা করলেন।আদর করে আমাদের বুঝালেন,কান্না থামার পর খেতে দিলেন।
মা,আমাদের তারাতাড়ি ঘুমাতে বললেন এবং সতর্ক করলেন,জেগে থাকলে তোমাদের বাবা আবার রেগে যেতে পারেন।
বাবা সেই রাতে রাগে ক্ষোভে রাতের খাবার খেলেন না।মাকে বোকাঝোকা করলেন,তোমার কারনেই ওরা একাকী কাউকে না বলে যাওয়ার সাহস পেয়েছে।মাও ভয়ে কোন জবাব দিলেন না।বাবা খায়নি বলে মাও না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।এরপর থেকে আমি অন্তত বাবার বিনা অনুমতিতে কোথাও যেতাম না।পিতামাতার শাসন ব্যাবস্থা ছিলো খুব কঠিন।

নস্টালজিয়াঃ মায়ার বাধন-২।

১৯৬৬ সালে আমার আরেক ভাইয়ের জন্ম হলো নানার বাড়ীতেই। আমরা দু ভাইবোন আরেকজন খেলার সাথী পেলাম।স্কুল থেকে ফিরেই তাকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকতাম।কোলে নিয়ে বেড়াতাম,আদর করতাম।ভাইটি বেশ নাদুসনুদুস ছিলো। তখনকার দিনে তো আর ডানো,সেরিলাক এসব পাওয়া যেতোনা।তখন বাচ্চাদের খাওয়ানো হতো ছোট কাসার বদনার নলে ভিজা কাপড় দিয়ে পেচিয়ে সাগুদানা অথবা শটি ঘাটি।এটাই ছিল বাচ্চাদের উত্তম খাবার।পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ।

মা বলতেন শিশু অবস্থায় আমি নাকি ভিষণ সাগুদানা পছন্দ করতাম,যার গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষায় বলা হতো সাবুদানা।এতই নাকি পছন্দ করতাম যে আমাকে তিন বেলাই সাবুদানা খেতে দিতে হতো, তানাহলে ভিষণ কান্নাকাটি করতাম।আমার নাম রাখার সময় চিন্তায় পড়ে গেলেন ডাক নাম কি রাখা যায়।অনেক ভেবে বাবা নিউটনের মত ইউরেকা বলে ফেলেছিলেন পেয়েছি।যেহেতু ছেলে আমার সাবুদানা পছন্দ করে, তাই ওর ডাক নাম রাখা হলো সাবু।সেই থেকে আমি সাবু হয়ে গেলাম। যেদিন বাবা তার বন্ধুদের নিয়ে রাতে তাস খেলতে বসতেন,সেদিন আমাদের ভাইবোনের ভিতর পড়াভীতি থাকতো না।আমারা যেনো স্বাধীনতার স্বাদ পেতাম।ইচ্ছামত স্কুলের পড়া শেষ করে,খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। বাবা তাসের ব্রিজ খেলার ওস্তাদ ছিলেন এবং সমান তালে দাবা,ব্যাডমিন্টন খেলাতেও তার দক্ষতা ছিল খুব বেশি। বাবার তখনকার বন্ধুদের ভিতর ক্লোজ বন্ধু ছিলো বাই সাইকেল ব্যাবসায়ী হাওরা সাইকেল স্টোরের মালিক আহম্মেদ চাচা ও তার অন্যান্য ভাই,কৌতুক অভিনেতে রানু,আরও অনেকেই।সেই সুত্রে বাবার বন্ধুদের পরিবারের সাথে আমাদের সখ্যতা ছিলো অনেক বেশি।মাঝেমধ্যে এক পরিবার আরেক পরিবারকে দাওয়াত করতো।

