বাগমারা প্রতিনিধি: বাগমারা উপজেলার দলিল লেখকদের সাথে সাবরেজিষ্টারের সাথে চলমান দ্বন্দ্ব দলিল লেখকদের কলম বিরতির জের ধরে আজ মঙ্গলবার জেলা রেজিষ্টার মো: আবুল কালামের সাথে উপজেলার দলিল লেখকদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মতবিনিময় সভায় জেলা রেজিষ্টার আবুল কালাম আজাদ গতকাল বেলা ২ ঘটিকা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ভবানীগঞ্জ দলিল লেখক সমিতির কার্যালয়ে রুদ্ধদার বৈঠক করেন। এ দিকে দলিল লেখকদের সাথে সাবরেজিষ্টারে দ্বন্দ্বের জের ধরে দলিল লেখকদের কলম বিরতির ঘোষনা দেওয়ায় উপজেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত জমির ক্রেতা বিক্রেতারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। ভোগান্তির শিকার এসব গ্রাহকরা অবিলম্বে দলিল লেখক ও সাবরেজিষ্টারে দ্বন্দ্ব নিরসনে সুষ্ঠভাবে দলিল সম্পাদনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। জানা গেছে এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে বাগমারার সাবরেজিষ্টার রাফায়েল ফাতেমীর বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরন ও দলিল লেখকদের লাঞ্চিত করার অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন বাগমারার দলিল লেখকরা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দলিল লেখকরা বাগমারায় সংবাদ সম্মেলন ও রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে বাগমারার সাবরেজিষ্টার রাফায়েল ফাতেমীল অপসারনের দাবীতে জেলা প্রশাসকের নিকট একটি স্মারকলিপিও জমা দেন। জানা গেছে বাগমারার সাবরেজিষ্টার রাফায়েল ফাতেমীর অপসারণের দাবীদে বাগমারার দলিল লেখকদের চলমান আন্দোলন ও জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি জমা দেওয়ার প্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার জেলা রেজিষ্টার আবুল কালাম আজাদ বিষয়টির তদন্ত করতে স্বরেজমিন বাগমারায় এসে দলিল লেখকদের সাথে মতবিনিময় করেন। বাগমারা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম মডি ও সাধারন সম্পাদক রহিদুল ইসলাম জানান, বাগমারার সাবরেজিষ্টার রাফায়েল ফাতেমী বাগমারায় যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে দলিল লেখকদের সাথে অসৌজন্য মূলক আচরন শুরু করেন। সর্বশেষ একটি দলির সম্পাদনের জন্য বাগমারা দলিল লেখক সমিতির সাধারন সম্পাদক রহিদুল ইসলাম সাবরেজিষ্টারের কার্যালয়ে গেলে সাবরেজিষ্টার রাফায়েল ফাতেমী তাকে লাঞ্চিত করেন বলে অভিযোগ করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দলিল লেখক জানান, সাবরেজিষ্টার রাফায়েল ফাতেমী বাগমারার যোগদানের পর থেকে তারা দলিল সম্পাদনে চরম বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে যান। তিনি কথায় কথায় বিভিন্ন অযুহাত তুলে ও দলিলের বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুতি তুলে ধরে তাদের কাছে অনৈতিক দাবী পেশ করেন। তারা সাবরেজিষ্টারের এহেন অন্যায় অনৈতিক দাবী পূরন না করায় তিনি দলিল সম্পাদন না করে তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন শুরু করেন। কয়েকজন প্রবীন দলিল লেখক জানান, আমরা প্রায় ত্রিশ বছর ধরে দলিল সম্পাদন করে আসছি। কিন্তু সাবরেজিষ্টার রাফায়েল ফাতেমীর সময়ে এসে দলিল সম্পাদনে যে ভোগান্তিতে পড়েছি তা আগে কখনো ঘটেনি। বাগমারার দলিল লেখকদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবরেজিষ্টার রাফায়েল ফাতেমী বলেন, বাগমারার সৎ ও দায়িত্ববান দলিল লেখকদের সাথে আমার সম্পর্কের কোন অবনতি নেই। কিন্তু এখানকার কথিপয় অসৎ দলিল লেখকগন আমার বিরুদ্ধে যে অসৌজন্যমূল আচরন সহ যেসব অভিযোগ তুলেছেন তা সম্পূনটাই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি বাগমারার কথিপয় দলিল