1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
নস্টালজিয়াঃ মায়ার বাধন -১০ - খবর ২৪ ঘণ্টা
বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন

নস্টালজিয়াঃ মায়ার বাধন -১০

  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৯

মোঃ মোস্তফা হারুন বরেন্দী: আমাদেরকে নেয়ার জন্য বাবা বেলকুচি থেকে ছুটি নিয়ে আসলেন। বাবা ছিল মোন্না পরিবারের একমাত্র জামাই।সাত ভাইয়ের একবোনকে বিয়ে করেছে তাই আদর কদরও খুব বেশি।জামাই এসেছে তাই মামা পালিত মুরগী ধরে জবাই করেছে।হাট থেকে বড় মাছ,মাংস কিনে এনেছে।জামাই যা যা খেতে পছন্দ করে সব আয়োজনই করা হয়েছে। গ্রামের ভাষায় জামাইকে দামান বলতো।দামানের সাথে মামিরা ইয়ারকি মশকরা করতেন।ধুম করে পিঠা বানাতেন।সবাই যেনো তাকে মাথায় করে রাখতেন।

কৃষিজীবি পরিবারের একমাত্র ছোট বোনের জামাই সরকারি চাকুরীজীবি এবং অফিসার, তাই ঐ তল্লাটে বাবার কদর ছিলো খুব বেশি।তখনকার দিনে সরকারি চাকুরীজীবি জামাই পাওয়াও সৌভাগ্যের বিষয় ছিলো। বাবার আসা উপলক্ষে আমরাও বাবার সাথে সমান তালে ভুড়িভোজনে মনযোগ দিয়েছিলাম। এবার বিদায়ের পালা।সুনির্দিষ্ট দিনে আমরা ঘোড়ার গাড়ীতে করে মাঝিরার গঞ্জে পৌছিলাম।আগেই বলেছি তখনকার দিনে গাড়ীর সংখ্যা অতিমাত্রায় কম ছিলো। রাস্তায় কোন জ্যাম থাকতো না।

তবে দূরপাল্লার রাস্তা ঢালাই ও সরু ছিলো। যার কারণে দুটি বড় গাড়ী ক্রস করতে একটি গাড়ীকে রাস্তার পাশে ফাকা কাচা রাস্তায় নেমে থেমে থাকতো। অন্য গাড়ী পার হলে আবার পাকা রাস্তায় গাড়ী উঠায়ে চলা শুরু হতো। প্রায় ঘন্টা খানেকপর প্রগতীর গাড়ী আসলো। আমরা সবাই গাড়ীতে চেপে বসলাম।মালামাল উঠানো হলো।বিদায় বেলায় নানি কাচা তরিতরকারি, চাউল,ছাতু,গুড়,মুড়ি,নারিকেল ইত্যাদি পসরা সাজিয়ে দিয়েছিলেন। বিদায় বেলায় নানি অদুরে দাঁড়িয়ে চোখের জল শাড়ীর আচল দিয়ে ঘন ঘন মুছছিলেন। গাড়ীতে উঠার আগে নাতিদের মুখে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিলেন এবং বললেন নানা ভাই আবার যত তাড়াতাড়ি পার চলে আসবে।

তোমাদের ছাড়া একা ভালো লাগেনা।নানিরা বুঝি এমনই হয়। নাতি নাতনীর জন্য তার মন পুড়ে বেশি। নানির চোখের জলে গাড়ী ছেড়ে দিল নগরবাড়ী ঘাটের উদ্দ্যেশ্যে। পাক্কা ৪/৫ ঘন্টা পর আমারা নগরবাড়ী ঘাটে পৌছিলাম।বাবা কুলিকে দিয়ে মাল সামানা নামিয়ে এক জায়গায় জড়ো করে রাখলেন।বাবা আমাদের বললেন, তোমরা এখানে বসো।আমি ঘাটে গিয়ে বড় নৌকা ভাড়া করে আসছি।লঞ্চের অপেক্ষা করলে বিকাল প্রযন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখনকার দিনে বেলকুচিতে যেতে বগুড়া থেকে সময় লাগে মাত্র আড়াই ঘন্টা। কারন সড়ক যোগাযোগ উন্নত হয়েছে।আগে সড়ক ব্যাবস্থা খুব খারাপ ছিল।ভেংগে ভেংগে যেতে হতো। ডাইরেক্ট কোন গাড়ী ছিলো না।

বেলকুচি যেতে হলে একমাত্র পথ ছিলো বগুড়া থেকে বাসে নগরবাড়ী ঘাট তারপর যমুনা নদী অতিক্রম করতে হতো বড় বড় পাল তোলা নৌকায় অথবা লঞ্চে করে। লঞ্চে সময় লাগতো মিনিমাম ৪ ঘন্টা,আর পালতোলা বড় নৌকায় সময় লাগতো প্রায় ৬/৭ ঘন্টা। বেশ কিছুক্ষণ পর বাবা নৌকা ভাড়া করে ফিরে এলেন।কুলিরা আমাদের মাল সামানা নৌকায় উঠিয়ে দিলো।আমারা নৌকায় চড়ে বসলাম।মাঝি নৌকার পাল তুলে দিয়ে বৈঠা হাতে বৈঠা চালাতে লাগলো। আর গান ধরলো।