তাতে বাবার বন্ধুদের ছেলেমেয়েদের সাথে আমাদেরও বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। সেদিনকার আন্তরিকতার কথা ভোলা যায়না।বাবার বন্ধুদের কোন পরিবারে ভাল খাবার আয়োজন হলে সব পরিবারকে সংবাদ দিয়ে একত্রিত করা হতো এবং কি মজা করে সবাই ভোজন,হাসি তামাসা করতাম।সেই দিনের কথা ভোলা যায়না।এখন তো পাশের বাড়ীর ফ্লাটে কে থাকে তাও প্রতিবেশী জানেনা,খোজও নেয়না।প্রতিবেশীদের ভিতর আন্তরিকতা নেই। সবাই যেনো যান্ত্রিক মানব হয়ে গেছে। স্নেহ,মায়া,মমতা বনবাসে চলে গিয়ে হিংসাত্মক মনের প্রতিবেশীর সৃস্টি হয়েছে। দেখেছি,বাবাদের বন্ধুদের ভিতর কারো বিপদ হলে সাহায্যের জন্য সব বন্ধুই এগিয়ে আসতো।সহজেই সমাধান হয়ে যেতো।বন্ধুদের স্ত্রীরাও মনে হতো মায়ের পেটের বোনের মত।সবাই সবার ছেলেমেয়েদের নিজের ছেলেমেয়েদের মতই ভালবাসতেন। কৈ সেই সোনালী হারিয়ে যাওয়া দিনগুলি। পড়াশোনা, খেলাধুলা করেই শৈশবকালের সোনালী দিনগুলি পার করে দিয়ে এসেছি।আর কি ফিরে পাবো সেইদিন। বিকাল বেলা হলে কোন কোন দিন বাবার সাথে হাটতে হাটতে চলে যেতাম কমলাপুর ওভারব্রীজে।

ওভার ব্রীজে বা ব্রীজের নীচে সবুজ শ্যামল ঘাসের উপর বসে বাবার সাথে বাদাম চিবাতাম বা আইস্ক্রীম খেতাম।কোন কোন সময় মাও আমাদের সাথে চলে আসতেন। ওভার ব্রীজ থেকে নীচে ট্রেন যাওয়া দেখতে খুব ভাল লাগতো,মাঝেমধ্যে দুস্টমী করে চলন্ত ট্রেনে থুথু নিক্ষেপ করতাম।এভাবেই স্মৃতিময় শৈশবকাল অতিবাহিত করতে লাগলাম। ১৯৬৯ থেকে রাজনৈতিক অংগন বেশ গড়ম হতে শুরু করলো। বাবাদের বয়সী সবাইকেই রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে আলাপ আলোচনা করতে দেখতাম।তারা দলীয় অফিসেও যাতাযাত শুরু করে দিল।মাঝেমাঝে বাবা এসে গল্প করতো মায়ের সাথে ৩২ নং এ বংগবন্ধুর বাসায় গিয়ে কি সব আলাপ আলোচনা করে এসেছে।তখন ৩২ নং ক্লিয়ার বুঝতাম না।একদিন বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম বাবা ৩২ নং কি?উত্তরে বাবা জানালেন ৩২ নং হলো ধানমন্ডির একটি রাস্তার নাম্বার, এই ৩২নং রোডেই আওয়ামী লীগ প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের বাসা।সেখানে দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা আলোচনার জন্য যেতেন,কথা বলতেন,সিদ্ধান্ত নিতেন।৩২নং বাসাটি ছিল আওয়ামী লীগ এর রাজনৈতিক সকল পদক্ষেপের কেন্দ্রবিন্দু।