লেখকদের নানাবিধ অনিয়ন ও দূর্নীতির বিষয় তুলে ধরে বলেন, প্রকৃত ঘটনা হলো বাগমারার ভবানীগঞ্জ দলিল লেখক সমিতির কথিপয় দলিল লেখক যে ভাবে সম্পূর্ন বিধি বহির্ভুত ভাবে ও সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দূর্নীতি মূলক পস্থায় কিছু দলিল সম্পাদন করতে আসলে তা আমলে না নেওয়ায় তারা আমার অপসারন দাবী শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা গনমাধ্যমের আশ্রয় নিয়ে একের পর এক মিথ্য প্রচারনায় নেমে পড়ে। তিনি বাগমারার কথিপয় অসৎ দলিল লেখকদের বিভিন্ন অন্যায় ও অনৈতিক কার্যকলাপের বিষয় তুলে দরে বলেন, এখানকার কথিপয় দলিল লেখক নিয়মনীতির বাইরে জমির পরিবর্তন করে দলিল সম্পাদন করতে নিয়ে আসে। তারা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কৌশলে নিজেদের নিজেদের স্বার্থসিদ্ধীর জন্য জমির প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম মূল্য দেখিয়ে দলিল সম্পাদন করতে আমার উপর অন্যায় চাপ প্রয়োগ শুরু করে। এছাড়া তারা নিয়মনীতির বাইরে গিয়ে ফটোকপির চেক ও ফটোকপি খতিয়ান প্রদর্শন করে থাকে এবং প্রযোজ্জ ক্ষেত্রে ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন বাধ্যতামূলক হলেও তা দাখিল না করে জোর পূর্বক দলিল সম্পাদন করতে চায়। এছাড়া হাত কপি খতিয়ান জমা দেওয়া যা সম্পূর্ন বিধি বহির্ভুত হলেও তারা হাত কফির খতিয়ান নিয়ে দলিল সম্পদনের জন্য বিভিন্ন ভাবে আমার উপর চাপ প্রয়োগ করে থাকে। উল্লেখিত অনিয়ম ছাড়াও কথিপয় দলিল লেখক আরো বিভিন্ন অনিয়ম ও বিধিবহির্ভুত দলিল সম্পাদন করার জন্য আমার কাছে আসে এবং আমাকে অনৈতিক এসব কাজ কারার জন্য প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে। আমি তাদের আহবানে সাড়া না দেওয়া ও তাদের কোন প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যার নিয়ে নিয়ে কলম বিরতি বা মানববন্ধনের নামে ষড়যন্ত্রমূলক আন্দোলন করে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি দলিল লেখকদের বিভিন্ন অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবী করে বলেন, এসব এছাড়া পূর্বে এই অফিসের কথিপয় দলিল লেখকদের রাজস্ব ফাঁকি ও বিধি বর্হির্ভূত দলিল সম্পাদনের বিষয়ে দুদকে অভিযোগ হলে মাননীয় এডিসি মহোদয় বিষয়টি তদন্ত করে তার সত্যতা পায় এবং বকেয়া আদায়সহ পুনরায় সরকারি কোষাগারে উক্ত অর্থজমা নিশ্চিত করেন। একজন সাব-রেজিষ্টার হিসাবে রাজস্ব ফাঁকি রোধ ও সরকারি নিয়মনীতি অনসরন করে দলিল সম্পাদন করা আমার দায়িত্ব। কিন্তু কথিপয় দলিল লেখক তারা নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে একে পর এক নিয়মনীতি ভঙ্গ করে চলেছেন এবং সেখানে আপত্তি জানালে তারা আমার বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরন ও তাদেরকে লাঞ্চিত করার বিষয়ে গণমাধ্যমকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে একে পর যে ভিত্তিহীন অপপ্রচার শুরু করেছেন তা সম্পূনটাই ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছেন সাবরেজিষ্টার রাফায়েল ফাতেমী। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা রেজিষ্টার মো: আবুল কালাম আজাদ বাগমারার সাবরেজিষ্টার ও দলিল লেখকদের দ্বন্দ্বের কারণে এলাকার সাধারন জমির ক্রেতা বিক্রেতাদের ভোগান্তির শিকার হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, একটি সামান্য বিষয় নিয়ে উভয়ের মধ্যে( সাবরেজিষ্টার ও দলিল লেখক) ভুলবোঝাবুঝি হয়েছিল। আমি তাদের ভুলবোঝাবুঝি ও দ্বন্দ্ব নিরসরে উভয়ের সাথে মতবিনিময় করেছি। আশাকরি দু’এক দিনের মধ্যে বিষয়টির সুষ্ঠ সমাধান করা সম্ভব হবে এবং উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক পুন:প্রতিষ্ঠিত হবে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