ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলা বাতিলের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছে ১৯টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও প্রেস ফ্রিডম সংস্থা সংস্থা। পাশাপাশি সাংবাদিকসহ এই আইনের মামলায় আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে সংস্থাগুলো।
বুধবার (৩০ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো যৌথ ই-মেইল বার্তায় এ আহ্বান জানায় তারা।
আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) ওয়েবসাইটে বুধবার (৩০ আগস্ট) ১৯ সংস্থার এই চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে। সিপিজে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের অধিকার নিয়ে কাজ করে।
এতে বলা হয়, শান্তিপূর্ণভাবে মতপ্রকাশের কারণে যাঁদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে সেসব মামলা বাতিল করা। একই সঙ্গে মামলায় যাঁদের আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়া।
চিঠিতে সংস্থাগুলো বলেছে, সংবাদ প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কারও বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক আইনি পদক্ষেপ ভয় দেখানোর শামিল, যা একটি স্বাধীন গণমাধ্যমের কার্যক্রমকে রুদ্ধ করে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও চলাফেরার করার স্বাধীনতাসহ সাংবাদিকতা ও মানবাধিকার খর্ব করা হতো।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ বা যাঁদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে, তাঁদের কোনো ধরনের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের শিকার হওয়ার ভয় ছাড়াই গণমাধ্যমগুলোর স্বাধীনভাবে বাংলাদেশের সব জাতীয় ও স্থানীয় ঘটনার সংবাদ প্রকাশের ক্ষমতা থাকা উচিত। বিশেষত, দেশটির আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে সংগঠনগুলো। তবে এই আইনের বদলে করা সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে তারা।
চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দমনমূলক ধারাগুলো রয়েছে, যেগুলো আগে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, নাগরিক স্বাধীনতাসহ স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারকর্মীদের কণ্ঠরোধে ব্যবহার করা হয়েছিল।
চিঠিটি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ই–মেইলে।পাশাপাশি চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমদকে ।
এছাড়া চিঠিতে আরটিভির ঢাকা কার্যালয়ের নিজস্ব প্রতিবেদক অধরা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ২৯ এপ্রিল আরটিভিতে ঢাকার রাজারবাগ দরবার শরিফ ও এর নেতা শাকেরুল কবিরের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারের পর চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালে অধরা ইয়াসমিন ও তাঁর সোর্সের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রকাশিত সংবাদ ঘিরে অধরাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিলেন দরবার শরিফের সদস্যরা। একই সঙ্গে ওই সংবাদ প্রতিবেদনের জন্য সাক্ষাৎকার দেওয়া ডি আকরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে তদন্ত বাতিল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বার্তা পাঠানো সংস্থাগুলো হলো- অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আর্টিকেল নাইনটিন (দক্ষিণ এশিয়া), এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, বাংলাদেশি জার্নালিস্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, সিভিকাস: ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, কোয়ালিশন ফর উইমেন ইন জার্নালিজম (সিএফডব্লিউআইজে), কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস, ফোরাম ফর ফ্রিডম এক্সপ্রেশন, বাংলাদেশ; ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড, আইএফইএক্স; ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ), ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে), ইন্টারন্যাশনাল ওমেন‘স মিডিয়া ফাউন্ডেশন, পেন আমেরিকা, পেন বাংলাদেশ, পেন ইন্টারন্যাশনাল, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ও রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস।
বিএ/