১৯৭০ সালে ভোট হবে।সবার মাঝে চলছে ব্যাস্ততা।ঢাকা শহর প্রতিদিন মিছিল মিটিংয়ের শহরে পরিনত হলো।বাবাকেও অফিস শেষে মিছিল মিটিং নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে দেখেছি।তাদের ভিতর কেমন যেতো একটা প্রতিজ্ঞা কাজ করছিলো পশ্চিম পাকিস্তানকে ভোটে হারাতেই হবে।তখন ইস্ট পাকিস্তানে বংগবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ ছাড়া ও ন্যাপ মোজাফফর গ্রুপ ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দলের নাম শোনা যেতো না।টি এস সি তে ছাত্রছাত্রীদের মিছিলে সরগরম থাকতো।বাবার সাথে বেড়াতে গেলে এসব চোখে পড়তো। ১৯৭০ সাল জাতীয় পরিষদের নির্বাচন শুরু হলো।দেশের আপামর জনতা ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছে এবং নৌকায় সীল মেরে চলে আসছে।সবার মদ্ধ্যে কেমন যেনো একটি উত্তেজনা বিরাজ করছে,যে করেই হোক বংগবন্ধুকে জিতাতেই হবে।গোটা পাকিস্তানকে শাসন করবে ইস্ট পাকিস্তান। ওয়েস্ট পাকিস্তানের অন্যায়,অত্যাচার, শোষণ থেকে সবাই বাচতে চায়।সবার যেনো একটি আশা শেখ মুজিব সবার আকাঙ্ক্ষার একটি মাত্র পথ।বিপুল ভোটে বংগবন্ধু সাধারণ পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে তার দল আওয়ামী লীগ জয় লাভ করেছে।তখন আমার বয়স ছিলো ৬ বছর, বড় বোনের বয়স ৮ বছর,আরেক ভাইয়ের বয়স ছিলো ৪ বছর। ওয়েস্ট পাকিস্তান আওয়ামী লীগ এর বিজয় নিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে যতই তালবাহানা শুরু করছে,ততই ঢাকার রাজপথ,সোহারীউদ্যানে মিছিলে মিটিংয়ে সরগরম হতে লাগলো।

নস্টালজিয়াঃ মায়ার বাধন- ৩

১৯৭০ সাল বছর জুড়েই পশ্চিম পাকিস্তান ও ইস্ট পাকিস্তান এর ভিতর ক্ষমতা দেয়া নেয়া নিয়ে ইদুর বিড়াল খেলা চলতেই থাকলো।১৯৭১ সালের প্রথম থেকেই আচ করা যাচ্ছিলো দেশে কিছু একটা ঘটনা ঘটবে।বাবা তেমনই কিছু আচ করতে পেরে সিদ্ধান্ত নিলেন মা সহ তিন ভাইবোনকে নানার বাড়ীতে নিরাপত্তার জন্য পাঠিয়ে দিবেন।এই সংবাদে তো ভিষণ খুশি নানার বাড়ীতে যাব,মামাতো ভাইবোনদের সাথে খেলাধুলা করবো। বেশ মজা হবে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাবা ছুটি নিয়ে আমাদেরকে নানার বাড়ীতে রেখে তিনি আবার ঢাকায় একাকী ফিরে গেলেন।নানার বাড়ীতে বেশ মজার দিন কাটতে লাগলো। মা আমাদের পড়ার জন্য বাসায় প্রাইভেট পড়ার জন্য রজিবুল মাস্টারকে রেখে দিলেন।

আমরা বাসায় শুধু প্রাইভেট পড়ি। ১৯৭১ সালের কিছু স্মরনীয় কথা যা আজকেও ভুলতে পারিনি,তখন আমার বয়স ৭ বছর।যুদ্ধ শুরু হয়েছে।বাবার সাথে আর দেখা হলোনা।বাবা মুক্তি যুদ্ধ্যে চলে গেছেন।তিনি ভারতে ট্রেনিং নিয়ে দেশে ফিরে বিভিন্ন অপারেশনে নিজেই অগ্রনী ভুমিকা পালন করতে লাগলেন।বাবার সাথে বগুড়ায় যারা কাজ করতেন তারা হলেন মুক্তিযোদ্ধা তপন,রানা,খসরু, ফারুক সহ অনেকেই।আমরা তখন মায়ের সাথে নানীর গ্রামের বাড়ি শাজাহানপুর উপজেলার চুপিনগর গ্রামে।আমাদের গ্রাম যখন হানাদের দ্বারা আক্রমন হতো তখন আমরা মামাদের নির্মিত মাটির ব্যাংকারে আশ্রয় নিতাম।মাঝে মধ্যে গ্রামের বড়দের নিরদেশে, মুক্তি যোদ্ধাদের খাবার ও পানি পোটলা বেধে খালি গায়ে হাফ প্যান্ট পড়ে মাথায় করে ঝুকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা দের নিকট নিয়ে যেতাম।আমরা তখন বুঝতে পারিনি এই কাজটি জীবনের জন্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ। আমারা শিশুর দল বেশ আনন্দ পাচ্ছিলাম।অনেক দিন বাবাকে দেখিনা,একদিন মাকে জিজ্ঞাসা করলাম,মা বাবা আসে না কেন?উত্তরে মা বলতেন দেশ স্বাধীন হলে তোর বাবা আসবেন।তখন বুঝতাম না দেশ স্বাধীন কি।

