ওমর ফারুক :
দলের সকল পর্যায়ের নেতারা চাইলে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হতে চান রাজশাহী মহানগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার।
বুধবার বিকেলে খবর ২৪ ঘণ্টাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এ কথা জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, নগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কিছু প্রত্যাশা থাকেই। সেই প্রত্যাশার জায়গা থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়ার ইচ্ছা হয়। আগামী রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নগর আ’লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ভাই যদি নির্বাচন করেন তাহলে তার পক্ষ থেকে মাঠে সর্বাত্মক কাজ করা করবো। ২০১৮ সালের সংসদ নিবার্চনে আমি এমপি প্রার্থী এটা সবার মুখে মুখে রটে গেছে। এক্ষেত্রে দলের সকল পর্যায়ের নেতারা চাইলে এমপি প্রার্থী হবো। তাছাড়া প্রার্থী হবো না।
শরিকদের বিষয়ে বলেন, রাজশাহী সদর আসনে পর পর দুইবার ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদলকে এমপি পদে ছাড় দেওয়ার কারণে আ’লীগ নেতাকর্মীরা অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এবার আর বঞ্চিত হয়ে চায়না।
আ’লীগের এমপি না থাকার কারণে রাজশাহীকে জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা ধরা হয়। এ এসবকিছু মোকাবেলা করা এবং দলের নেতাকর্মীদের আরো সক্রিয় করার জন্য দলের একজন এমপি থাকা দরকার। অনেকেই নির্বাচন করার চিন্তা করতে পারে। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমিও এমপি নির্বাচন করার দাবি করতেই পারি। তারপরও দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষ হয়েই কাজ করবো। এর কোন ব্যতয় ঘটবে না।
সাক্ষাতকার গ্রহণকালে। ছবি: খবর 24 ঘণ্টা।
দলের মেয়র হিসেবে লিটন ভাই ও দলীয় এমপি থাকলে দু’জনর সমন্বয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। সদরে দলের এমপি না থাকলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক কিছুই দিয়েছেন। উন্নয়ন কাজগুলো বাস্তবায়ন হলে বেকারত্বের হার অনেক কমবে। আগামী দুই বছরের মধ্যেই সেগুলো বাস্তবায়ন হবে।
শরিক দলের মাননীয় এমপির বিরুদ্ধে আমাদের কোন অভিযোগ নাই। কিন্তু আমরা কষ্টে আছি, ব্যথিত হয়ে আছি এ কারণেই যে তিনি আ’লীগের নেতাকর্মীদের প্রধান্য দেন না, বিপদের সময়ে পাশে থাকেন না। যার কারণে আমরা কষ্ট পাই। এই কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চয় হয়ে আছে। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দাবি দলের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। এর ব্যতয় ঘটলে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে।
সবকিছু চিন্তা করে যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতারা দলের কাউকে মনোনয়ন দেন তাহলে উন্নয়নের বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে। উন্নয়ন অব্যাহত থাকতে রাজশাহীর মানুষ আবারো নৌকার পক্ষেই তাদের মতামত দেবে বলে বিশ্বাস করি।
দল আ’লীগ থেকে একক প্রার্থী দিলে আপনার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আ’লীগের মনোনয়ন বোর্ড আছে। সেখানে তিনজনের নাম পাঠাতে হয়। তাদের কাছে সবার বিষয়েই রিপোর্ট আছে। তারা সবার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে একজনকে মনোনয়ন দেবেন। গত ২২ ফেব্রুয়ারীর জনসভায় রাজশাহীতে এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কাজ করো। উঠান বৈঠক করে সরকারের উন্নয়ন জনগনের কাছে তুলে ধরো। যাকে মনোনয়ন দিলে নৌকার পক্ষে ভোট টানতে সক্ষম হবে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যেই কাজ করা হচ্ছে। মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপার বোর্ডের। মনোনয়ন পেলে নৌকার পক্ষে সদর আসটা বিজয়ী হওয়া সম্ভব হবে।
খালেদা জিয়ার সাজাকে কেন্দ্র করে বিএনপি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে আপনাদের ভূমিকা কি হবে এমন আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এতিমদের টাকা মেরে জেলে গিয়েছেন। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে কেউ যদি অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করে তাহলে তা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করা হবে। কাউকে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না।
এমপি প্রার্থীতা পেলে এবং পরবর্তীতে এমপি নির্বাচিত হলে রাজশাহীবাসীর জন্য কি করবেন সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমপি নির্বাচিত হলে প্রথমেই দলীয় নেতাকর্মীদের প্রাধান্য দিব। সেই সাথে দলমত নির্বিশেষে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য শিল্প কারখানা তৈরির ব্যবস্থা করবো। রাজশাহীকে সবুজ নগরীতে পরিণত করা হবে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। রাজশাহীতে যে মদের ভাটির লাইসেন্স দেওয়া আছে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর মাদকের বিষয়ে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হবে। মাদক ব্যবসা চলতে দেওয়া হবে না। মাদকমুক্ত রাজশাহী গড়ে তোলার জন্য যা যা করা দরকার তাই করা হবে।
সাক্ষাতকার গ্রহণকালে। ছবি: খবর24 ঘণ্টা।এমপি নির্বাচিত হলে যে বেতন ভাতা পাবেন তা অসহায় দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিরতরণ করার কথাও জানান তিনি।
আ’লীগের রাজনীতিতে আসা প্রসঙ্গে তিনি জানান, পারিবারিকভাবেই তিনি আ’লীগের রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। বাংলাদের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আরো বেশি আকৃষ্ট হন। সেই ভাষণকে জানতেই দলে আসা। ১৯৮৮ সালে বিবি হিন্দু একাডেমীতে ৮ম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে স্কুল সম্পাদকের দায়িত্ব পান। তারপর নগর ছাত্রলীগের তৎকালীন সেক্রেটারী হাবিবুর রহমান বাবু রাজশাহী কলেজে তাকে মিটিংয়ে নিয়ে যান। ১৯৯০ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে পাড়া মহল্লায় ব্যাপক ভূমিকা রাখেন তিনি। ১৯৯১ সালে রাজনীতিতে সক্রিয় ভাবে যোগ দেন। তারপর দুই বার নগর ছাত্রলীগের দুই বার সদস্য, প্রচার সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক। এরপর মূল দলে মহানগর আ’লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক পদ পান। ওই দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পাওয়ার পর উপ-দপ্তর সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করেন। আবার কমিটি হলে তিনি সেই পদ পান। এদিকে, ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে দলীয় সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তারপর থেকে দলের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন পরিশ্রমি এই নেতা।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে