1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
তবুও সংসারের বোঝা তার কাঁধে! - খবর ২৪ ঘণ্টা
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৩:০৬ পূর্বাহ্ন

তবুও সংসারের বোঝা তার কাঁধে!

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১
ভ্যান ঠেলে বিশ্রাম করছেন নবীন

দুটি হাত প্রায় অচল, মাঝাও ভাঙ্গা। নিজেই ঠিক মতো হাঁটা চলা করতে পারেন না। ১০০ হাত রাস্তা যেতে হলে তাকে ৫০ হাত দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম করতে হয়। এতো প্রতিবন্ধীকতার মাঝেও তাকে ভ্যানে ফেরি করে আম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে ত্রাণ দেয়া হলেও এখনো তার ভাগ্যে জোটেনি কোনো সাহায্য। যার নিজেরই হাঁটা চলা করতে কষ্ট হয় আবার তিনিই ভ্যানে ফেরি করেন। ৫০ থেকে ৫৫ বছরের বয়ষ্করা বিশ্রামে থাকার চেষ্টা করেন অথবা এদের মধ্যে কিছু মানুষ দরিদ্র হলে নানা অজুহাতে ভিক্ষের ঝুলি ধরেন। হাত পাতেন অন্যের কাছে। কিন্ত রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালি থানার সুচারন গ্রামের মৃত হাবিলের ছেলে ৫৫ বছর বয়সি নবীনের ক্ষেত্রে একেবারেই উল্টো চিত্র দেখা গেছে। কারো কাছে হাত পাততে রাজি নন তিনি। যদিও

শারীরিকভাবে একেবারেই অক্ষম। অন্য মানুষের মতো কাজ করার ক্ষমতা নেই তার। তবুও মানুষের কাছে হাত না পেতে নিজেই কিছু করার চেষ্টা করছেন। যদিও তার কথায়, দেহে নিশ্বাস যতদিন আছে শত কষ্ট হলেও আয় করে জীবিকা নির্বাহ করে যাবেন। নিজের জমিজমা বলতে কিছু নেই নবীনের। তবুও যৌবনকালে কাজ করে জীবন চালাতে পারতেন। স্ত্রী ও মেয়ে নিয়ে সুখেই কাটতো জীবন। কিন্ত জীবনের ৫৫ বছরে এসে তা যেন এবার থমকে যেতে বসেছে। একটি দূর্ঘটনায় ওলট-পালট করে দিয়েছে তার জীবনের হিসেব। শরীরেও পাননা আগের মতো শক্তি। হাঁটলেও তার বুক ভরে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

সম্প্রতি নগরীর মতিহার থানাধীন কাপাসিয়া এলাকায় জীবন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া নবীনকে ভ্যানে ফেরি করে আম বিক্রি করতে দেখা যায়। কাছে গিয়ে কথা বলতেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তিনি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। পড়ালেখা করা ভাগ্যে জোটেনি। ছোট থেকেই রাজমিস্ত্রীর কাজে জড়িয়ে পড়েন। সেই থেকে দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। প্রায় ৮ বছর আগে তিনি উপর থেকে পড়ে যান। তারপর তার মাঝা ভেঙ্গে যায় ও হাতের রগ ছিঁড়ে গিয়ে প্রতিবন্ধী হয়ে যান। দুর্ঘটনার পর চিকিৎসা করাতে আগের জমানো টাকা-পয়সা শেষ হয়ে যায়। তারপর থেকে হাঁটতেও প্রচুর কষ্ট হয়। ঘরে স্ত্রী ও এক মেয়ে আছে। স্ত্রী, মেয়ে ও নিজের জন্য দুই বেলা দুই মুঠো ভাত জোগাড় করার জন্য ভ্যানে ফেরি শুরু করেন। অন্য কাজ করার ক্ষমতা তার নেই। তাকে কাজেও কেউ নেয়না। কারণ তিনি শারীরিকভাবে অক্ষম। এখন পরিচিত মানুষরাও তার সাথে অপরিচিত মানুষের মতো আচরণ করেন। ফেরত না পাওয়ার ভয়ে কেউ তাকে টাকা ধার দিতে চাননা। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা তাকে বোঝা মনে করেন।

তিনি আরো জানান, দুর্ঘটনার পর চিকিৎসায় জমানো টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর তিনি স্ত্রী ও মেয়ে নিয়ে দৈনতার মধ্যে জীবন কাটানা। কখনো খাবার জুটতো আবার কখনো না খেয়েই পার করে দিতে হতো। দু’একজন এগিয়ে এলেও অনেকেই দূরে ছিলেন। এরপর তিনি কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন। অনেক কষ্টে একটি পুরাতন ভ্যান কিনে সেখানে ফেরি করা শুরু করেন। কিন্ত এটাও তার জন্য সহজ ছিলনা। কারণ ৫০ হাত রাস্তা গিয়েই তাকে দাঁড়াতে হয়। নিজ বাড়ি হরিয়ানের সুচারন থেকে বিনোদপুর বাজারে আসতে তার ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লাগে। সকাল ৮ টা ৯টার দিকে বের হলে দুপুর হয়ে যায় পৌঁছাতে। আম বিক্রি করে বাড়িতে পৌঁছাতে তার রাত হয়ে যায়। কখনো কখনো অটোরিক্সা চালকরা তার ভ্যানটি রশির মাধ্যমে টেনে নিয়ে যায়। এভাবেই তিনি জীবন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন। মেয়ের দিকে তাকিয়ে তিনি শত কষ্ট সহ্য করে ভ্যানে ফেরি করেন।

করোনার মধ্যে কোনোকিছু সাহায্য পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে কখনো কিছু দেয়া হয়নি। কেউ সাহায্য করেনা। তার পাড়ার অনেকে পেলেও তিনি কখনো পাননি। হাঁটতেই কষ্ট হয় তাহলে ভ্যান ঠেলার মতো কষ্টের কাজ কেন করছেন প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এছাড়া কি আর করার সাধ্য আছে আমার? আমাকেতো কেউ কাজে নেয়না। আমিতো কাজও করতে পারবোনা। এটা না করলে ভিক্ষা করতে হবে। কিন্ত আমি সেটা পারবোনা। তিনি আরো বলেন, টাকার অভাবে দোকান দিতে পারিনি। সমাজের কোনো সামর্থ্যবান ব্যক্তি যদি আমাকে বাড়ির পাশে একটি দোকান দিয়ে দিতেন তাহলে হয়তো আমাকে আর কষ্ট করতে হতোনা। আমি ও আমার পরিবারের অনেক উপরকার হতো। স্থানীয় এক নারী বলেন, তার কষ্ট দেখলে নিজের কষ্ট লাগে। কিন্ত কি আর করার আছে।

এস/আর

পোস্টটি শেয়ার করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By Khobor24ghonta Team