রাতে মা আমাদের ভাই বোনদের বাবার কথা,যুদ্ধের কথা,হানাদের গল্প শুনিয়ে ঘুমিয়ে দিতেন।একদিন রাতে ভাইবোন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম ব্যাংকারে।খুব ভরে ঘুম ভেংগে গেল।দেখলাম আমাদের কাছে স্টেনগান হাতে উস্ক খুস্ক চুলে লম্বা দাড়িওয়ালা এক লোক মার সংগে কথা বলছে।লোক টিকে দেখে আমরা ভয়ে আবার লুকিয়ে পড়লাম।তখন মা আমাদের ডাকলেন এবং বললেন ভয়ের কিছু নেই এটা তোমাদের বাবা,রাতে তোমাদের দেখতে এসেছে।বাবা মায়া ভরা চোখে আমাদের কাছে ডাকলেন,আমরা তখনও বিস্বাস করছিলাম না।আমাদের বাবা দেখতে এমন কাল হয়েছে কেন?বাবার তো বড় চুল ও বড় দরবেশদের মত দাড়ি ছিল না।অবাক নয়নে বাবার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছি।

বাবা আমাদের মনের অবস্তা বুঝতে পেরে কাছে এসে আমাদের। বুকে জড়িয়ে ধরে চুমো দিয়ে আদর করে আমাদের ভয় ভাংগালেন।বললেন আমার সময় নেই আমি এখনি চলে যাব।তোমাদের একনজর দেখে গেলাম,আবার কবে দেখা হবে জানিনা।সকাল সকাল পান্তা ভাত খেয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।যুদ্ধ যখন শেষ হল বাবা ফিরে এলেন।বাবা আবার সরকারী চাকুরীতে যোগদান করে ১৯৭৫ সালে আমাদের নিয়ে পোস্টিং প্লেস রাজশাহীতে নিয়ে চলে গেলেন।পরবরতীতে জীবনে অনেকবার আব্বার যুদ্ধের কাহীনি তার মুখ থেকে শুনতাম।দেশকে ভালবাসতে শিখলাম।যুদ্ধের সময় মানুস মানুসকে কত ভালবাসতে দেখছি,এখন সেই ভালবাসা মানুসের মধ্যে খুজে পাই না।ছোট বেলার সেই মধুর স্বরনীয় মুহুর্ত আজও ভুলতে পারিনা। দেশের জন্য আবার কি আমরা এক কাতারে দাড়াতে পারিনা?সেসময় শুনেছিলাম ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জন্য অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছে।এখন ভাবি এই সাহায্যের পিছনে ভারতের কোন স্বার্থ লুকিয়ে ছিলো কিনা!

