ফরিদ আহমেদ আবির দুর্গাপুর প্রতিনিধি: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে প্রশাসনের নির্দেশনায় রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা সহ আশপাশের এলাকাগুলোতে সাপ্তাহিক হাট বন্ধ রয়েছে। সেই সাথে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় পাইকার না আসতে পারায় পান নিয়ে বিপাকের মধ্যে পড়েছেন পান চাষীরা। ক্রেতা না থাকায় খানিকটা কম দামে পান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন পানচাষীরা এতে করে উৎপাদন খরচ না ওঠার কারনে ক্ষতির মুখে পড়েছেন পানচাষীরা।
দুর্গাপুর পান চাষের জন্য বেশ বিখ্যাত। উপজেলার শ্যামপুর,আলীপুর,দেবীপুর, গোপালপুর, শিবপুর, নওপাড়া সহ নারায়নপুর গ্রামের বিস্তৃর্ন এলাকা জুড়ে পানের বরজ গড়ে উঠেছে। প্রায় কয়েক হাজারের মতো পানের বরজ রয়েছে, স্বাদ ও দেখতে ভালো হওয়ায় এই অঞ্চলের উৎপাদিত পান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয়ে থাকে। উপজেলার আলীপুর,শ্যামপুর,নারায়নপুর ও গোপালপুর বাজারে শুক্রবার ছাড়া প্রত্যেকদিন পানের বৃহত্তম আড়ৎতে পান কেনাবেচা চলে এছাড়াও
দুর্গাপুরে বাজার সপ্তাহে দুদিন রবি ও বুধবার এবং পার্শ্ববর্তী মোহনগঞ্জ বাজারে রবি ও বৃহস্পতিবার পানের বৃহত্তর হাট বসে থাকে।
এসব পানের আড়ৎত ও হাটে অত্র অঞ্চলের পানচাষীরা যেমন তাদের উৎপাদিত পান নিয়ে যান তেমনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা এখানে আসেন পান কিনতে।
দুর্গাপুর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের পানচাষী আলতাফ হোসেন ও জালাল উদ্দিন বলেন, আমাদের এই অঞ্চল পান চাষের জন্য বিখ্যাত। এখানে প্রায় কয়েক হাজারের মতো পানের বরজ রয়েছে। অত্র এলাকার মানুষের মূল পেশা হলো পান চাষ, এছাড়া অন্য কোনো আবাদ এখানে তোমন হয়না।
আর এসব মিঠা পানের দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারনে আমরা পানচাষীরা সংকটের মধ্যে রয়েছি। বর্তমানে মৌসুম শেষ। যার কারনে পান বরজে রাখতেও পারছি না রাখলে পান মোটা হয়ে যাচ্ছে। এতে করে পান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার হাটবাজারে যেতেও পারছি না। যার কারনে পান বিক্রি করতে পারছি না। এর পরেও যদিওবা হাটে যাচ্ছি, প্রশাসন আসলে পান ফেলে পালিয়ে যাওয়া লাগে। কিন্তু দাম কম হওয়ার কারনে আমরা পান বিক্রি করে লোকসানের মধ্যে পড়েছি।
কিছুদিন আগে যে পান বিক্রি হতো ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার পোয়া (৩২বিরা), এখন করোনা ভাইরাসের কারনে সেই পান নেমে এসেছে আড়াইহাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পোয়া। এতে করে আমাদের যে উৎপাদন খরচ সেটিই উঠছেনা।
তিনি বলেন, এতে করে বরজে যেসব শ্রমিক কাজ করছে তাদের মজুরিও ঠিকমতো দিতে পারছিনা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের নিষেধ করছে এখন পান ভাঙার জন্য। কিন্তু আমাদের তো মৌসুম শেষ তাই বরজে যে পান রয়েছে সেগুলো ভাঙতেই হবে। তাই প্রশাসনের কাছে আমাদের একটাই অনুরোধ অন্তত পানের আড়ৎত ও হাট বাজার যদি সময়মতো লাগতে দেওয়া হতো ও কোনোধরনের ঝামেলা না থাকতো তাহলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকার আসতো। যার কারনে পানের চাহিদা থাকতো। এতে করে আমরা পান বিক্রি করে আমরা খানিকটা লাভবান হতাম।
গোপালপুর বাজারের পান ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, হাটে পানের আমদানি বেশ ভালো রয়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে বাহিরের পাইকাররা আসতে পারছেননা যার কারনে চাহীদা কম থাকায় পানের দাম কম। গতবছর যে পান ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পোয়া বিক্রি হয়েছিল এখন সে পান আড়াইহাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দূর্গাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মসিউর রহমান বলেন, কৃষিপণ্যের উপরে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই তবে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে পানচাষীরা যদি তাদের পানগুলো বিক্রি করতে পারেন এতে করে পানচাষীরা যে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন সেটি লাঘব হবে।
পানচাষীদের ক্ষতির বিষয়ে চাষীদের জন্য আউশ প্রনোদনা বিনামূল্যে সার, বীজ,দেয়া হবে, এবং ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের তালিকা তৈরী করা হচ্ছে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
খবর২৪ঘন্টা/নই
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।