খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ বাহিনী একে অন্যের সঙ্গে সহযোগিতা করবে। একইভাবে উভয় দেশ যৌথভাবে কাজ করবে মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে। বুধবার ভারত ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে সপ্তম দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিবৃতিতে এই কথা জানানো হয়েছে।
দিল্লীর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে আসামের এনআরসি প্রসঙ্গ তোলা হবে বলে ভারতীয় কিছু সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছিল। তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে তাতে অবশ্য এই প্রসঙ্গের কোনো উল্লেখ নেই। এর আগে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যে ছয়টি বৈঠক হয়েছিল, তার কোনোটিতেই ভারত এনআরসি প্রসঙ্গ তোলেনি।
দ্বীপক্ষীয় এই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ভারতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৈঠকের শুরুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।
আলোচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় বারের মত দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভিনন্দিত করেন। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে ভারত সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
উভয় মন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, যেটি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে শুরু হয়েছিল তা স্মরণ করেন এবং তা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দু’দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য, ধর্ম নিরপেক্ষতা, উন্নয়ন সহযোগিতা ও অন্যান্য সব বিষয়ে গভীর মিল রয়েছে এবং দুই দেশের প্রতিবেশীমূলক সম্পর্ক পৃথিবীর মধ্যে এক অনন্য দৃষ্টান্ত বলে তারা মনে করেন। নিরাপত্তা এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনাসহ সকল বিষয়ে দু’দেশ অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়গণ সভায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে কার্যকর সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় তাদের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং এ উদ্দেশ্যে দুই দেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনীর পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দেন।
বাংলাদেশের সীমানা/ভূমি ব্যবহার করে কোন সন্ত্রাসী, জঙ্গি, ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী যাতে ভারতসহ অন্য কোন দেশের ক্ষতি সাধন করতে না পারে সে বিষয়ে বাংলাদেশের গৃহীত নীতির ভূয়সী প্রশংসা করেন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ্।
আন্ত:সীমান্ত অপরাধ দমনের প্রয়োজনীয়তার কথা দুই মন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করেন। সভায় মাদক পাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধে উভয় দেশ যৌথভাবে কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার নাগরিকদের নিরাপদে ও দ্রুত স্বদেশ প্রত্যাবসানে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
২০১৭ সাল থেকে ৪ কিস্তিতে ভারত সরকার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার নাগরিকদের মানবিক সহযোগিতা প্রদান করায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানান। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সভা শেষে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্কে বাংলাদেশ ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানান।
সভায় ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ দলের অন্যান্যরা হলেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান, আইজিপি ড. মো. জাবেদ পাটোয়ারী, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সোহাইল হোসেন খান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহম্মেদ, জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবুবকর সিদ্দীক, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক নীলিমা আক্তার, জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব ড. মো. হারুন-অর-রশিদ বিশ্বাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জনাব মো. তারেক প্রমুখ।
ভারতের পক্ষে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শ্রী জি কিষাণ রেড্ডি, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শ্রী নিত্যানন্দ রাই, ইউনিয়ন স্বরাষ্ট্র সচিব রাজিব গৌভা ও সচিব (সীমান্ত ব্যবস্থাপনা) বি আর শর্মা প্রমুখ।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন