খবর২৪ঘণ্টা,আন্তর্জাতি ডেস্ক: সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দলিত সংগঠনের ডাকা বনধ বা বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সোমবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল গোটা ভারত। অধিকারের দাবি জানাতে এসে পুলিশের গুলিতে লাশ হয়েছেন নয় বিক্ষোভকারী। এদের মধ্যে মধ্যপ্রদেশেই নিহত হয়েছেন ছয়জন। বাকি তিনজন মারা গেছে রাজস্থান ও উত্তর প্রদেশে। দলিত-পুলিশ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি ও আনন্দবাজার পত্রিকা।
ভারতে দলিত সুরক্ষার জন্য যে কঠোর আইন আছে, তা সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক এক নির্দেশে শিথিল হয়ে পড়েছে – এই অভিযোগেই সোমবার ভারত বনধের ডাক দিয়েছিল দলিতদের নানা সংগঠন।
ভারতে তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত মানুষদের সুরক্ষার আইনে গত ২০শে মার্চ দুটো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করে সুপ্রিম কোর্ট। যার ফলে দলিতদের নির্যাতনে অভিযুক্তদের আর সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা যাবে না এবং তাদের জামিনেরও সুযোগ থাকবে। দলিত সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ ছিল এই রায়ের বিরুদ্ধেই।
সোমবার সকাল থেকে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং পাঞ্জাবে আন্দোলনকারীরা বনধ সফল করতে রাস্তায় নেমে পড়েন। কোথাও কোথাও তাদের আন্দোলনের জেরে ব্যাহত হয় স্বাভাবিক জনজীবন। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছিল পঞ্জাব, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায়। দলিতদের ডাকা বিক্ষোভে অচল হয়েছিল কমপক্ষে আটটি রাজ্যের জনজীবন। পাঞ্জাবে স্থগিত করা হয়েছে সিবিএসই-র দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা। পাঞ্জাবের পাশাপাশি আরও কয়েকটি রাজ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তাদের অবরোধের মুখে কয়েকটি রাজ্যে বন্ধ ছিল একাধিক দূরপাল্লার ট্রেন। সড়ক অবরোধের জেরে থমকে গিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের বেশ কয়েকটি জায়গার যান চলাচল। কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
পরিস্থিতি সামলাতে মধ্যপ্রদেশের মোরেনা, গোয়ালিয়র এবং ভিন্দ জেলায় কার্ফু জারি করা হয়। ভিন্দ জেলার ঘটনা ছিল সবথেকে ভয়াবহ। লাঠি, কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেও পরিস্থিতি সামলাতে পারেনি পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে সেনা তলব করতে হয়েছিল। ওই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে মোট ছয়জন।
সোমবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল রাজস্থানের জয়পুর, বাড়মের, অলওয়ার এলাকাগুলো। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অলওয়ারে মারা গিয়েছেন পবন জাটভ নামে ২৮ বছর বয়সি ওই বিক্ষোভকারী। গোটা রাজস্থানে পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে আহত অন্তত ২৮ জন।
পাঞ্জাব, রাজস্থান, বিহার, উত্তরপ্রদেশ রাজ্যেও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে সরকারি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এতে আহত হয়েছেন কয়েকজন যাত্রী। মেরঠে সংঘর্ষ ব্যাপক আকার নেয়। এখানে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন দুইজন। আহতয়েছেন ৪০ পুলিশসহ ৭৫ জন।
ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যেই দলিতদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সেখানে বিক্ষোভের ফলে স্কুল কলেজ, যানবাহন বন্ধ ছিল আগে থেকেই। বন্ধ ছিল ইন্টারনেটও। সকাল থেকেই জালন্ধর, ভাটিন্ডা, অমৃতসরে তলোয়ার, লাঠি হাতে রাস্তায় নামেন বিক্ষোভকারীরা। পঞ্জাবের সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীকে মজুত রাখা হয়েছে। হরিয়ানার অম্বালা, রোহতকেও বিক্ষোভ ছড়ায়। দিল্লির মান্ডি হাউস এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেন দলিত বিক্ষোভকারীরা। গুজরাতে সকাল থেকেই সড়ক ও রেল অবরোধ হয়। আহমদাবাদে বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠি চালায় পুলিশ। সুরেন্দ্রনগর, জামনগরও উত্তপ্ত হয়েছিল দলিত বিক্ষোভে।
সূত্র: বিবিসি/ আনন্দবাজার
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