নাটোর প্রতিনিধি: নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) উপজেলা নিয়ে গঠিত । এ আসনের সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শিল্পপতি মোঃ আবু তালহা। তার গ্রামের বাড়ি বাগাতিপাড়ার উপজেলার প্যারাবাড়িয়ায়। বিপুল বৈভবের মালিক হিসেবে এলাকায় পরিচিতি থাকলেও রাজনীতিতে তার কোনই নাম-গন্ধ ছিলনা।
১৯৯৬ সালেই প্রথম তিনি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি প্রার্থী মোঃ ফজলুর রহমান পটলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দিতা করে মাত্র সাত হাজার আটশ’ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়ে ছিলেন। একই আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি এক লাখ ২৩ হাজার ৮শ’ ৩৫ ভোট পেয়ে তার নিকটতম বিএনপি প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী মরহুম মোঃ ফজলুর রহমান পটলকে ২০ হাজার ২১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আবু তালহা ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফ নামায় নাটোরে পৈত্রিক কৃষি জমি ৮০ বিঘা, অকৃষি জমি নিজ নামে ৯২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং স্ত্রীর নামে ৭৬ দশমিক ৫ শতাংশ, স্ত্রীর গহনা, ব্যাংকে থাকা নগদ টাকা ও ডলার এবং বিভিন্ন কোম্পানীর শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকার মত সম্পদ দেখিয়েছেন। এছাড়াও ঢাকার বনানীতে নিজ নামে একটি পাঁচতলা বাড়ি এবং চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে স্ত্রীর নামে ছয়তলা বাড়ি রয়েছে। তার দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ে এবং জামাই জার্মানীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ছেলে এবং ছেলের বৌ ঢাকার উত্তরায় একটি মহিলা হোস্টেল পরিচালনা করেন এবং বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি চট্টগ্রামে আমদানী-রফতানীর ব্যবসা শুরু করেন। আবু তালহার বিদেশ থেকে মদ ও প্রসাধনী সামগ্রী আমদানীর লাইসেন্স রয়েছে। চট্রগ্রামে তার একটি বার এ্যান্ড রেষ্টুরেন্ট আছে। তিনি ২০০৯ সালে ২৯শে সেপ্টেম্বর মেসার্স মিডিয়া এন্টারপ্রাইজের নামে পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, খুলনা শাখায় এলসি খুলে ৪ হাজার ৫৫ দশমিক ৫৬ মার্কিন মূল্যের বিদেশী সাবান ও বডি স্পে জাতীয় প্রসাধনী পণ্য দুবাই থেকে আমদানী করে। কিন্তু মংলা বন্দর দিয়ে আমদানীর আড়ালে অবৈধ্য ভাবে ২৪হাজার ২৪০ বোতল অনুমোদনহীন বিভিন্ন প্রকার বিদেশী মদসহ দুই কন্টেইনার ইলেক্ট্রনিক ও অন্যান্য পণ্য আমদানী করে। এভাবে তিনি মংলা বন্দর দিয়ে ঘোষনাবহির্ভূত মালামাল আমদানি করে কোটি ৫০লাখ অন্যায় ভাবে পাচার করে দেশের ক্ষতিসাধন করে।
২০১১ সালে ৪ জুলাই মংলা (বাগেরহাট) থানায় আবু তালহা সহ তার সহযোগী ৫জনের বিরুদ্ধে দুদক একটি মামলা দায়ের করেন। আমদানীর অনুমতি থাকলেও তিনি ক্ষমতার জোরে অবৈধ ভাবে বিদেশ থেকে অনেক বেশী মদ আমদানী করে দেশীয় কিছু বারে সরবরাহ করেন। এ মামলায় তাকে বিএনপির সরকার তার লাইসেনন্স স্থগিত করে দিলে ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রভাব খাটিয়ে তিনি আবারও সেই লাইসেন্স নবায়ন করিয়ে নিয়েছেন।
