1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সেই লতিফ আবারো আর.এম.পিতে ! - খবর ২৪ ঘণ্টা
বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০০ পূর্বাহ্ন

দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সেই লতিফ আবারো আর.এম.পিতে !

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৯ নভেম্বর, ২০২১

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) প্রধান অফিস সহকারী ছিলেন আব্দুল লতিফ। পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন দ্বিতীয় শ্রেণির প্রশাসনিক কর্মকর্তা। কিন্তু সম্পদের হিসাবে বড় বড় কর্মকর্তাকেও পেছনে ফেলেছেন তিনি। তার রয়েছে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ। চিঠি লিখে এক দিনেই ব্যাংক থেকে নিজের ও স্ত্রীর নামে তুলেছেন প্রায় কোটি টাকা। এতেই সন্দেহ হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি জানতে পেরে চিঠি পাঠায় দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক)।

আব্দুল লতিফের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের তদন্ত শুরু করে পুলিশ বিভাগও। পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহীল কাফি স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সাবেক পুলিশ সুপার আব্দুস সালামকে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছিল। সূত্র জানায়, আব্দুল লতিফ আরএমপিতে যোগ দেওয়ার পর গত ১৩ বছরে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। জানা গেছে, ২০০৭ সালে আব্দুল লতিফ প্রধান সহকারী হিসেবে আরএমপিতে যোগ দেন। যোগ দিয়েই তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে টাকার বিনিময়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ, আরএমপির থানাগুলোর ওসিদের বদলি ও পদায়ন শুরু করেন। তিনি কেরানি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হলেও  ওসিরাই তাকে `বড় ভাই` বলে সম্বোধন করেন।

অনিয়মের অভিযোগ উঠলে গত ৯ আগস্ট ২০ সালে একটি নির্দেশনা জারি করে পুলিশ সদর দপ্তর। কিন্তু চিঠি পড়ে লতিফের হাতেই। তিনি বিষয়টি গোপন রাখেন।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বিষয়ে তদন্ত শুরু করেন। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের প্রমাণিত হয়।

এর জের ধরে আগস্ট মাসের ২০২০ সালে তাকে অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক মাইনুর রহমান চৌধুরী (প্রশাসন) পুলিশ হেডকোয়ার্টারে তলব করেন। কিন্তু তিনি সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় গত বছরের ২ নভেম্বর ২০২০ সালে মহাপুলিশ পরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন এবং তাকে বরিশাল রেঞ্জের সংযুক্ত করেন। এসময় আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়েছে যার নম্বার ১৩১/ ২০২০/ ২০২০ তারিখ ২৩/১১/২০।  তার নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও

অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিরদ্ধে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে তদন্ত শুরু করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস. এম. এ. ফজল-ই খোদা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর। তদন্তে আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে আনা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয় । তদন্তকারী কর্মকর্তা ২৬/১০/২১ তদন্ত রির্পোট পুলিশ হেডকোয়ার্টার, ঢাকা, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার, এবং অভিযুক্তকারীকে প্রেরণ করেন। মামলাটি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র হতে জানা যায় গত অক্টোবর,’২১ এর প্রথম সপ্তাহে অভিযুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) আব্দুল লতিফের সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি আবারো  রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগদান করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) হিসাবে আবারো দায়িত্ব পালন করছেন।

এ নিয়ে  অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে আব্দুল লতিফের সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহার করে তাকে আবারও আরএমপিতে যোগদানের সুযোগ করে দিয়েছেন।

পুলিশের সূত্রে জানা গেছে,  আরএমপির প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ যোগসাজশ করে পছন্দের লোককে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া, বদলিজনিত তদবিরসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ গড়েছেন এমন অভিযোগে পুলিশ হেডকোয়ার্টার এর পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়।

উল্লেখ্য, একজন কেরানি হয়েও আব্দুল লতিফ নামে-বেনামে ও নিজ এলাকায় বিপুল পরিমাণ সম্পদ, বাড়ি-গাড়ি করেছেন এমন অভিযোগে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল লতিফ আরএমপিতে যোগ দেয়ার পর বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলি বাণিজ্য, পদোন্নতি, থানা থেকে মাসোহারা তোলা, নিয়োগ, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেয়া, মালামাল না কিনেই বিল উত্তোলন এবং ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজস করে তিনি নিজেও কাজ করে এসব সম্পদ অর্জন করেছেন।

