বিশেষ প্রতিনিধি: এবার রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের তালাইমারী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মাসুদ রানা ও পুলিশ কন্সটেবল জামিল আহম্মেদের বিরুদ্ধে চোরাই গাড়ী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। মাদকসহ আসামী ধরে ছেড়ে দেয়াসহ নানা অভিযোগের পর এবার চোরাই গাড়ী ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে এই দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। কন্সটেবল জামিল দীর্ঘদিন ধরে এই পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত রয়েছেন। তিনি প্রাইভেট কার ও পালসার মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। যদিও পরে তিনি প্রাইভেট কারটি তিনি ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মাসুদ রানার কাছে বিক্রি করেছেন। এসআই মাসুদ রানা কারটি এখন ব্যবহার করছেন। জামিল দীর্ঘদিন এক ফাঁড়িতে থাকার সুবাদে সবকিছুই তার চেনা। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাদক কারবারীদের সখ্যতা গড়ে তুলে হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্থ এমন অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিনের। তারপরও এই কন্সটেবল সেই ফাঁড়িতেই কর্মরত রয়েছেন। ফাঁড়ির ইনচার্জের সাথে
সখ্যতা তৈরি করে এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
খবর ২৪ ঘণ্টার অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশের নথি অনুযায়ী এসআই মাসুদ রানার নিজ জেলা সিলেট। এসএসসি পাশ করে ২০০০ সালের ২১ সেপ্টেমবর চাকুরীতে যোগদান করেন। বিপি নং-৮৬০০০০২৩৩৩। আরএমপিতে যোগদান করেন ২০১৩ সালের পহেলা জানুয়ারীতে। বর্তমান কর্মস্থল তালাইমারী পুলিশ ফাঁড়িতে ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারী। আরএমপিতে তিনি নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা, শিল্পনগর পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্ত এখন তিনি তার নিজ জেলা লালমনিরহাট বলে জানিয়েছেন। জেলার কালিগঞ্জ থানার তালবোনা গ্রামে তার বাড়ি বলে জানান। পুলিশে ভর্তির ঠিকানা একরকম ও নিজে বলেন অন্য জায়গায় এ নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। তাহলে তার আসল ঠিকানা কি? অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে মাসুদ রানা যেকোন ধরণের জালিয়াতির আশ্রয়ে চাকুরীতে যোগদান করেছেন?
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, তালাইমারী পুলিশ ফাঁড়িতে যোগদানের পর থেকেই তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেন। মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্থ। উদ্ধর্তন পুলিশ কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি কন্সটেবল জামিলের সহায়তায় এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি তিনি, ঢাকা মেট্রো-গ ১২-৯০৭৬ নম্বরের একটি প্রাইভেট কার কন্সটেবল জামিলের কাছ থেকে কিনে ফাঁড়িতে রেখেছেন। গাড়ীটি তিনি তার কাছ থেকে ৪ লাখ টাকায় কিনেছেন বলে দাবি করেন। সেই গাড়ীতেই মাদক সরবরাহ এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
খবর ২৪ ঘণ্টার পক্ষ থেকে তালাইমারী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মাসুদ রানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সত্য নয়। আমি প্রাইভেট কারটি কন্সটেবল জামিলের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকায় কিনেছি। প্রাইভেট কারটি এখন আমার। এসআই মাসুদ রানা নিজের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ থানায় বলে স্বীকার করেছেন। যার অডিও রেকর্ড খবর ২৪ ঘন্টার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্ত
চাকুরীর নথিতে তার বাড়ি সিলেট বলে উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়াও কিছুদিন আগে এসআই মাসুদ রানার বিরুদ্ধে নগরীর ভদ্রা জামালপুর এলাকা থেকে ২০০ গ্রাম গাঁজাসহ হবি নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে অর্থের বিনিময়ে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে সংশ্লিষ্ট ফাঁড়ির এক পুলিশ সদস্য অভিযোগ করে জানিয়েছিলেন, ২৭ নভেম্বর নগরীর ভদ্রা জামালপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে হবি নামের গাঁজা ব্যবসায়ীকে আটক করে তালাইমারী ফাঁড়ির এএসআই মুকুল ও কনষ্টবল জামিল। কিন্তু মামলা না দিয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ মাসুদ রানা ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে আসামীকে ছেড়ে দেয় এবং গাঁজা বিক্রি করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এদিকে, খবর ২৪ ঘণ্টার অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, পুলিশের নথি অনুযায়ী তালাইমারী পুলিশ ফাঁড়ির কন্সটেবল জামিল আহমেদ্দের বাড়ি ভোলা জেলায়। কং/৩৫৬। বিপি নং-৯০০৫১০১০৫২। দাখিল পাশ করে দাখিল পাশ করে ২০০৫ সালের ৪ এপ্রিল পুলিশে যোগদান করেন। ২০০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আরএমপিতে যোগদান করেন। ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিনি একই ফাঁড়িতে কর্মরত রয়েছেন। তার বাড়ি ভোলা জেলা হলেও তিনি আশেপাশের জেলায় বাড়ি বলে জানান। তার
বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা তৈরি ও চোরাই প্রাইভেট কার ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ঢাকা মেট্রো-গ ১২-৯০৭৬ নম্বরের একটি প্রাইভেট কার ব্যবহার করছেন। এটি তিনি কিনেছেন বলে প্রচার করলেও কার কাছে আর কত টাকায় কিনেছেন তা তিনি খবর ২৪ ঘণ্টাকে জানাতে পারেনি। বিআরটিএতে এই গাড়ী নম্বরের গাড়ীর মূল মালিক কে তা জানার জন্য চেষ্টা করা হয়। কিন্ত এই নম্বর সার্ভারে নেই। অথচ তিনি জানিয়েছেন, গাড়ীটি তিনি কিনে নিয়েছেন। যদি গাড়ী কেনেন তাহলে সেই গাড়ীর নম্বর সার্ভারে নেই কেন এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে? তাহলে গাড়ীটি কি চোরাই নাকি অন্য কারো। সূত্র বলছে, এই প্রাইভেট করে করে মাদক ব্যবসায়ীদের হয়ে মাদক বহন করা হয়। তদন্ত ও নজরদারি করলে এর সত্যতা বেরিয়ে আসতে আসবে।
শুধু প্রাইভেট কার নয় তিনি ঢাকা মেট্রো-হ ১৪-৭৩৫৩ নম্বরের একটি পালসার মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন। এটি তিনি কিনেছেন বলে প্রচার করলেও কার কাছে আর কত টাকায় কিনেছেন তা তিনি
খবর ২৪ ঘণ্টাকে জানাতে পারেননি। বিআরটিএতে এই গাড়ী নম্বরের গাড়ীর মূল মালিক কে তা জানার জন্য চেষ্টা করা হয়। বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী এই গাড়ীতে ব্যবহৃত নম্বরটি একটি হিরো হোন্ডা লাল মডেলের মোটরসাইকেলের নম্বর। অথচ তিনি এটি পালসার মোটরসাইকেলে ব্যবহার করছেন। হিরো মোটরসাইকেলের নম্বর পালসারে এটি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি নম্বরটি একটি কোম্পানীর নামে রেজিস্ট্রেশন করা।
খবর ২৪ ঘণ্টার পক্ষ থেকে তালাইমারী পুলিশ ফাঁড়ির কন্সটেবল জামিল আহম্মেদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই গাড়ীটি এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে কিনেছি। বড় ভাইয়ের নাম জানতে চাইলে বলেন, নেহান। নেহানের বাড়ি রাজশাহীতে চাকুরী করে। বিকাশে চাকুরী করে নেহান। দেড় বছর আগে গাড়ীটি কেনা হয়। গাড়ীটি পড়ে ছিল। এক লোকের মারফতে কিনে রাখছি। গাড়িটি কত টাকা দিয়ে কিনেছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ১০০ টাকা দিয়েও কিনতে পারি ১০ টাকা দিয়েও কিনতে পারি। এটাতো আপনাকে বলতে পারবোনা। গাড়ির কাগজ আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, গাড়ি কি আনলিগ্যাল তাই বলতে চাচ্ছেন। পরে তিনি বলেন, গাড়ীটি দেড় লাখ টাকায়
কিনেছি। পালসার মোটরসাইকেল কার থেকে কিনেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কি সমস্যা বলেনতো? দুই বছরে আগে কার কেনা হয় ও তখন মোটরসাইকেলটাও ছিল। পালসার গাড়ী কার কাছে কিনেছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আরে ভাই সমস্যাটা কি বুঝতে পারছিনা। নিউজ হবে বললে তিনি বলেন, আমার নিউজে কি এমন সমস্যা হয়ে গেল যে আমার নিউজ করতে হবে আপনাকে। আমার পেছনে লাগার মানেটা কি আপনার। আপনি সাংবাদিক মানুষ আমার পেছনে লাগবেন কেন? আমি কি অফিসার যে আমার পেছনে লেগেছেন? পালসার মোটরসাইকেলটি কার কাছ থেকে কিনেছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ভাই এগুলো আমার চুরির জিনিস না তাই আপনাকে আমি কিছু বলতে পারবোনা বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে নগরীর চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি সিরাজুম মনিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কন্সটেবল জামিলের চোরাই গাড়ী ব্যবহারের বিষয়টি জানিনা। আপনার জানার প্রয়োজন আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কে কি ব্যবহার করছে এটাতো আমার দেখার দায়িত্ব না। ব্যক্তিগত বিষয় আমার দেখার দায়িত্ব না। যদি সে কোন ক্রাইম বা ফৌজদারি অপরাধ করে তাহলে আমার দেখার দায়িত্ব।
তবে অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অধিনস্থ কেউ যদি অপরাধ করে তাহলে গোপন প্রতিবেদন দেয়া যেতে পারে। ডব্লিউ সি আর (উইকলি কনফেডেন্সিয়াল রিপোর্ট) এর মাধ্যমে সাপ্তাহিক গোপনীয় প্রতিবেদন দেওয়া যেতে পারে। অফিসার এ কথা বলতে পারবেনা। আমার কিছু করার নেই এমন কথা বলা যাবেনা। এমন রিপোর্ট দিলে তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে পারবে।
এম/আর