দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য সরকার কিছুই করছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার (২ জুন) ঢাকা জজ কোর্টে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ফখরুল বলেন, ‘করোনার এই দুঃসময়ে অর্থনীতিকে সচল রাখতে সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার তা হলো দিন আনে দিন খায় মানুষের জন্য সহায়তা। পত্র-পত্রিকায় বেরিয়েছে যে, করোনা মহামারির ফলে দরিদ্র হয়ে গেছে, দারিদ্র্যসীমার নিচে এসেছে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। আগের দরিদ্র তিন কোটি। তার মানে প্রায় ৬ কোটি মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে। এই মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে, অবশ্যই তাদের (দরিদ্রদের) কাছে টাকা পাঠাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ক্যাশ ট্রান্সফার করতে হবে। সেটা তারা (সরকার) করছে না। এখনো তারা একইভাবে তেলে মাথায় তেল দিচ্ছে। অর্থাৎ, যাদের ইন্ডাস্ট্রি-টিন্ডাস্ট্রি আছে তাদেরকে আবারও প্রণোদনা দিচ্ছে। এই যে দিন আনে দিন খায় মানুষগুলো, তাদেরকে কিছুই দিচ্ছে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আগামীকাল বাজেট দিতে যাচ্ছে এই সরকার। আজকে মুস্তফা কামাল সাহেব একটি পত্রিকায় ইন্টারভিউতে বলেছেন, সব ধরনের মানুষকে মাথায় রেখে বাজেট করছেন। মুস্তফা কামাল সাহেব ব্যবসায়ী মানুষ, তিনি ব্যবসাটা ভালো বোঝেন। অর্থনীতি কতটুকু বোঝেন তার নিদর্শন আমরা খুঁজে পাইনি।’
ফখরুল বলেন, ‘গতবার যখন করোনা শুরু হলো, তখনই আমরা সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রস্তাবনা নিয়ে সামনে এসেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, করোনাকালে যে অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হবে, দিন আনে দিন খায় মানুষ, শ্রমিক শ্রেণি এবং আজকে আইনজীবীরা আমাকে অনেকে স্লিপ দিয়েছেন যে, কোর্ট বন্ধ থাকার ফলে তাদের
কোনো আয় নেই। যারা আইনজীবী আছেন তারা অত্যন্ত কষ্টে আছেন। এদের জন্য কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই। তাহলে সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে সেটা কীসের? মানুষকে তারা বোকা বানিয়েছে। ব্যাংক থেকে লোন নিতে হবে সবাইকে। ব্যাংক থেকে লোন নিলে সরকারের কী দরকার? ব্যাংক থেকে নেবে। এটা প্রণোদনা হলো কোত্থেকে? এটা প্রণোদনা নয়। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংকে শোধ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, ‘প্রণোদনা তাকেই বলে, সরকার দুঃসময়েই আপনাকে যে আর্থিক সাহায্যটা করছে, সেটা ফেরত না নেয়া। আপনি সেই প্রণোদনার টাকা কাজে লাগাবেন। আমরা প্রস্তাবনায় বলেছিলাম, দিন আনে দিন খায় মানুষগুলোকে ১৫ হাজার টাকা করে তিন মাস অনুদান দিতে হবে। কিন্তু সেটা করা হয়নি। গত কয়েকদিন আগে পত্রিকায় এসেছে, গাইবান্ধার একজন কৃষক সবজি চাষ করে বলেছেন, ভাই, বিক্রি হচ্ছে
না। কারণ ট্রাক যায় না, ট্রাক আসে না। সরকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। এর চেয়ে আমাদেরকে মেরে ফেললে ভালো হতো। তাহলে কাকে প্রণোদনা দিচ্ছে? যে লোকগুলো লুট করছে, দেশের অর্থনীতিকে একেবারে শূন্য পর্যায় নিয়ে গেছে তাদেরকে দিচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বড় বড় দালাল তৈরি করছেন আর বলছেন উন্নয়ন। মনগড়া প্রবৃদ্ধির হার দিচ্ছেন আর বলছেন, উন্নয়ন। উন্নয়ন সেটা নয়।উন্নয়ন হচ্ছে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়, সে যেন ভালো খেতে পায়, বাচ্চাদের লেখাপড়া করাতে পারে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঠিক থাকে—সেটাকে বলে উন্নয়ন। এমন উন্নয়ন করেছেন, হাসপাতালে বেড নেই। একটা হাসপাতাল বানিয়েছেন কোভিডের সময়ে, ওইটা রাতের মধ্যে উধাও হয়ে গেল! ব্যবসা, আবার নতুন করে নতুন কমিশন পাবে। এটা তো কমিশন এজেন্ট সরকার, জনগণের সরকার না।’
বার ইউনিটের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুম আহমেদ তালুকদারের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোন্দকার মো. হযরত আলী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক নেতৃবৃন্দের মধ্যে আজিজুল
ইসলাম খান বাচ্চু, মহসিন মিয়া, খোরশেদ আলম, হোসেন আলী খান হাসান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
জেএন