বাবা মাঝিকে মাঝে মাঝে গান পরিবর্তন করতে বলতেন।কোন সময় গানের দু একটি শ্লোক মনে করে দিয়ে বলতেন এই গান বান্ধো।মাঝি আবার সেই গান শুরু করতো। ঘন্টা খানেক নৌকা চলার পর আমরা একটি চরের পাশ দিয়ে নদী অতিক্রম করছিলাম। চরে সাদা ধবধবে কাশবনে পরিপূর্ণ। চমৎকার লাগছিলো। আমরা ভাইবোন সবাই বাবাকে বললাম,আমরা চরে নামতে চাই।বাবা মাঝিকে বললেন চরে নৌকা থামানোর জন্য। চরে নেমে ককিছুক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করলাম।কাশবনের শুভ্র তুলতুলে ফুলগুলো ছিড়তে মজা পাচ্ছিলাম।

কিছু ফুল তুলে আমারা সাথ নিলাম।আমাদের এলোমেলো দৌড়াদৌড়ি দেখে বাবা সতর্ক করে দিলেন,চরে সাধারণত চোরাবালি থাকে।সেখানে পড়ে গেলে মানুষকে বাচানোই কঠিন হয়ে যায়। তখন ভয় পেয়ে আমরা দমে যাই।বেশ আনন্দ পাচ্ছিলাম। বাবা বললেন আর দেরি করা উচিৎ হবেনা, তাহলে বেলকুচিতে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগবে।নৌকায় ফিরে গেলাম।বাবা মাঝিকে জানালেন, বাবা নিজে বৈঠা বাইবেন।জামা, জুতা খুলে বাবা বৈঠা ধরে নৌকা এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকলেন। এভাবেই সময় কেটে গেলো।একসময় আমারা বেলকুচির চরে নৌকা ঘাটে পৌছিলাম।

সবাই ধীরে ধীরে নৌকা থেকে নেমে পড়লাম। কুলি আমাদের মালামাল নামিয়ে নিলো।এখন আমাদের যমুনার চর দিয়ে তিন কিঃমিঃ এর হেটে যেতে হবে তারপর বেলকুচিতে পৌঁছাতে পারবো। শুরু হলো পায়ে হেটে এগিয়ে যাওয়া।হাটতে হাটতে আমাদের পা ব্যাথা শুরু করলে কিছুক্ষণ হাটার বিরতি দিয়ে আবার চলতে শুরু করলাম।একসময় সোহাগপুর গ্রামে পৌঁছে গেলাম। সোহাগপুরের ডাক্তার সাখাওয়াত সাহেবের বাসাটি আমাদের সরকারি বাসা।আর পাশের বাসায় ডাক্তার সাহেব নিজেই একছেলে একমেয়েকে নিয়ে থাকতেন।ডাক্তার সাহেব আবার ব্যাংকের সরকারি ডাক্তারের দায়িত্বও পালন করেন।

বেলকুচিতে ৯৯% বাড়ীই টিনশেড ও টিনের বেড়া ঘেড়া বাসা।বাসাতে সরকারি আসবাবপত্রে সাজানো ছিলো। বাসায় পৌছিলে ডাক্তার সাহেব বাবা সহ আমাদেরকে রিসিভ করেন এবং আমাদের খাবারের আয়োজন করেন।বেশ আন্তরিকতা পরিবেশ ডাক্তারের পরিবারের সাথে আমাদের প্রথম পরিচয় হয়।খাওয়া দাওয়া শেষ হলে ডাক্তার সাহেব ও তার গিন্নী আমাদের বিশ্রাম নিতে বলে বিদায় নিলেন।আসলেই তাদের রিসিভ থেকে খাওয়া দাওয়া ও আন্তরিকতা যথেষ্ট ভাল ছিলো। আমরা তাদেরকে প্রতিবেশী হিসাবে পেয়ে ধন্য,তারাও আমাদের পেয়ে অত্যান্ত খুশি।তারা বাবার আচার আচরণে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়ে গেছেন অল্প কয়েক দিনেই।প্রায়ই ব্যাংক থেকে ফিরে বাবা ও ডাক্তার সাহেব তাস খেলে সময় কাটাতেন,এক সংগে ঘুড়ে বেড়াতেন।কখনো কখনো ডাক্তার সাহেবের চেম্বারে বাবাদের আড্ডা চলতো। (চলবে)

মোঃ মোস্তফা হারুন বরেন্দী, সিনিঃ সহকারী পুলিশ সুপার

“কাহিনীটি মোঃ মোস্তফা হারুনের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া”.

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST