খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় অজ্ঞাত রোগে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে একটি মৃতদেহে নিপাহ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। একই পরিবারের ওই সদস্যদের মারা যাওয়ার ঘটনায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) নয় সদস্যের একটি দল নিপাহ ভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছে।
আইইডিসিআরের অনুসন্ধানে এসেছে, মৃত ব্যক্তিদের সবার জ্বর, মাথাব্যথা, বমি ও মস্তিষ্কে ইনফেকশনের (এনসেফালাইটিস) উপসর্গ ছিল। মৃতদের মধ্যে একজনের নমুনা নেওয়া সম্ভব হয়। সে নমুনায় নিপাহ ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে। অন্যান্য জীবিত সন্দেহভাজন রোগীদের রক্তে অবশ্য নিপাহ ভাইরাস পাওয়া যায়নি।
তিন সপ্তাহ আগে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভান্ডারদহ মরিচপাড়া গ্রামের আবু তাহের (৫৫) হঠাৎ অসুস্থ হন। তাঁর মধ্যে জ্বর, মাথাব্যথা, গলা বসে যাওয়াসহ নানা লক্ষণ দেখা যায়। ৯ ফেব্রুয়ারি আবু তাহের মারা যান। একই উপসর্গ নিয়ে ১৫ দিনের ব্যবধানে তাঁর দুই ছেলে ইউসুফ আলী (৩০) ও মেহেদী হাসান (১৭), মেয়ে হোসনে আরা (৪৫) ও জামাতা হাবিবুর রহমান (৩৫) মারা যান।
আকস্মিক এই ঘটনায় ওই গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কোন রোগের কারণে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে চিকিৎসকেরা তাৎক্ষণিকভাবে তা নিরূপণ করতে পারেননি। ঘটনা অনুসন্ধান করতে রোগের ধরন, প্রকোপ ও প্রাদুর্ভাবের ওপর নজরদারি প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের একটি ‘আউটব্রেক ইনভেস্টিগেশন’ দল পাঠায়। পরে আরও চার সদস্যের আরেকটি দল মূল দলে যোগ দেয়। তদন্ত দলটি ১ মার্চ
পর্যন্ত বালিয়াডাঙ্গী এলাকা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মৃতদের ও মৃতের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। তদন্ত দল পরে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দেয়।
রোববার আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। বলা হয়, তদন্ত দল প্রথম ব্যক্তির খেজুরের কাঁচা রস পান করার সুনির্দিষ্ট ইতিহাস পায়নি। তবে প্রথমজনের মাধ্যমে বাকি চারজন মৃত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল বলে আইইডিসিআর ধারণা করছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে মৃত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে তাঁদের স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
খেজুরের কাঁচা রস পানে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর। এর পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, বাদুড় খেজুরের কাঁচা রসে মুখ দিয়ে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমিত করে। এরপর সেই খেজুরের কাঁচা রস পান করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে
আসার মাধ্যমে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পা হাত সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এ ছাড়া নিপাহ আক্রান্ত রোগীদের সেবায় স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের মাস্ক ও গ্লাভস পরতে হবে।
খবর২৪ঘণ্টা, এমকে