লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি:
সময়মত চিনি বিক্রি না হওয়ায় এবং চিনির বিক্রয় মূল্য উৎপাদন খরচ অপেক্ষা কম হওয়ায় নাটোরের লালপুর উপজেলার ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস লিঃ এখন চরম অর্থ সংকটে ভুগছে। রাষ্টয়ত্ত এ শিল্প প্রতিষ্ঠানটি বিগত ৫ বছরের মধ্যে কোন মাসেই সঠিক সময়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারেনি। বর্তমানে শ্রমিক কর্মচারীরা ৩ মাসের বেতন পাওনা রয়েছে। তিন মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় মিলের শহশ্রাধীক শ্রমিক কর্মচারীদের পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে।
শ্রমিক কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত ৪-৫ বছরের মধ্যে একটি মাসেও তারা সঠিক সময়ে বেতন পায়নি। প্রতি বারই ২-৩ মাস পরে এক মাসের করে বেতন পায়। কিন্তু এবার তিন মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত বেতনের কোন খবর তাদের কাছে নেই। এতে করে তারা সংসারের প্রয়োজন, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ,চিকিৎসা খরচসহ প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে পারছেনা। শুধু তাই নয় অর্থের প্রয়োজন মেটাতে তাদের সুদেরে ওপর টাকা নিতে হচ্ছে। আর এভাবে দিনে দিনে বাড়ছে দেনার বোঝা।
মিলের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানা যায়, মিলে প্রায় অর্ধ শতাধিক কর্মকর্তা ও শহশ্রাধীক শ্রমিক কর্মচারী কর্মরত আছে। এদের মধ্যে প্রায় সাড়ে আট’শ জন নিয়োগ প্রাপ্ত স্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারী। বাকিরা চুক্তি ভিত্তিক ও দৈনিক হাজিরায় কাজ করে। এছাড়া মিলের নিজস্ব খামারে দৈনিক হাজিরায় কয়েক’শ শ্রমিক কাজ করে। মাড়াই মৌশুম ছাড়া ( অফ সিজিনে) মিলের কর্মকর্তা ও শ্রমিক কর্মচারীদের বেতনের জন্য প্রতি মাসে প্রয়োজন হয় প্রায় ২ কোটি টাকা। তবে মাড়াই মৌশুমে কর্মকর্তা ও শ্রমিক কর্মচারীদের বেতনের জন্য প্রতি মাসে প্রয়োজন হয় সোয়া ৩ কোটি টাকার মত। যেখানে শুধু স্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য প্রয়াজন হয় ২ কোটি টাকা এবং খামারের শ্রমিকদের জন্য প্রতি মাসে প্রয়োজন হয় ৬০ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির কাছে বেতন বাবদ এখন কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা প্রায় ১০ কোটি টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক ও কর্মারীরা জানান, নভেম্বর মাস থেকে বেতন পায়নি, সিবিএ নেতাদের এবং মিলে কর্তৃপক্ষকে অনেক বলেছি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। টাকার অভাবে ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ, পিতা-মাতার চিকিৎসাসহ সংসার চালাতে পারছিনা। যে সব দোকানে মাসিক বাকিতে সদায় নিতাম, তিন মাস টাকা না দেয়ায় তারাও আর বাকিতে জিনিস দিচ্ছেনা।
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল্স শ্রমিক-কর্মচারীদের সংগঠন সিবিএ এর সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিক নেতা স্বপন পাল এ প্রতিবেদককে জানান, ‘৩ মাস ধরে আমরা বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। সারা দেশের চিনিকল গুলো এখন মৃতপ্রায়, নাটোর সুগার মিল, রাজশাহী সুগার মিল সহ প্রায় সকল সুগার মিল গুলোর শ্রমিক-কর্মচারীরা কয়েক মাসের বেতন পায়নি। বেতন চাইলে বেতনের বিপরীতে চিনি নিতে হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চিনি নিলে মূল বেতনের চাইতে শতকরা ১০-১১ ভাগ টাকা কম হয়। কোন কোন মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা পেটের দায়ে বেতনের বিপরীতে চিনি নিয়ে শতকরা ১০-১১ ভাগ লেসে চিনি বিক্রি করছে। আমাদের মিলেও ওই একই ভাবে চিনি নিতে বললেও আমরা তা গ্রহন করিনি। আমাদের বেতন পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি, তবে কবে নাগাদ আমাদের বেতন পরিশোধ করা হবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু যানা য়ায়নি।
অবসরে যাওয়া একাধিক কর্মচারী জানান, অবসরে যাওয়া ২ বছর হয়ে গেলেও তারা অবসরের সমস্ত টাকা পাননি। টাকার বদলে চিনি নিতে হচ্ছে, এতে করে তাদের লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হচ্ছে।
দেশের সর্ববৃহত এ চিনিকলটির শ্রমিক-কর্মচারীরা তিন মাস ধরে বেতন পায়নি, কি কি পদক্ষেপ গ্রহন করলে সঠিক সময়ে তারা বেতন পাবে এবং মিলটি মাথা উচু করে দাড়াবে এমন প্রশ্নের জবাবে চিনি ও খাদ্য শিল্প মন্ত্রনালয়ের সাবেক এক সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,যেহেতু চিনি শিল্প একটি রাষ্টয়ত্ত প্রতিষ্ঠান তাই এটিকে বাঁচাতে সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন, চিনির বাজার ঠিক রাখতে, চিনি ও চিনি উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে সরকারকে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে, এছাড়া উন্নত নতুন নতুন এমন আখের জাত উৎভাবন করতে হবে যার ফলন বর্তমান ফলনের চাইতে অনেক বেশি হবে এবং চিনির রিকভারীও অনেক বেশি হতে হবে। সর্বপরি সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে কর্মচারী পর্যন্ত সৎ ও নিষ্ঠার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারলে এ শিল্প আবার মাথা উচু করে দাড়াবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধের ব্যাপারে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল জানান, মিলে চিনি মজুদ আছে কিন্তু বাজারে সাদা চিনির দাম কম হওয়ায় আমাদের মিলের চিনি বিক্রি করতে পারছিনা, তাই সঠিক সময়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনের টাকা চেয়ে হেড অফিসে চিঠি পাঠানো হয়েছে, অর্থ ছাড় হলেই বেতন দেয়া হবে।
খবর ২৪ ঘণ্টা/আর