খবর২৪ঘণ্টা,আন্তর্জাতি ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে তাদের সম্পর্কের বিষয়ে চুপ থাকার জন্য অর্থ দেওয়া বিষয়টি বরাবরাই অস্বীকার করে আসছেন। ছবি: এএফপিপ্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর আইনজীবী মাইকেল কোহেনকে ‘মুখ বন্ধ’ রাখার অর্থ পরিশোধ করেছেন। ট্রাম্পের অন্যতম আইনজীবী রুডলফ জুলিয়ানি এই বোমা ফাটিয়েছেন। কোহেন ওই অর্থ দিয়েছিলেন পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে, যাতে ড্যানিয়েলস ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দৈহিক সম্পর্কের ব্যাপারে মুখ না খোলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বরাবরই এই অর্থ দেওয়া বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিলেন।
গতকাল বুধবার ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জুলিয়ানি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের আইনজীবী মাইকেল ডি কোহেন আইনি ফার্মের মাধ্যমে স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন।
ট্রাম্প শুরু থেকে বলে আসছেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। এমনকি তাঁর আইনজীবী ওই নারীকে টাকা দেওয়া অর্থ কীভাবে পেয়েছেন, তা-ও তিনি জানেন না। কোহেনও বলছেন, তিনি নিজের অর্থ থেকে ড্যানিয়েলসকে দিয়েছেন। কোহেন কেন তাঁর মক্কেলকে না জানিয়ে এত টাকা একজন পর্ন তারকাকে দিয়েছেন, তার কোনো ব্যাখ্যা অবশ্য তিনি দেননি। মার্কিন আইনে মক্কেলের সম্মতি ছাড়া তাঁর পক্ষে কোনো অর্থ প্রদান করা অপরাধ বলে বিবেচিত।
ফক্স নিউজের উপস্থাপক সিন হ্যানিটির এক প্রশ্নের জবাবে জুলিয়ানি বলেন, ট্রাম্প পরে কোহেনকে এ অর্থ পরিশোধ করেছেন, যা ‘পুরোপুরি বৈধ’। এই অর্থ নির্বাচনী প্রচারকাজের ছিল না। এর মাধ্যমে প্রচারকাজে অর্থ ব্যয়ের বিধি লঙ্ঘন করা হয়নি।
জুলিয়ানির এ বক্তব্যের বিষয়ে হোয়াইট হাউসের কাছে জানতে চাইলে উপপ্রেস সচিব হোগান গিডলে ফক্স নিউজকে বলেন, এটি একটি চলমান মামলা এবং প্রশ্নগুলো প্রেসিডেন্টের বাইরের আইনজীবীকে জিজ্ঞাসা করার পরামর্শ দেন।
পরে দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও জুলিয়ানি একই কথা বলেন। জার্নালের খবরে বলা হয়, তাঁর এই বক্তব্য ট্রাম্পের আগের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, তা জানতে চাইলে জুলিয়ানি বলেন, ‘এটা কোনো বিষয় নয়।’ কোহেন ড্যানিয়েলসকে যখন অর্থ দিয়েছিলেন ‘সম্ভবত তখন তিনি (ট্রাম্প) বিষয়টি জানতেন না’।
গত সোমবার নিউইয়র্কের এক ফেডারেল আদালতে ড্যানিয়েলস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এটি ড্যানিয়েলসের দ্বিতীয় মামলা।
ড্যানিয়েলসের দাবি অনুযায়ী, প্রায় এক দশক আগে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দৈহিক সম্পর্ক ছিল। ২০১৬ সালের নির্বাচনের দেড় সপ্তাহ আগে এ বিষয়ে কোনো কথা না বলার জন্য কোহেন ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার স্টর্মিকে ঘুষ দেন। শুধু তা-ই নয়, এই অর্থ গ্রহণের বদলে ড্যানিয়েলস ট্রাম্পের সঙ্গে একটি অপ্রকাশযোগ্য বা নন-ডিসক্লোজার চুক্তিতে সই করেন।
মাইকেল কোহেন ল ফার্মট্রাম্পের দীর্ঘদিনের আইনজীবী মাইকেল কোহেন ল ফার্মের মাধ্যমে স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে অর্থ দিয়েছেন। চুক্তি অনুসারে, দুজনের সম্পর্ক নিয়ে কোনো কথা বলতে পারবেন না তিনি। যদি বলেন, তাহলে যখন ও যতবার মুখ খুলবেন, তাঁকে ততবার এক মিলিয়ন ডলার করে জরিমানা দিতে হবে।
চুক্তিতে অবশ্য ড্যানিয়েলস অথবা ট্রাম্প কেউই নিজের নাম ব্যবহার করেননি। ড্যানিয়েলসের নাম রাখা হয়েছিল পেগি প্যাটারসন, আর ট্রাম্পের নাম ছিল ডেনিস ডেনিসন। চুক্তিপত্রে পেগি প্যাটারসনের স্বাক্ষর থাকলেও ডেনিস ডেনিসন, অর্থাৎ ট্রাম্পের কোনো স্বাক্ষর ছিল না। সম্ভবত ভবিষ্যতে বিপদে পড়লে যাতে অস্বীকার করতে পারেন, সে জন্যই ট্রাম্প নিজের নামের নিচে কোনো স্বাক্ষর করেননি, এই অভিমত নিরপেক্ষ আইনজীবীদের।
জানুয়ারিতে ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে এই নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার পর বেঁকে বসেন ড্যানিয়েলস। তাঁর দাবি, অর্থ আদান-প্রদানের কথা ফাঁস করে দিয়ে ট্রাম্পের আইনজীবী তাঁদের মধ্যকার চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। অতএব এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলাতে তাঁর, অর্থাৎ ড্যানিয়েলসের এখন আর কোনো বাধা নেই। তিনি এখানে-সেখানে সাক্ষাৎকার দেওয়া শুরু করেন।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