আজহারুল ইসলাম বুলবুল: রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় উৎপাদিত আম, মাছ ও মিষ্টি পানের জন্য রয়েছে সুখ্যাতি তবে শুধু মিষ্টি পান চাষে করে বদলে গেছে প্রায় দেড়লাখ মানুষের জীবন ও জীর্বিকা। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তারা এই পানচাষের সঙ্গে জড়িত। ফলে কৃষি অর্থনীতি ও দিনদিন চাঙ্গা হচ্ছে। উপজেলা জুড়ে সম্ভাবনাময় এই দীর্ঘমেয়াদী ফসলটি প্রায় ৫০০ বছর ধরে চাষ হয়ে আসছে বলে জানান চাষীরা।
উপজেলার মানুষের কাছে পানের পাতায় যেন টাকা। তাই কৃষকরা পানের বরজকে বলে থাকেন ‘ক্যাশ ব্যাংক’। আর পানগাছকে বলে থাকে টাকার গাছ। কারন যখন প্রয়োজন হয় তারা পান বরজ থেকে পানপাতা তুলে সরাসরি বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেন।
মাত্র ৫ থেকে ১০ কাঠা জমি থাকলেই একজন ছোট চাষী পান চাষ করে সংসার চালিয়ে নিতে পারেন। যাঁর জমি নেই, তিনি জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদ করেন।
শুক্রবার (৯ মে ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার পৌর এলাকার দেবীপুর, নওপাড়া ইউনিয়নেরন শ্যামপুর, শিবপুর, নান্দিগাম, গোপালপুর এলাকায় ছোট-বড় শত শত পানের বরজ রয়েছে। এসব পানের বরজের ভেতরে চোখ জুড়ানো সারি সারি পানের গাছ যেমন সৌন্দর্য বর্ধন করছে, তেমনি অর্থনৈতিক ভাবেও সমৃদ্ধি এনেছে চাষীদের।
৬৪টি পানপাতায় এক বিড়া। আর ৩২ বিড়াতে এক ‘পোয়া’। এবার পান চাষিরা সর্বোচ্চ ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৮০০ টাকা পোয়া দরে পান বিক্রি করছেন। এখন ভালো বড় পান সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত পোয়া বিক্রি হচ্ছে। সর্বনিম্ন সাতশত টাকা। কিন্তু পানের কাণ্ডপচা ও চিনিপোঁকা নামক রোগ নিয়ে চাষিরা খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে,দুর্গাপুর উপজেলায় এবার মোট পান বরজের আবাদ রয়েছে ১৪৩০ হেক্টর। এসব পান আবাদ হয় উপজেলার সকল ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি এলাকায় এবং পৌরসভার কিছু কিছু এলাকাতেও।
চাষীরা জানান, এখানকার উৎপাদিত পানের কদর থাকায় বাজারজাত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায় ও বিদেশে। এই পান কিনতে সপ্তাহের রবিবার ও বুধবার হাটে ও সাপ্তাহে ৬ দিন শ্যমপুর,আলীপুর, গোপালপুর, নারায়নপুর,দাওকান্দি আড়তে ছুটে আসেন বিভিন্ন জেলার পানের পাইকাররা। নওপাড়া ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের পানচাষী আসাদ মোল্লা বলেন, পানের বরজ দেড় বিঘা জমিতে লাগিয়েছি। ১৫ বছরের অনেক পুরোনো এই বরজই তাঁর পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস। প্রতিবছর পানের বরজ পরিচর্যার সব খরচ বাদ দিয়েও আয় হতো এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এখন কমে এসেছে লাভের পরিমাণ।
শিবপুর গ্রামের পান চাষী সেলিম রেজা বলেন, আমি এক বিঘা জমিতে পান চাষ করছি। পান চাষ করতে গেলে পানের বিভিন্ন রোগ-বালাই দেখা দেয়। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করতে না পারায় অনেক সময় কার্যকারী বালাইনাশক প্রয়োগ করতে পারি না। এজন্য আমাদের কৃষি বিভাগের পরামর্শ প্রয়োজন হয়।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এখানে পান চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পানের বরজ করার শুরুটা ব্যয়বহুল। ফলে অনেকের আগ্রহ থাকলেও পান চাষ করতে পারছেন না। যদি আগ্রহী চাষীরা সরকারি সহযোগিতা পায় তাহলে এখানে চাষের পরিমাণ অনেকটা বাড়বে এবং অর্থনৈতিকভাবেও সমৃদ্ধি আনবে। কৃষি বিভাগ থেকে ন্যায্যমূল্যে সার, কীটনাশক, খৈলসহ বিভিন্ন উপকরণ প্রদান করলে কৃষক ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত হতো। এছাড়াও আমাদের কৃষকদের প্রয়াজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে পানচাষে লাভবান হবে।
দুর্গাপুর উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ হোসাইন জানান, পানচাষীদের কোন উপকরণ সহায়তা কিংবা প্রশিক্ষণ দেওয়ার মত সুযোগ আপাতত আমাদের এখানে নাই। তবে আমরা তাদের পরামর্শ প্রদান ও সহায়তা করে থাকি।
উল্লেখ্য, ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ‘রাজশাহীর মিষ্টি পান’। গত বছরের ৩১ আগস্ট রাজশাহীর মিষ্টি পানকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে।
বিএ..
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।