নস্টালজিয়াঃ মায়ার বাধন -৪

১৯৭১ স্বাধীনতার যুদ্ধের সময়কালীন বাবাকে মাত্র একবারই ক্ষনিকের জন্য দেখেছিলাম। যুদ্ধ শেষ হলো, আমারা পেলাম বিদ্ধস্ত একটি দেশ।আবার দেশের পুনর্গঠনে শেখ মুজিবুর রহমান বাংগালী জাতির প্রিয় নেতা দেশ নুতনভাবে গড়ানোর কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছিলেন। তিনি সেসময় তার অগ্নিঝরা বক্তব্যের মাদ্ধমে দেশের জনগণকে সচেতন করতে লাগলেন। দেশ নুতন ভাবে গড়ার জন্য কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করার জন্য দেশের নাগরিকদের আদেশ দিলেন।তখন বংগবন্ধুর আদেশে বাংগালী জাতি মন্ত্রমুগ্ধের মতো অনুসরণ করতো।
বাবাও ফিরে এলেন।কিছুদিন আমাদের সাথে থাকলেন।তারপর আবার কাজে যোগদান করলেন। সেসময় আমরা ২/৩ বছর নানার বাড়ীতেই অবস্থান করে চৌপিনগর হাইস্কুলে ভর্তি হয়ে লিখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকলাম।এরই মাঝে আমার,আমার ছোট ভাই ও মামাতো ভাই বাদশার খাতনার কাজও সেড়ে ফেললেন বাবা।
১৯৭৩ সালের দিকে বাবাকে বদলী করা হলো রাজশাহীতে। তিনি রাজশাহীর সাহেব বাজারে রুপালী ব্যাংকের শাখায় অফিসার হিসাবেই জয়েন করেই দ্রুত আমাদের নিয়ে যাবার জন্য সাহেববাজার এলাকায় গনকপাড়ায়। সে সময়ের পৌরসভার চেয়ারম্যান জনাব আমজাদ হোসেন সাহেবের বাসার দ্বিতীয় তলা ভাড়া নিলেন।
যথাসময়ে আমাদের রাজশাহীতে নিয়ে আসলেন।আমি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তির জন্য এডমিশন দিলাম।চান্স পেলাম না।তারপর লোকনাথ স্কুলে ভর্তির এডমিশন দিয়ে চান্স পেয়ে সেখানে ভর্তি হলাম।বড়বোন পি এন Girls স্কুলে চান্স পেয়ে ভর্তি হলেন।ছোটটাকে তখনও স্কুলে ভর্তি করে দেন নাই।বাসায় প্র‍্যাকটিস করে।
বাবা খুব সৌখিনভাবে জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন।সব সময় আধুনিক টিপটপ পোষাক পড়তেন।আমদেরও টিপটপ ভাবে রাখতেন।অফিস শেষে নিজেই আমাদের প্রাইভেট মাস্টারের মত পড়াতেন।পড়া শেষ হলে আমাদের নিয়ে কিছুক্ষণ কেরাম বোর্ড খলতেন।তারপর রাতের খাওয়া দাওয়া এবং বিশ্রাম।আদরের সময় আদর করতেন এবং শাসনের সময় শাসন করতেন।ভুলভ্রান্তি করলে কঠোর শাস্তি দিতেন।
মাঝেমধ্যে বিনোদনের জন্য আমাদেরকে নিয়ে স্নিগ্ধা সিনামা হলে,কখনও বনানী সিনামা হলে,কখনও কল্পনা সিনামা হলে সিনেমা দেখার জন্য স্বপরিবারে নিয়ে যেতেন।
ইংরেজি ছবি বাবার খুব পছন্দের, তাই বাবার সাথে আমাদেরও ইংরেজি ছবি দেখতে হতো। সেসময়কার একটি ইংরেজি ছবির কথা আজও মনে আছে।ছবিটির নাম ছিলো হান্ড্রেড রাইফেলস।
কোনো কোনো দিন বিকাল বেলায় অফিস থেকে ফিরে এসেই আমারদের নিয়ে পদ্মানদীর পাড়ে বেড়াতে নিয়ে যেতেন।তখন পদ্মানদীতে পানি পরিপূর্ণ থাকতো। এখন তো পানি থাকেনা,শুধু ধুলার চড়।
বছর খানেক পর আমাদের নুতন বাসায় নিয়ে গেলেন, সেই বাসাটি ছিলো বোস পাড়ায়।খুব সুন্দর বাসা।
হটাৎ বাবার মনে কি খেয়াল চাপলো বড় বোনকে গান শিখাবেন এবং আমাকে তবলা বাদক বানাবেন।গানের ও তবলার মাস্টারও রেখে দিলেন।

