রাজধানীতে ট্রেনের ধাক্কায় পৃথক ঘটনায় ৩ দিনে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (৫ অক্টোবর) রাতে এ ৬ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা রেলওয়ে থানার (কমলাপুর) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল হক।
তিনি জানান, শনিবার, রোববার ও সোমবার এ মৃত্যুগুলো হয়েছে। এরমধ্যে নাখালপাড়ায় ট্রেনের ধাক্কায় ইসমাইল হোসেন (৪৫), সায়দাবাদে অজ্ঞাত (৬০) এক ব্যক্তি, কুড়িল বিশ্বরোডে নিরাপত্তা কর্মী জলিলুর রহমান (৩৮) খিলক্ষেতে এহসান চৌধুরী (৩৫) কুড়িল বিশ্বরোডে অপর ঘটনায় রিকশাচালক আব্দুল মালেক শিকদার (৪৫) ও তেজগাঁওয়ে অজ্ঞাত (২৮) আরেক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
নিহত ইসমাইলের মামা মো. আবেদ আলী জানান, ইসমাইলের বাড়ি নরসিংদি জেলায়। স্ত্রী শিউলি আক্তার ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে পূর্ব নাখালপাড়ায় থাকতেন তিনি।
সোমবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে কাজের কথা বলে বাসা থেকে বের হন ইসমাইল। এর কিছুক্ষণ পর তার দুর্ঘটনার খবর শুনতে পান পরিবার। পরে তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সোমবার সকালে সায়েদাবাদ করাতিটোলা এলাকার ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তার পরনে ছিল সাদা শার্ট ও চেক লুঙ্গি।
ঢাকা রেলওয়ে থানার (কমলাপুর) উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিয়াজ মাহমুদ জানান, সকালের সায়েদাবাদ করাতিটোলা এলাকায় নারায়ণগঞ্জগামী একটি ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু যায়। নিহতের নাম ঠিকানা জানা যায়নি। তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করেছে সিআইডি।
রোববার (৩ অক্টোবর) দিবাগত রাতে কুড়িল বিশ্বরোড রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারায় নিরাপত্তা কর্মীর জলিলুর রহমান (৩৮)।
তার বাড়ি বরগুনা বেতাগী উপজেলায়। বাবার নাম মৃত আব্দুর রশিদ। রামপুরা বনশ্রীতে একটি ফার্মেসির নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে চাকরি করতেন তিনি।
ঢাকা রেলওয়ে থানার বিমানবন্দর রেলস্টেশন পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সাকলাইন জানান, রোববার দিবাগত রাতে কমলাপুরগামী পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
অপরদিকে রোববার দিবাগত রাতে খিলক্ষেত রেলগেটে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় শারীরিক প্রতিবন্ধী এহসান চৌধুরীর (৩৫)। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টর এলাকায় থাকতেন তিনি।
নিহতের খালাতো ভাই মোহাম্মদ আলী জানান, খিলক্ষেত রেলগেট এলাকায় রেললাইনের পাশে বসে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল নিয়ে গেলে রোববার দিনগত রাতে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
শনিবার (২ অক্টোবর) সকালের দিকে কুড়িল বিশ্বরোডে ট্রেনের ধাক্কায় আব্দুল মালেক শিকদার নামে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়।
অপরদিকে রোববার দুপুর আড়াইটার সময় রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাত (২৮) এক যুবক নিহত হয়েছেন। তার নাম-পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ।
ঢাকা রেলওয়ে থানার (কমলাপুর) উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান জানান, তেজগাঁও রেলস্টেশনের ৩০০ গজ দক্ষিণে রেললাইন অতিক্রম করার সময় একটি ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের। তার নাম-পরিচয় শনাক্ত করার জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে। তার পরনে ছিল জিন্স প্যান্ট ও গেঞ্জি। ধারণা করা হচ্ছে তিনি ভবঘুরে।
একটি সূত্র জানান, ৬টি মরদেহ মধ্যে নিরাপত্তাকর্মীর জলিলুর রহমানের মরদেহ পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি চারটি মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে ঢামেক মর্গে। অপর একটি মরদেহের ময়নাতদন্ত মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) করা হবে।
জেএন