দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে। রোববার (২১ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এটি এখন পর্যন্ত চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এছাড়া আজ সকালে একই তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে, উত্তরাঞ্চলের জেলা শহর পাবনা ও নওগাঁতেও।
অর্থাৎ রাজশাহী, পাবনা ও নওগাঁ জেলায় আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
এর আগের দিন শনিবার (২০ জানুয়ারি) রাজশাহী সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর তার আগের দিন শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) ছিল ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একদিনের ব্যবধানে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছিল শনিবার।
এরপর আজ তাপমাত্রা কমল দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সাধারণত দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভেতর থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হিসাবে ধরা হয়। তাই শনিবার (২০ জানুয়ারি) থেকেই উত্তরের এই জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
জানতে চাইলে রাজশাহী আবহাওয়া পর্যেবক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যেবক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, আজ ভোর ৬টায় এবং সকাল ৯টায় একই তাপমাত্রা ছিল। এ সময় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই চলতি মৌসুমের এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে ১৩ জানুয়ারি রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারপর আজই প্রথম তাপমাত্রার পারদ আরও নিচে নামল। তাই আজ ভোর থেকেই শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় মোড়া ছিল পুরো রাজশাহী। সকাল ১০টার পর কুয়াশার আড়মোড়া ভেঙে সূর্যের দেখা মিলেছে ঠিকই, তবে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে সূর্যের সেই কিরণ শীতার্ত মানুষগুলোর শরীরে উষ্ণতা ছড়াতে পারেনি। শীতের এই তীব্রতায় রাজশাহীর মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো দুই দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও একদিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজকের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে শনিবার সন্ধ্যায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ঘোষণানুযায়ী কোনো জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেই স্কুলগুলো বন্ধ রাখার জন্য সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। তাই সেই অনুযায়ী রাজশাহীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শনিবার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার (মাউশি) রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ডিডি) ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী রোববার ও সোমবার (২১ ও ২২ জানুয়ারি) রাজশাহীর তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকবে। তাই মাউশির পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী এ দুইদিন রাজশাহীর সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম জানান, তারা শুধু রোববার (২১ জানুয়ারি) প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সোমবারের (২২ জানুয়ারি) আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে সেই ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদি দেখা যায় সোমবারও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকতে পারে, সেই ক্ষেত্রে এদিনও রাজশাহীর প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।
এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে আজ ভোরেও প্রধান সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। টানা শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে সাধারণ মানুষগুলোর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসন কম্বল বিতরণ শুরু করলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন শীতার্ত মানুষরা।
এমন ঘন কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিলে রাজশাহীর কৃষিতে ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এ সময়ে এসে কুয়াশার কারণে বরাবরই বোরো বীজতলা ও রবি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে জমির বোরোতে কোল্ড ইনজুরি ও আলুতে লেট ব্লাইট (পচন) দেখা দেয়। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মোজদার হোসেন জানান, এ বছর একটু দেরিতেই শীত এসেছে। তবে শেষ দিকের এমন বৈরী আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে অনেক সময়ই তা রবি শস্যের জন্য কাল হয়ে ওঠে। তাই কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সতর্ক রয়েছেন। বর্তমানে জেলার পাশাপাশি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পরিদর্শন করছেন। তারা ফসলকে নিরাপদ রাখতে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন। কৃষকরা মোবাইল অ্যাপস ও হট লাইনের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টাই কৃষি তথ্যসেবা পাচ্ছেন।
বিএ…