আমারা বিকেল করে প্র‍্যাকটিস করতে থাকলাম।
বাবার শিল্প সাহিত্যের প্রতি বেশিমাত্রায় ঝোক ছিলো। তিনি নিজেও পদ্মা শিল্প গোস্টিতে যাতায়াত করতেন।আমার আর একটি ছোট বোন হয়েছিল।সে ৪ বছর বয়স থেকেই পদ্মা শিল্প গোস্টীতে নাচের প্র‍্যাকটিস করতো। নাচে বেশ পারদর্শী হয়ে উঠেছিলো। অল্প বয়সেই বিভিন্ন প্রোগ্রামে নাচ করতো। এভাবেই পড়াশুনার মাঝে আমাদেরকে শিল্পী হিসেবে গড়ে তোলার আপ্রান চেষ্টা করতে লাগলেন।আমরাও মনোযোগের সাথে প্র‍্যাকটিস করতে থাকলাম। তবলায় আমার হাত বেশ পাকা হয়ে উঠছিলো।
আর একটি কথা বলতে ভুলেই গিয়েছি।সেটা হলো, আমরা যখন গনকপাড়া আমজাদ সাহেবের বাসায় থাকতাম তখনকার ঘটনা।

বাবার অফিসের বারান্দায় প্রতি রাতে এক ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে তার বৃদ্ধবাবা রাত্রিতে থাকতো।সারাদিন ভিক্ষাকরে ওখানেই তাদের বসতবাড়ী হিসাবে ব্যাবহার করতো।তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের ছিলো।
একদিন বাবা সকালে অফিসে গিয়ে দেখেন সেই ছোট্ট মেয়েটির বাবা বারান্দায় মৃত অবস্থায় পড়ে আছে এবং মেয়েটি বাবার লাশের পাশে বসে বসে কাদছে।মেয়েটির বাবা ছাড়া এই পৃথিবীতে কেউ ছিলো না।মেয়েটির সাড়া গায়ে খোসপাঁচড়া দিয়ে ভর্তি। ক্ষতদিয়ে পুজও পড়তো। অতি দরিদ্র বিধায় চিকিৎসা করাতেও পারেনি।
মেয়েটি ও তার বাবাকে বাবা খুব পছন্দ করতেন।মাঝেমধ্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন।আমাদের সরকারি ডাক্তারের কাছ থেকে ঔষধপত্রও এনে দিতেন।তখনকার সরকারি ব্যাংক অফিসারদের জন্য আনলিমিটেড চিকিৎসা খাত ছিলো। ব্যাপক ঔষধপত্র পেতাম, ব্যাংক অফিসারদের জন্য একজন ডাক্তার নিয়োজিত থাকতো।ফ্রি চিকিৎসা ও ফ্রি ঔষধপত্র এবং রেশনিং ব্যাবস্থা ব্যাংক অফিসার পরিবারের জন্য বরাদ্দ ছিলো।
বাবা সেই হিন্দু মেয়েটি ও তার মৃত বাবার লাশ নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলেন।কেউ তাদের নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিলো না।বাবার কঠিন মনের মাঝে যে একটি কমল মনের শিশু বাস করতো, তা সেদিনের ঘটনার পরবর্তী পদক্ষেপ থেকে জানতে পেরেছিলাম।

নস্টালজিয়াঃ মায়ার বাধন -৫ ব্যাংকের বারান্দায় হিন্দু বৃদ্ধ লোকের সৎকার করার জন্য বাবা নিজ উদ্যোগে টাকা উঠালেন এবং সৎকারের ব্যবস্থা করলেন। বৃদ্ধ্যের রেখে যাওয়া ৪/৫ বছরের গায়ে ঘা ভর্তি বোকা টাইপের মেয়েটির কি হবে? কে নিবে তার দায়িত্ব? এতিম মেয়েটির এই দুনিয়াতে আর কেউ নেই। কোন আশ্রয় নেই। কেউ দায়িত্ব না নিলে হয়তো সে বিনা চিকিৎসায়, অভুক্ত থেকে সেইও হয়তো তার বাবার মত এই ধরাধাম ত্যাগ করে চলে যাবে। কেউ যখন তার দায়িত্ব নিলো না।বাবা তার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।উপস্থিত সকলের কাছে তিনি অংগীকার করলেন, তিনিই মেয়েটির দায়িত্ব নিতে চান,যদি কারো আপত্তি না থাকে।উপস্থিত লোকজন বাবার আগ্রহকে সমর্থন দিলে বাবা মেয়েটিকে নিয়ে বাসায় চলে আসেন।বাবার সাথে থাকা নোংরা, সারা গায়ে খোসপাঁচড়ায় ভর্তি মেয়েটিকে দেখে আমরা বাসায় সবাই অবাক।