২০১৭ সালে আবদুল লতিফ একদিনেই ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের নিজনামীয় হিসাব থেকে ৪০ লাখ টাকা এবং তার স্ত্রীর হিসাব থেকে ৫৮ লাখ টাকা তোলার জন্য চিঠি দেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি জানতে পারলে একজন কর্মচারীর এত টাকার বিষয়ে তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি দেয়। দুদকের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম আব্দুল লতিফকে তার সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে সবকিছু ম্যানেজ করেন লতিফ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা যায় আরএমপির এই কর্মচারীর মহানগরীর আলীগঞ্জ মৌজায় প্রায় দুই কোটি টাকার ১০ কাঠা জমি, কাজিহাটা মৌজায় আড়াই কোটি টাকার চার কাঠা জমি, নাটোর শহরে আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ১০ কাঠা জমি, নাটোরের বাগাতিপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে দুই কোটি টাকার ৪০ বিঘা জমি এবং ঢাকায় দুই কোটি টাকার দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া নামে-বেনামে রাজশাহী শহরে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনি।

দরপত্র আহ্বান করলেও সকল ঠিকাদারকে সিডিউল না দেয়া আরএমপির প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল লতিফের একটি অভ্যাস। তিনি ২০১৫ সাল থেকে বেশিরভাগ মেরামত ও সংষ্কার কাজ, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনা থেকে শুরু করে আরও অনেক কাজ চারঘাটের সারদার আবদুর রহমান মুন্না নামে এক ঠিকাদারের মাধ্যমে করছেন। এই ঠিকাদারের পরিবারের সদস্যদের নামে ১০-১২টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ২০১৮-১৯ সালে পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি জালিয়াতি করে এই ঠিকাদারকে তিনি কাজ দিয়েছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে লতিফের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত আরএমপিতে মেরামত ও সংষ্কার কাজ হয়েছে ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার। যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনা হয়েছে ১১ কোটি টাকার। এসব মেরামতে ব্যয় করা হয়েছে ৫৭ লাখ টাকা। ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামে ব্যয় হয়েছে ১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, মেরামত ও সংষ্কার কাজের ৩০ ভাগ কাজ করে বাকিটা লুটপাট করেছেন লতিফ ও তার মনোনিত ঠিকাদার। যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয় করা হয়েছে বাজারদরের চেয়ে অধিক মূল্যে। আর্চওয়ে গেটের বাজার মূল্য ৭০ হাজার টাকা থাকলেও সিডিউল মূল্য ছিল তিন লাখ ২০ হাজার টাকা। সাড়ে তিন হাজার টাকার সিসি ক্যামেরার সিডিউল মূল্য ছিল ১২ হাজার টাকা। এছাড়া ৫০-৫২ হাজার টাকা দামের কম্পিউটার কেনা হয়েছে ৯৮ হাজার টাকায়।

সূত্র আরও জানায়, প্রিন্টারের কালির সিডিউল মূল্য ছয় হাজার টাকা। লতিফ প্রতিমাসে ৫০টি কালির বিল করেন তিন লাখ টাকা। অথচ নতুন কালি না কিনে রিফিল করেন ৫০০ টাকায়। অর্থাৎ কালির নামেই প্রতিমাসে দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা আত্মসাত করেন লতিফ। প্রতিমাসে অন্যান্য স্টেশনারি সামগ্রীর বিল করেন ৪-৫ লাখ টাকা। আর মালামাল কেনা হয় বড়জোর ৭০-৮০ হাজার টাকার। এগুলো পত্রবাহক আজিজুল ইসলামকে দিয়ে কেনান। এ জন্য প্রতিমাসে তাকেও ১৫ হাজার টাকা দেন লতিফ।

অভিযোগ রয়েছে, ২০১৯-২০ সালে টাঙ্গাইলের ঠিকাদার মো. শাহিনের সঙ্গে পার্টনারশীপে ব্যবসা করেন লতিফ। ২০১৫ সালে ৭০ লাখ টাকার ওষুধ না কিনে টাকা আত্মসাতের ঘটনা জানাজানি হলে পুলিশ সদর দপ্তর হাসপাতালের তৎকালীন সুপারিনটেনডেন্টকে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে বদলি করে। আর আরএমপির প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল লতিফকে টেন্ডার এবং কেনাকাটা কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এত অভিযোগের পরেও একজন বিতর্কিত কর্মকর্তা কিভাবে পুনরায় ওই পদে বহাল হলেন এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে স্বয়ং আরএমপিতেই।

এ বিষয়ে আবদুল লতিফের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি  বলেন,  বরখাস্তের  প্রত্যাহারের তারিখ আমার মনে নেই। বিভাগীয় মামলার এখন কি অবস্থা এমন প্রশ্নের  উত্তরে তিনি বলেন, জোড়হাত করে বলছি এসব বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না আমাকে ক্ষমা করেন বলে ফোন রেখে দেন তিনি ।

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST