গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দ্বিখন্ডি হয়ে গেছে রাজশাহীর পুঠিয়ায় আ’লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, আ’লীগ এখন শুধু একটি নাম। মূলত সাবেক সাংসদ ও জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা এবং বর্তমান এমপি ডাক্তার মনসুর রহমানের অনুসারি হিসাবে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে নেতাকর্মীরা।
রয়েছে পৃথক দলীয় কার্যালয়। দলীয় কর্মসূচীও পালন করা হয় আলাদা ভাবে। আর সাম্প্রতিক সময়ে বিভক্তি ঘিরে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মাঝে দূরত্ব আরো বেড়েছে।
সম্প্রতি বিড়ালদহ হাই স্কুলের সভাপতি পদ ঘিরে লাঞ্ছিত হয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও একজন আ’লীগকর্মী। সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি একই স্থানে আ’লীগের শান্তি সমাবেশও পালিত হয়েছে পৃথক ভাবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আ’লীগের সদস্য এম হিরা বাচ্চু বলেন, দলের মধ্যে বিভেদ এটা শুভকর নয়। দীর্ঘ ১৪ বছর থেকে আ’লীগ ক্ষমতায়। এখন অনেকই নিজেদের বড় মাপের নেতা দাবী করছে। অথচ এখন যারা সামনের সারিতে বসে আছে, তারা আ’লীগে বিগত দুঃসময়ে কোথায় ছিল? তিনি বলেন, আ’লীগ একটি বৃহৎ দল। আর নেতাকর্মীদের মাঝে প্রতিযোগিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আগামি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সকলেই আবার এক কাতারে চলে আসবে।
তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন বর্তমান রাজশাহী জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা। এরপর তার একলা চল-রে নীতির কারণে দলের মধ্যে অন্তঃদ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরপর দশম সংসদ নির্বাচনে তিনিই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারো সাংসদ নির্বাচিত হন। আর তার সাথে নেতাকর্মীদের বাড়তে থাকে আরো দুরত্ব।
তবে নানা কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে দল থেকে আর মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তার পরিবর্তে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আ’লীগের এমপি হয়ে আসেন ডা. মনসুর রহমান। আর এরপর থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সভাপতি পদ নিয়ে দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মাঝে দ্বন্দ্ব লেগেই আছে।
নেতাকর্মীরা বলছেন, আব্দুল ওয়াদুদ দারা এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তার অনুসারিদের নিয়ে পুঠিয়া সদর এলাকায় মহসড়কের পাশে দলীয় কার্যালয় স্থাপন করে। অপরদিকে গত বছর মার্চে উপজেলা আ’লীগের সম্মেলনে বর্তমান সাংসদ সমর্থক সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর তার অনুসারিরা পৃথকভাবে রাজবাড়ির শিবমন্দিরের সামনের ভবনে অস্থায়ী দলীয় কার্যালয় শুরু করেছে। সেই সাথে তারা দলীয় কর্মসূচী গুলো পৃথক ভাবে আয়োজন করে।
এদিকে উপজেলা আ’লীগের সম্মেলন হয়েছে এক বছর আগে। অথচ এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। ৬টি ইউনিয়ন কমিটির মধ্যে তিনটির সম্মেলনে সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচিত হয় বর্তমান সাংসদ সমর্থকরা। আর এরপর নানা অযুহাতে বাকি তিনটি ইউনিয়ন ও পৌর কমিটির সম্মেলনের তারিখ স্থগিত হয়ে যায়।
তবে বর্তমান সাংসদ ডাক্তার মনসুর রহমান এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে এখন কোনো কথা বলবেন না বলে জানান।
এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, দলের মধ্যে কোনো বিভেদ বা বিভক্তি নেই। আমি যখন এমপি ছিলাম তখন পুঠিয়াতে দলীয় কোনো দপ্তর ছিলো না। যার কারণে নেতাকর্মীদের সুবিধার্থে সদর এলাকায় একটি দলীয় কার্যালয় স্থাপন করা হয়।
তিনি বলেন, এখন আমি জেলার রাজনীতি করি। উপজেলায় কে কোথায় দলীয় কার্যালয় করেছে সেটা আমার জানা নেই।
বিএ/