বাবা কাকে নিয়ে এলেন। বাবা নিজেই আমাদের সবার উদ্দেশ্যে বললেন আজ থেকে এই মেয়েটি আমাদের বাসাতেই থাকবে।আজ থেকে মেয়েটি তোমাদের আরেক বোন। মাকে বললেন, মেয়েটির যত্ন নিতে এবং মেয়ে হিসেবে মেনে নিতে। মা,বাবার আদেশের কোন বিরোধিতা করেননি। মা,সেই মেয়েটিকে কাছে টেনে নিলেন। মেয়েটি ঠিকভাবে কথা বলতে পারতো না।নিজের নাম কি তাও বলতে পারতো না। যেহেতু মেয়েটি নাম বলতে পারেনা এবং তোতলা স্বভাবের, তাই বাবা তার নাম রাখলেন রানী।সেই থেকে মেয়েটি আমাদের আরেক বোনের স্বীকৃতি পেলো। দিনের পর দিন মা রানীর পরিচর্যা করতেন।ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতেন।অনেক প্রচেষ্টার পর মেয়েটি সুস্থ হয়ে উঠে।বাবা ওর জন্য নুতন কাপড়চোপড় কিনে দেন।আমাদের যখন বাবা পড়াতে বসতেন,তাকেও বাবা পড়াতেন।

যেহেতু তার তোতলামির রোগ ছিলো। তাই বাবা দিনে অন্তত ১ ঘন্টা মুখে পাথরের রেখে তাকে কথা বলানোর চেস্টা করতেন।এভাবেই একদিন তার তোতলামির রোগ ভালো হয়ে যায়।যেহেতু তার দুনিয়াতে কেউ নেই এবং এখন থেকে সাড়াজীবনের জন্য আমার পরিবারের সদস্য হয়ে গেলো। সেহেতু বাবা তাকে কলেমা পড়ায়ে মুসলমান বানালেন। মা তাকে আরবি শিক্ষা দিতে শুরু করেন। এভাবেই আমরা আমাদের এক নুতন বোন পেলাম।বেশ কয়েক বছর রানী আমাদের তত্বাবধানে বড় হতে লাগলো। একবার দাদী বেড়াতে আসলেন।যাবার আগে দাদী বাবার কাছে আবদার করলেন,রানীকে দাদী সাথে নিয়ে যেতে চান।দাদী রানীকে তার কাছে রাখতে চান।দাদীর আবদার বাবা ফেলতে পারেননি। দাদী যাবার সময় রানীকে নিয়ে বগুড়ায় চলে গেলেন।সেই থেকে দাদীর আদর যত্নেই রানী বড় হতে থাকে।একসময় তার বিয়েও দেন।

একটি মেয়ে হয়।মেয়েটিরও বিয়ে হয়ে বাচ্চাকাচ্চা হয়েছে।আমাদের ভাইবোনের সম্পর্ক আজও বিদ্যমান মান।তার বাবা মা বলতে আমার বাবা মা,তার ভাইবোন বলতে আমারাই তার ভাইবোন। দাদী মারা যাবার পর বড় ফুফু তার দায়িত্ব নেয়।বড় ফুফু ধনীর ঘড়ের স্ত্রী ছিলেন।কিন্তু কোন বাচ্চাকাচ্চা ছিলো না।তাই বড় ফুফু তাকে নিয়ে নিলেন। আর বড় ফুফু আমার আরেক ফুফুর ছেলেকে দত্তক নিয়ে লিখাপড়া করিয়ে মানুষ করে।এই ছিলো ফুফুর এক ছেলে এক মেয়ে।ফুফু ও ফুফা মারা যাবার পর ফুফুর পালক ছেলে তাকে বোনের মতই কাছে রেখে দেয়।বোন রানী এখন অনেক ভাল আছে। যাহোক, আবার প্রসংগে চলে আসি।ঈদ আসলে বাবা ভাইবোনদের জন্য একই কালারের কাপড়চোপড় কিনে দিতেন।তখনকার দিনে প্রায়ই পরিবারের একই অবস্থা। একবার সামার ভ্যাকেশনে আমরা সবাই নানার বাড়ীতে বেড়াতে গেলাম।ছুটি শেষে বাবা আমাদের রেখে চলে গেলেন রাজশাহীতে। যাবার আগে মামাতো ভাই আব্দুল বারী ভাইকে দায়িত্ব দিয়ে বললেন তুমি এদেরকে নিয়ে ১৫ আগস্টে রাজশাহীতে পৌঁছে দিয়ে এসো এবং রাজশাহীতে বেড়িয়েও এসো।বারীভাই বললেছিলেন,ফুফা চিন্তা করবেন না।

