ওমর ফারুক, রাজশাহী :
দাম নিয়ে শঙ্কার মধ্যেই রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলায় আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। গত ৩/৪ দিন ধরে কৃষকরা উৎসবের মতো আমেজে ধান কাটা শুরু করেন। শীত শুরু হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ধান কাটা শুরু হওয়ায় এখন কৃষকদের ঘরে ঘরে যেন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। কারণ ভরপুর শীতে উঠা এই আমন ধানে অনেক পিঠা তৈরি করে কৃষানি বধূরা। উৎসবের আমেজে ধান কাটা শুরু হলেও ন্যায্য মূল্য নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। কারণ গত বছর কৃষকরা আমনের ন্যায্য দাম পায়নি কৃষকরা। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কৃষকদের লোকসান গুনতে হয়েছে। লোকসান হওয়ার কারণে এবার আমন ধান চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন কৃষকরা। তারপরও জেলার উপজেলাগুলোতে অন্য কোন তেমন পেশা না থাকায় আমন চাষ করেন কৃষকরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর রাজশাহীর ৯টি
উপজেলা ও নগরের দুটি থানায় মোট আমন ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪ হাজার ৯৮১ হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রার থেকে আরো বেশি আমন ধান চাষ হয়। জেলায় এবার মোট ৭৬ হাজার ২৪৫ হেক্টার জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২% বেশি আমন চাষ হয়েছে। কৃত্রিম সেচ পাওয়ার কারণে এবার আমন ধান ভালো হয়। বাম্পার ফলনের আশা ছিল কৃষকদের মধ্যে। কিন্ত ধানের শীষ ফোটা অবস্থায় দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে যায় ও ধানে পচন, বাইলকাঠি ও কারেন্ট পোকার আক্রমন হয়। এতে আবারো কৃষকদের মধ্যে কাঙ্খিত ফলন নিয়ে চিন্তা দেখা দেয়। সে সময় কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল যে, ওষুধ স্প্রে করার জন্য। স্প্রে করার পর ধান আবার স্বাভাবিক
হয় ও পেকে যায়। তার ১০-১৫ দিনের মাথায় ধান পুরোপুরি পেকে যায়। কৃষকরা উৎসবের আমেজে ধান কাটা শুরু করে। বরেন্দ্রের এই মাটিতে যেদিকে চোখ যায় শুধু সোনালী ফসলে ভরা মাঠ। বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান কাটা শ্রমিকের সংকট দেখা দেওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিয়াড় অঞ্চল থেকে শ্রমিক আসতে শুরু করেছে। স্থানীয় ও বাইরের শ্রমিক দিয়েই ধান কাটা শুরু হয়েছে। ফলন খুব একটা ব্যাহত হয়নি বলে দাবি কৃষকদের। কৃষকরা শঙ্কার মাঝেও ভালো ফলন পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তবে ন্যায্য দাম নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে কৃষকদের মাঝে। কৃষকদের মাঝে শঙ্কা থাকলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের চিন্তা না করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে জানানো হয়েছে, এবার সরকার প্রতি কেজি আমন ধান ২৬ টাকা দরে কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সরকার ধান কিনলে কৃষক
তাদের সোনালী ফসলের ন্যায্য দাম পাবেন। রাজশাহীর তানোর উপজেলার রাহিদুল নামের এক কৃষক বলেন, আল্লাহর দয়ায় ধানের ভালো ফলন হচ্ছে। অন্য বছরের তুলনায় আমন চাষে খরচ বেশি হয়েছে। ন্যায্য দাম পাবো কিনা বুঝতে পারছিনা। ন্যায্য দাম না পেলে আগামী বছর ধান চাষ করা দায় হয়ে পড়বে। আব্দুল্লাহ নামের আরেক কৃষক বলেন, ধান কাটা শুরু করেছি। আনন্দের থেকে শঙ্কায় বেশি রয়েছে। গত বছর ভালো দাম পাইনি। লোকসান হয়েছে। এবারো লোকসান হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়বো। তাই সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, এ বছর আমরা কৃষকরা যাতে ন্যায্য দাম পায়
সেই ব্যবস্থা করার। ধান চাষে পূর্বের তুলনায় অনেক খরচ বেড়েছে। শুধু এই দুইজনের নয় জেলার অন্যান্য কৃষকদের আমন ধানের ন্যায্য দাম পাওয়ার দাবি করেছেন সরকারের কাছে। এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, রাজশাহী জেলায় আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকরা কাঙ্খিত ফলন পাবেন বলে আশা করছি। এ বছর কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার এ বছর ২৬ টাকা কেজিতে আমন ধান কেনার ঘোষণা দিয়েছেন। সরকার ধান কিনলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবেন বলে আশা করছি।
আর/এস
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।