খবর২৪ ঘণ্টা , স্পোর্টস ডেস্ক: আরও একটি রোমাঞ্চকর জয়। আরও একটি থিসারা পেরেরাময় জয়। নাকি মাশরাফিময়? শেষ ওভারে ১৪ রানের প্রয়োজন ছিল রংপুর রাইডার্সের। তাতে প্রথম দুই বলেই পেরেরা তুললেন ৮ রান। দ্বিতীয় বলে দারুণ এক ছক্কা। শেষ চার বলে দরকার ৬ রান। তখনই প্রবল নাটকীয়তার শুরু। পরিস্থিতি তাতে শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে ওঠে। সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রান আউট নাহিদুল ইসলাম। পরের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট শাহরিয়ার নাফীসও। তবে স্ট্রাইকিংয়ে চলে গেছেন লঙ্কান পেরেরা। ম্যাচ তবু অনেকটা হেলে পড়ে চিটাগং ভাইকিংসের দিকে। এরপরও ২ রান নিয়ে আশা ধরে রাখেন। আর একটি শট! শেষ বলে দরকার ৪ রান। এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ সময়ে ওয়াইড দিয়ে বসেন তাসকিন। থিসারা স্কুপ করতে গিয়ে বল মিস করে পড়েই গেলেন ক্রিজে। বলটা লাইনে থাকলে কি হতো কে জানে! কিন্তু ম্যাচের শেষ বলটাকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলেন পেরেরা। ছক্কা! তাতে ৩ উইকেটের জয় তুলে প্রতিশোধটা ভালোভাবেই নিয়ে নিল রংপুর।
.
এবারের আসরের সবচেয়ে দুর্বল দল চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে সিলেটে প্রথম দেখায় হেরে গিয়েছিল রংপুর। ১৬৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১১ রান দূরে থেমেছিল দলটি। সেই হারের ধাক্কা কাটাতে আরও দুই ম্যাচ পরাজয়ের তিলক জুটেছিল কপালে। এরপর তো এখন শেষ চারে ওঠার লড়াইটাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ম্যাচটি ছিল রংপুরের প্রতিশোধের মিশন। সাথে টুর্নামেন্টে টিকে থাকার লড়াইও। আর এমন ম্যাচে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তিন নম্বরে নেমে রীতিমত আগুন ঝরিয়েছেন ব্যাটে। পরে মোহাম্মদ মিঠুনের দায়িত্বশীল ব্যাটিং। ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় অধিনায়ক খেলেছেন ৪২ রানের ইনিংস। তাও মাত্র ১৭ বলে। ম্যাচের লাগাম তো মাশরাফিই এনে দিয়েছিলেন দলের হাতে। শেষে সেটাই কঠিন করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৮০ রান করে জয় তার দলের।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুই দলই বড় অস্বস্তি নিয়ে মাঠে নেমেছিল। জয় চাই-ই চাই শেষ চারের লড়াইয়ে টিকে থাকতে। হারলেই ছিটকে পড়া, এখনো সেই অবস্থা পুরোপুরি না। তবে কাছাকাছি ব্যাপার। আগের দিন সিকান্দার রাজার রাজকীয় ইনিংসে ঘরের মাঠে জয়ে ফিরেছে চিটাগং। এবারের বিপিএল সর্বোচ্চ ২১১ তুলেছিল ৫ উইকেটে। সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে ৪০ রানের প্রবল দাপুটে জয়।
এদিনও ঘরের সমর্থকদের সামনে প্রতিপক্ষকে লড়াকু লক্ষ্যই দিলো দলটি। ১৭৯ রানের। সে লক্ষ্য তাড়ায় উইকেটে ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের বিধ্বংসী দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু শুরু থেকেই অনুপস্থিত তাদের আগ্রাসন। প্রথম ছয় ওভারে রান মাত্র ৩৭। তার উপর পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আউট ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ফলে চাপটা ভালো ভাবেই পেয়ে বসে রংপুরকে। তাই রানের গতি বাড়াতে উইকেটে আসেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। অবাক সিদ্ধান্ত বটে। তবে আগুন ব্যাটিংয়ে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়ে দলের রানের চাকা দ্রুত ছুটিয়ে গেছেন অধিনায়ক।
উইকেটে এসেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু মাশরাফির। আল-আমিনের উইকেট নেওয়া ওভারেই চার মেরে যাত্রা। পরের ওভারে সৌম্য সরকারকে মারেন টানা দুটি বাউন্ডারি। আল-আমিনের করা পরের ওভারেও একটি চার ও আরেকটি বিশাল ছক্কা। গ্যালারির দ্বিতীয় তলায় বল ফেলে উল্লাসে মাতান চিটাগংয়ের দর্শকদের! নিজ দলের কথা ভুলে তখন বুঝি মাশরাফির ব্যাটিংই উপভোগ করতে থাকেন তারা! পরের ওভারে ভ্যান জিলকেও ১টি ছক্কা হাঁকালেন মাশরাফি। তার সঙ্গে এই আক্রমণে যোগ দেন ক্যারিবিয়ান তাণ্ডব ক্রিস গেইলও। ফলে দ্রুতই বাড়তে থাকে রংপুরের সংগ্রহ। পরের ওভারে সানজামুল ইসলামকেও ছক্কা মারেন। আরও একটি ছক্কা মারতে গিয়ে মিস করেন মাশরাফি। বোল্ড হয়েই ফিরতে হয় তাকে। ততক্ষণে গেইলের সঙ্গে গড়ে ফেলেছেন ৬০ রানের জুটি। ৯.৪ ওভারে ২ উইকেটে ৯১ রান রংপুরের। সব তাদের পক্ষে।
কিন্তু মাশরাফির বিদায়ের পরের ওভারে ফিরে যান গেইলও। আবারো চাপে রংপুর। রবি বোপারাকে নিয়ে সে চাপ সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেন মিঠুন। গড়েন ৩২ রানের জুটি। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানের মালিক বোপারা অবশ্য বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। আউট হয়েছেন ১১ রানে। এরপর থিসারা পেরেরাকে নিয়ে ৩৪ রানের জুটি গড়েন মিঠুন। ২৯ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন মিঠুন। তারপর তো খুব প্রয়োজনের সময় হতাশা উপহার দিয়ে দলকে প্রায় হারের মুখে রেখে গিয়েছিলেন নাহিদুল ইসলাম ও শাহরিয়ার নাফীস। তবে পেরেরার ১৪ বলে ৩ ছক্কার অপরাজিত ২৮ রানে রোমাঞ্চকর জয় রংপুরের। ম্যাচের শেষটা পেরেরার হলেও ব্যাটের যে আগুনে মাশরাফি জয়ের পথ দেখিয়েছেন তাতেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ তিনি।
জেতার মতো সংগ্রহই দিয়েছিলেন ভ্যান জিল
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নামে চিটাগং। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৮ রান করে দলটি। স্টিয়ান ভ্যান জিলের দুর্দান্ত ফিফটিতে জেতার মতো সংগ্রহই দাঁড় করিয়েছিল তারা। এদিনও ধারাবাহিক ব্যর্থতার ফাঁদে বাংলাদেশের দুই তারকা সৌম্য সরকার ও এনামুল হক বিজয়। এবার অবশ্য ৩০টি রান করতে পেরেছেন সৌম্য। কিন্তু সেটি বড় হতে দেননি নাহিদুল ইসলাম। তারে আগেই রংপুরের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ৭৮ রান করা এই ম্যাচের অধিনায়ক লুক রনকি ১১-তে রান আউট। পরে বিজয় ৭ রান করে মাশরাফির শিকার।
৫৬ রানে ৩ উইকেট পড়ার পরও অনেক বড় কিছু করার মতো ব্যাটসম্যান চিটাগংয়ের ছিল। ৭৬ রানের জুটি গড়ে ওঠে দক্ষিণ দুই আফ্রিকান স্টিয়ান ভ্যান জিল ও সিকান্দার রাজার মধ্যে। তবে আগের রাতের মতো মারমার কাটকাট ব্যাটিং এবার হলো না জিম্বাবুয়ের সিকান্দারের। অন্যপ্রান্তে ছুটছিলেন ভ্যান জিল। রুবেল হোসেন শিকার করলেন সিকান্দার রাজাকে (২২)। এরপর ১৬ বলে ২৫ রানের ইনিংস আফগান নাজিবুল্লাহ জাদরানের।
কিন্তু প্রায় ৯ এর কাছে রান রেটটা নিয়ে চিটাগংয়ের ইনিংসটা শেষ করানোর মূল কৃতিত্বটা দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যান জিলের। ১৯তম ওভারে থিসারা পেরেরা তাকে থামিয়েছেন। তবে ততক্ষণে ১৭০.০০ স্ট্রাইক রেটে ৪০ বলে ৬৮ রান ভ্যান জিলের। মেরে এসেছেন ৪টি ছক্কা ও ৩টি চারের মার। রংপুরের দারুণ বোলিংও পারেনি সেভাবে তাকে সামলাতে। শেষে পারলেও ততক্ষণে তো স্কোরটা বড়ই হয়ে গেছে হোমটিমের।
হ্যাঁ, জেতার মতো স্কোরই ছিল বটে। কিন্তু পেন্ডুলামের মতো এদিক-ওদিক হতে থাকা ম্যাচের ফল নাটকীয় ভাবে এসেছে ম্যাচের শেষ বলে। জয়ে ফিরে স্বাগতিক সমর্থকদের সামনে তাই উৎসব মাশরাফিদের রংপুরের।
খবর২৪ ঘন্টা/নই