আমি ফুফু কে সহ সবাইকে রাজশাহীতে পৌঁছে দিয়ে আসবো এবং রাজশাহী দেখি নাই,তাই মাসখানেক রাজশাহীতে থাকবো।বাবা বললেন, চলে এসো কোন অসুবিধা নেই। ১৯৭৫ সাল ১৫ আগস্ট সকালের দিকে আমরা প্রগতি বাসে করে নগরবাড়ীর উদ্যেশে রওনা করলাম।তখনকার সময় প্রগতির বাস ছাড়া আর ট্রেন ছাড়া যোগাযোগের কোন মাদ্ধ্যম ছিলো না।গাড়ীর সংখ্যাও ছিলো খুব অল্প।তাই গাড়ীতে সিট পাওয়া নিয়েও প্রতিযোগিতা হতো। যাহোক বারী ভাইয়ের প্রচেস্টায় আমরা সিট পেলাম এবং রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা করলাম।সেসময় বগুড়া থেকে সরাসরি রাজশাহী যাবার রাস্তা ছিলো না। বগুড়া থেকে আগে যেতে হতো নগরবাড়ী,তারপর নগরবাড়ী থেকে বাস পরিবর্তন করে রাজশাহী রুটের বাস ধরতে হতো অর্থাৎ ব্রেক জারনি। আমাদের গাড়ী যখন বগুড়ার সীমানা চান্দাইকোনা ক্রস করছে।ঠিক তখনই ট্যানজেস্টারে সংবাদ পরিবেশন হচ্ছে।বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে কিছু বিদ্রোহী সেনা সদস্য হত্যা করেছে।তখন রেডিওকে বলা হতো ট্যানজেস্টার।

এই সংবাদ পাবার পর ড্রাইভার আতংকিত হয়ে বলে উঠলো গাড়ী সামনে যাওয়া ঠিক হবেনা।দেশে গোলমাল হতে পারে।এই বলে ড্রাইভার সাহেব গাড়ী আবার বগুড়ার অভিমুখে ঘুড়িয়ে ফিরতে শুরু করলো। ছোট বেলায় নানা নানীর বাড়ী যে কি মধুর যায়গা তা একমাত্র ছোটরাই জানে।নানার বাড়ীতে ফিরে যাচ্ছি এটাই আমাদের ভাইবোনদের মাঝে আনন্দের ধারা বইয়ে দিলো। আমাদের বয়স অল্প রাজনৈতিক ক্যু বা সামরিক ক্যু বা অভ্যুত্থান সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা ছিলো না।তাই, আমাদের মাথা ব্যাথা ছিলো না।নানার বাড়ীতে ফিরে যাচ্ছি এটাই আমাদের পরম আনন্দের বিষয়। নানার বাড়ীতে ফিরে এসে মা,বাবাকে চিঠি লিখে রাজশাহীতে না যাবার কারণ জানিয়ে দিলেন। (চলবে)

মোঃ মোস্তফা হারুন বরেন্দী, সিনিঃ সহকারী পুলিশ সুপার

“কাহিনীটি মোঃ মোস্তফা হারুনের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া”.

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST