রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা থেকে গায়েব হওয়া পুলিশের ওয়াকিটকি ছিনতাইকারীর কাছে উদ্ধার। ১১ দিনেও রহস্য উদঘাটন হয়নি! পেশাদার ওই দুই ছিনতাইকারী নাম মাভেল ও নেহাল ওরফে নিরো (২২) ওই দুই ছিনতাইকারী বাড়ি নগরীর শাহামখদুম থানার মোড় বড়বনগ্রাম বাগানপাড়া এলাকায়।
গত ২৯ জানুয়ারি নগরীর শিরোইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিজেদের পুলিশের (ডিবি) পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তিকে ধরেছিলেন মাভেল ও নেহাল। তাঁরা ওই ব্যক্তিকে তল্লাশির নামে তাঁর সবকিছু লুট করছিলেন। ওই সময় বাস টার্মিনাল পুলিশ বক্সের একটি দল দুজনকে ধরে ফেলে। তখন তাঁদের কাছে পাওয়া যায় মটোরোলা ব্র্যান্ডের একটি ওয়াকিটকি নগদ ৬ হাজার টাকা ও ২ টি চোরাই মোবাইল ফোন।
এই ওয়াকিটকি সেটটি বোয়ালিয়া থানা পুলিশেরই। প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের ওয়াকিটকি সেট দুই ছিনতাইকারীর হাতে গেল কীভাবে? ধরা পড়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজন পুলিশকে
জানিয়েছেন, তাঁরা বোয়ালিয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারন চন্দ্র বর্মনের সোর্স ছিলেন। এই থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) উত্তম কুমার রায়ের কাছ থেকে এই ওয়াকিটকি সেট পেয়েছেন তাঁরা।
তবে উত্তম এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মাভেল ও নেহালকে গ্রেপ্তারের পর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা হয়। ওয়াকিটকি সম্পর্কে বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাজহারুল ইসলাম খবর ২৪ঘ ণ্টাকে বলেন, তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন করে গত মঙ্গলবার রিমান্ড আবেদনের শুনানি ছিল।
তবে একজন আইনজীবীর মৃত্যুর কারণে শুনানি হয়নি। আজ বুধবার শুনানির কথা ছিল। কিন্তু আইনজীবীর মৃত্যুর কারণে আজও শুনানি হয়নি। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন। তদন্ত অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পুলিশের সূত্র জানায়, ছিনতাইকারীর হাতে ওয়াকিটকি সেট পাওয়ার বিষয়টি তদন্ত করতে রাজশাহী নগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মজিদ আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটি এরই মধ্যে এসআই উত্তম কুমার রায়সহ আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সাবেক ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মনকেও বুধবার আরএমপি সদর দপ্তরে তদন্ত কমিটির কাছে হাজির হতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ওয়াকিটকির কারিগরি দিক খতিয়ে দেখতে ঢাকা থেকে একটি বিশেষজ্ঞ টিম রাজশাহী আসছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালিয়া থানা থেকে ওয়াকিটকি সেটটি গায়েব হয় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর।
সেদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এটি এসআই মনিরুল ফেরদৌসের নামে বরাদ্দ ছিল। তিনি ডিউটি শেষে ওয়ারলেস অপারেটর আবদুল আউয়ালের কাছে বুঝিয়ে দেন। একই সময় ডিউটি বদলের সময় আউয়াল সেটি বুঝিয়ে দেন আরেক অপারেটর আমান ওরফে রূপমের কাছে। তারপর ওয়াকিটকিটি কীভাবে ছিনতাইকারীর কাছে গেছে সে রহস্যেরই জট খুলছে না। সূত্র আরও জানায়, ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মনের সোর্স ছিলেন নেহাল ও মাভেল।
ওয়াকিটকি সেট খোয়া যাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলেও এ নিয়ে থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়নি। ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মনকে সম্প্রতি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়। তাঁর পোস্টিং এখন এপিবিএনের ৬ ব্যাটালিয়ন, খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে।
বোয়ালিয়া থানার সাবেক এসআই উত্তম কুমার রায় এখন আরএমপির শাহমখদুম থানায় কর্মরত। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা ধরা পড়েছে তারা নাকি আমার নাম বলেছে। ওরা নেশাগ্রস্ত। তারা কেন আমার নাম বলেছে তা বুঝতে পারছি না।’ তদন্ত কমিটির প্রধান আরএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মজিদ আলী এখন ছুটিতে থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মন, উত্তম কুমার রায়,এসআই আব্দুল মতিন, এসআই গোলাম মোস্তফা, এসআই শাহীন, এসআই ইফতেখার আলম, টিএসআই মনির, এএসআই রানা, এএসআই নাজমুল, এএসআই মেহেদী, এএসআই মজনু, এটিএসআই নাসিরসহ অনেকেই বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির তথ্যবহুল সংবাদ করে আসছে খবর ২৪ ঘন্টা। রহস্যজনক কারণে এদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি ।
বিএ