বিশেষ প্রতিনিধি :
উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র রাজশাহী মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মধ্যে কিছু চিকিৎসক টেস্ট বাণিজ্যে জড়িয়ে
পড়েছেন। আর এতে করে গেট পাস ছাড়া রোগীর স্বজনরা ভেতরে প্রবেশ করতে না
পারলেও বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা অনায়াসে প্রবেশ
করছেন। তবে পাস ছাড়া রোগীর স্বজনরা কখনোই প্রবেশ করতে পারে না। জরুরীভাবে
প্রবেশ করতে গেলেও গেটে থাকা আনসার সদস্যদের বাধার মুখে পড়তে হয়। কিন্ত
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাথে সখ্যতা থাকার কারণে বাইরের বেসরকারী ক্লিনিক ও
ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা অনায়াসে প্রবেশ করছে। এ নিয়ে রোগীদের
মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কিšুÍ কিছু ইন্টার্ন চিকিৎসকের মারমুখী
ভূমিকার কারণে রোগী বা রোগীর স্বজনরা প্রতিবাদ করতে পারেন না। আর এ নিয়ে
রোগীদের পক্ষ থেকে যেন অভিযোগের শেষ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাইরে থেকে যেসব রোগী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন তারা ভর্তি হওয়ার পর ওয়ার্ডে যান। ওয়ার্ডে
যাওয়ার পর কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাদের দেখে প্রয়োজন হলে কিছু
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে দেন। পরীক্ষা করাতে দেওয়ার পর সেই চিরকুটে নিজের
স্বাক্ষর করে বাইরের পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা মেডিপ্যাথের নাম লিখে
দেন। এরপর লিখেন প্লিজ লেস ২০% বা ৩০%। কিন্ত প্রকৃতপক্ষে রোগীর স্বজনদের
পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে, ইন্টার্ন চিকিৎসকের সেই স্বাক্ষরের কারণে
পরীক্ষা ফি কম নেয়া হয়না। বরং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারের থেকে
তুলনামূলক বেশি নেয়া হয়। রোগীর স্বজনদের আরো অভিযোগ, যে চিকিৎসক ছাড়ের
জন্য লিখে দেন সেটি মূলত ছাড় নয় তা তার রোগী বা তার রেফারেন্সে সেখানে
গেল তার চিহ্ন।
শুধু ভর্তি হওয়ার সময় নয় ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীদের টেস্টের প্রয়োজন হলে
কিছু ইন্টার্ন চিকিৎসক টেস্টের নাম লিখে তার সাথে সখ্যতা থাকা
ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম লিখে দেন। কেউ যদি এসব ইন্টার্ন চিকিৎসকের
লিখে দেয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে না চায় তাহলে তার সাথে চড়াও হয়ে কথা
বলা হয়। আর কোন রোগীর অবস্থা অপেক্ষাকৃত একটু খারাপ হলেই সরাসরি তাদের
সাথে সখ্যতা থাকা পপুলার, মেডিপ্যাথ বা অন্যা যেকোন বেসরকারী ডায়াগনস্টিক
সেন্টারের লোক ডেকে নেন স্যাম্পল সংগ্রহের জন্য। যদি কোন রোগী বাইরে নিয়ে
গিয়ে করাতে চান তাহলে প্রয়োজন নেই বলেই সংশ্লিষ্ট ইন্টার্ন চিকিৎসক বা
কোন কোন সময় নার্সরাই বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোককে হাসপাতালের
ওয়ার্ডে ডেকে নেন। অথচ কম খরচেই হাসপাতালের মধ্যে বিভিন্ন
পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। কম টাকাতেই সেই পরীক্ষা করা যায়।
তারপরও শুধু পার্সেন্ট নেয়ার জন্য তারা রোগীদের বাইরের ডায়াগনস্টিক
সেন্টারে পাঠায়। চিকিৎসকদের বলে দেয়া নির্ধারিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে না
গেলে রিপোর্ট দেখা হবে সেই ভয়ে রোগীর স্বজন বা রোগী নিজেও বাধ্য হয়ে
পরীক্ষা করান। তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন,
পার্সেন্ট নেয়ার জন্য নয়। উন্নতমানের ডায়াগনস্টিক হওয়ায় সেগুলোতে টেস্ট
করার জন্য বলা হয়। এভাবে রোগীকে টেস্ট করতে পাঠানো কতটা যৌক্তিক এমন
প্রশ্নের জবাব অবশ্য এড়িয়ে যান সেই ইন্টার্ন চিকিৎসক।
এদিকে, নাম না প্রকাশ করার শর্তে গত শুক্রবার তার স্বজনকে হাসপাতালের
হৃদরোগ বিভাগে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়া একব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন,
শুক্রবার রাতে আমি আমার স্বজনকে দেখতে যায়। অনেক সময় সেখানে ছিলাম। আমার
রোগীর রক্তসহ অন্য একটি পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়। এ সময় ওই ওয়ার্ডে
কর্তব্যরত এক ইন্টার্ন চিকিৎসক রোগীকে পরীক্ষা লিখে দেন। আমরা রোগীকে
নিয়ে বাইরে গিয়ে আমার পরিচিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করাতে চাইলে
কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্স বলেন, বাইরে যাওয়া লাগবেনা। এখানেই পপুলালের
লোককে নমুনা সংগ্রহের জন্য ডাকা হবে। যেই কথা সেই কাজ তিনি কল দেয়ার কয়েক
মিনিটের মধ্যে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক লোক এসে নমুনা সংগ্রহ
করেন। এতে অন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারের থেকে বেশি টাকাও লাগে। তারা যে
ওয়ার্ডে এসেছে সেও ফি ধরে নেয়। অথচ আমরা তাদের ডাকিনি।আরও
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, শুধু আমার রোগী নয়। আরো যেসব রোগী চিকিৎসাধীন
রয়েছে তাদের প্রত্যেককেই একইভাবে নিজেদের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে
পাঠান কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
শুধু ওই ওয়ার্ডই নয় অন্যান্য ওয়ার্ডের কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের
মধ্যে কিছু কিছু ইন্টার্ন চিকিৎসক নিজেদের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে
পরীক্ষা করার জন্য পাঠান। এ বিষয়ে কথা বলতে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার
রাজশাহীর ব্যবস্থাপকের সাথে যোগোযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা
রোগীদের বাইরের কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করানোর জন্য যেতে বলতে
পারেন না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
এস/