চট্টগ্রামে তিনি অংশিদারীত্বের ভিত্তিতে গার্মেন্টস ব্যবসা পরিচালনা করেন। তিনি ব্যবসায়িক কাজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং আরব আমিরাত সহ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার সময় বড় অংকের টাকার বিনিময়ে নিজের লোক পরিচয় দিয়ে সাথে নিয়ে গিয়ে আসার সময় সেই সব লোকদের ওই দেশেই রেখে আসেন। এটাও তার একটি ভালো ব্যবসা।
২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে এলাকায় উন্নয়নের নামে টিআর এবং কাবিখার সকল প্রকল্পে চার থেকে পাঁচ হাজার আগাম টাকা নিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছিল। এক্ষেত্রে এলাকার লোকজন জানান মসজিদ-মাদরাসা বা শশ্মান-গোরস্থান কোনটিই বাদ যায়না। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেয়ার সময় তিনি জনপ্রতি বেশ কয়েক লাখ টাকা করেও হাতিয়ে নেন।
এছাড়াও তিনি একাধিক মামালার আসামী। আবু তালহা সংসদ সদস্য হওয়ার আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফ নামায় যে সম্পদ দেখিয়ে ছিলেন এখন তা ফুলে-ফেঁপে অনেক বেশী হয়েছে। সাবেক এই সংসদ সদস্য আবু তালহা তার নিবাচর্নী এলাকায় আসেই না বললেই চলে। নেতাকর্মী সাথে কোন যোগাযোগ করেন না অতিথি পাখি মতো নির্বাচনের সময় এলাকায় আসে , নির্বাচন শেষ তো ঢাকায় চলে যায়। দুর্নীতি করে সারাদেশে এমন দুর্নীতিবাজ ও অতিথি পাখি দুর্নীতি মামলাসহ একাধিক মামলার আসামী আবু তালহ কে আগামী নির্বাচনে সাংসদ সদস্য প্রার্থী হিসাবে দেখতে চাই না লালপুর-বাগাতিপাড়া উপজেলার সর্বসাধারন জনগন।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মরহুম আওয়ামী লীগ নেতা মমতাজ উদ্দিনের ছোট ভাই বর্তমান নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবুল কালাম আজাদ এবং লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন জুলফুর বাড়ি তার নির্বাচনী এলাকায় হওয়ায় তারা জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাথে আবু তালহার রাজনৈতিক সম্পর্ক ভালো না থাকায় তার অবস্থানও ভালো না। এমনকি জাতীয় পার্টির ভোটও কমে গেছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সংসদ সদস্য থাকার সময় ব্যাপক আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।
বাগাতিপাড়া উপজেলা জাতীয় পার্টি সভাপতি সমশের আলী বলেন, বেশীর ভাগ সময়ই তিনি ঢাকায় থাকেন। জাতীয় পার্টি নেতাকর্মী ও সাধারণ লোকজনের সাথে যোগাযোগ নেই বললেই চলে। তাদের ধারণা এবার ভোটে দাঁড়ালে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হতে পারে।
এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শিল্পপতি মোঃ আবু তালহা সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিয়োগ বাণিজ্য একটি মুখরোচক অভিযোগ। এ ধরণের অভিযোগ শুধু মিথ্যা তাই নয়, এগুলো রুচিহীন এবং ষড়যন্ত্রমুলক রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ।
তিনি আরো বলেন, এ আসন থেকে আমি মহাজোট থেকে একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। এলাকার লোকজন ভালবাসে বলেই আমাকে নির্বাচিত করেছিলেন। যে যাই বলুক আগামী একাদশ নির্বাচনে তিনিই দলের মনোনয়ন পাবেন এবং বিজয়ের বিষয়েও তিনি শতভাগ আশাবাদী। তিনি এলাকার রাস্তা ঘাট ব্রীজ কালভার্ট সহ নানামুখী উন্নয়নের মাধ্যমে পশ্চাদপদ লালপুর-বাগাতিপাড়া এলাকার প্রভূত উন্নয়ন করেছেন ও অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করেছেন।
খবর ২৪ঘণ্টা/ নই
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।