আজহারুল ইসলাম বুলবুল : রাজশাহীর দুর্গাপুরে গবাদি পশুর শরীরে দেখা দিয়েছে ভাইরাস ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগ। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকটি গরু সম্প্রতি মারা গিয়েছে। ফলে গরুর খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। রোগটির সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক নেই। তবে বাইরের দেশ থেকে ভ্যাকসিন ক্রয় করে প্রতিষেধক হিসেবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে লাম্পি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।
খামারিরা বলেন, রোগটি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত পরামর্শ ও দিচ্ছেন তাদের। কিন্তু চাহিদার তুলনায় প্রতিষেধক হিসেবে যথেষ্ট ভ্যাকসিনের ঘাটতি রয়েছে। নিরুপায় হয়ে গ্রামের অনেক খামারিরা কিছু হাতুড়ে পশু ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। তাদের ভুল চিকিৎসায় আক্রান্ত অনেক গবাদিপশু সুস্থ না হয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
বুধবার (৭ মে) সকালে উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে দেখা হয় পানানগর এলাকার জাফর নামে এক খামারির সাথে। তিনি বলেন, প্রাণী সম্পদ হাসপাতালে এসে ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ নিয়ে আক্রান্ত গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে। খবর দিলে বাড়িতে গিয়ে ডাক্তার চিকিৎসা দিয়ে আসেন। তবে আমার আরো ৩ টি গরু আছে ‘লাম্পি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে দুচিন্তায় আছি। এ অবস্থায় গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। তিনি আরও বলেন, এলাকায় কয়েটি গরু মারা গেছে ‘লাম্পি ভাইরাসেথ আক্রান্ত হয়ে।
জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিকের বেশি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে অনেক গরুর মৃত্যুও হয়েছে। অনেক খামারি ও কৃষক লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু বিক্রি করছেন কম দামে। প্রতিনিয়ত এ সংক্রমণ বেড়েই চলেছে।
উপজেলার জয়নগর,দেলুয়াবাড়ি,দেবীপুর,পানানগরসহ কয়েকটি এলাকায় এ রোগ দেখা দিয়েছে। ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামে গ্রামে। গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বর্তমান সময়ে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা চালাতে ও হিমশিম খেতে হচ্ছে পশুর মালিকদের।
উপজেলার দেবীপুর গ্রামের জাহিদ বলেন, তাদের খামারের একটি বড় গরুর পা ফুলে সারা গায়ে ফোসকা বের হয়েছে। বড় গরুটির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। শরীর পচে গর্ত হয়ে গিয়েছিল পরে উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছে । কিন্তু তার কিছুদিন পরে আবার ছোট বাছুর এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কাছে চিকিৎসা নিতে এসেছি। বাছুরটির অবস্থা বেগতিক।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিস সুত্রে জানায়, উপজেলায় ভাইরাস ‘লাম্পি স্কিন সংক্রমণ বেড়েই চলছে। এর সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। রোগের ভ্যাকসিন রয়েছে তবুও সেটি চাহিদার তুলনায় পর্যন্ত নয়। তবে প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত পশুকে এন্টিহিস্টামিন ও প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো হলে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোছা:জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, লাম্পি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গবাদিপশু খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে। গায়ে গুটি গুটি ফোড়ার মতো হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়। একটি গরু সুস্থ হতে প্রায় কয়েক মাস সময় লাগে। তিনি বলেন, অসুস্থ গরুটিকে প্রথমেই আলাদা করতে হবে। মশারি টাঙিয়ে রাখতে হবে, যেন মশা বা মাছি গরুর শরীরে না বসে। সংক্রমন গবাদিপশুর শরীরে মশা বা মাছি অসুস্থ গরুটিকে কামড় দিয়ে যদি সুস্থ কোনো গরুকে কামড়ায় সেক্ষেত্রে অন্য গবাদিপশু আক্রান্ত হয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, লাম্পি ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে উপজেলায় প্রায় ৫৪০ জন খামারির সাথে পরামর্শ প্রদান, লিফলেট বিতরণসহ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বিএ..